নয়াদিল্লি: সব কিছুর জন্য কৃষকদের দায়ী করা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ রাজধানীর দূষণ নিয়ে আগের মামলার শুনানিতে দিল্লি সরকারকে রীতিমত ভর্ৎসনা করেছিল সুপ্রিম কোর্ট৷ আজ সোমবার ওই মামলার শুনানি শুরু হতেই ফের সর্বোচ্চ আদালতের কাছে ধমক খেল কেজরিওয়াল সরকার৷ আদালত জানায়, ‘বাজে অজুহাত মেনে নেব না৷ এর পর আমরাই বাধ্য হব আপনাদের রাজস্ব আদায়ের উপর অডিটের নির্দেশ দেওয়ার৷ তখনই জানা যাবে জণগণের টাকা কোন কোন খাতে খরচ হয়৷’
প্রতি বছর দিওয়ালির পরই দূষণে মুখ ঢাকে দিল্লি৷ এজন্য পঞ্জাব-হরিয়ানার কৃষকদের ফসলের অবশিষ্টাংশ পোড়ানোকে দায়ী করা হয়৷ কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, দিল্লির ভয়ঙ্কর বায়ু দূষণের জন্য দায়ী গাড়ি এবং কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া৷ যার জেরে দিল্লি এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স পৌঁছে গিয়েছে ৫০০-র ঘরে৷ সাধারণত এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স ৪০০ পেরিয়ে গেলেই তা স্বাস্থ্যের পক্ষে গুরুতর বলে ধরা হয়৷ তাই অবিলম্বে দিল্লির দূষণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারকে নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট৷ জানায়, কী কী ব্যবস্থা নিলে দূষণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে তা সোমবারের মধ্যে কেন্দ্র এবং দিল্লি সরকারকে হলফনামা জমা দিয়ে জানাতে হবে৷
আরও পড়ুন: দূষণ নিয়ন্ত্রণে লকডাউনে রাজি, সুপ্রিম কোর্টকে জানাল কেজরিওয়াল সরকার
কিন্তু এদিন দিল্লি সরকারের হলফনামা দেখে সুপ্রিম কোর্ট ফের বিরক্তি প্রকাশ করে৷ জানায়, দূষণের জন্য কৃষকদের ঘাড়ে দোষ চাপানো হয়েছে৷ কীভাবে তাঁদের ফসল পোড়ানোর জন্য দিল্লিতে দূষণের মাত্রা বাড়ছে সে সব বলা হয়েছে৷ আর দূষণ নিয়ন্ত্রণে রাখার দায় পুর কমিশনারের উপর চাপানো হয়েছে৷ এ ধরনের বাজে অজুহাত আদালত মেনে নেবে না৷ আদালতই বাধ্য হবে রাজস্ব আদায়ের উপর অডিটের নির্দেশ দিত৷ তখনই জানা যাবে অডিটের টাকা কোন কোন খাতে খরচ করা হয়৷ দিল্লি সরকারকে ভর্ৎসনা করে প্রধান বিচারপতি এন ভি রামানা বলেন, আমরা চাই দূষণ কমে আসুক৷ কিন্তু প্রতিটা পদক্ষেপ বলে দেওয়ার জন্য আমরা এখানে বসে নেই৷ ট্র্যাফিক এবং শিল্প থেকে যে দূষণ তৈরি হচ্ছে তা কীভাবে সামাল দেবেন সেটা দেখা আপনাদের কাজ৷
তবে আদালতের কাছে হলফনামায় দিল্লি সরকার জানিয়েছে, তারা কঠোর লকডাউনের পথে হাঁটতে রাজি৷ কিন্তু এটা তখনই কার্যকর হবে যদি দিল্লি সংলগ্ন এলাকা এবং পড়শি রাজ্যেও লকডাউন ঘোষণা করা হয়৷ নইলে দূষণ নিয়ন্ত্রণে এই পদক্ষেপ তেমন কার্যকরী হবে না৷ বলে রাখা ভালো, এর আগের শুনানিতে লকডাউনের মত পদক্ষেপ গ্রহণ করা কথা দিল্লি সরকারকে বিবেচনা করতে বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট৷ সর্বোচ্চ আদালতের সেই প্রস্তাব মেনে নিতে সম্মত হয়েছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল৷
আরও পড়ুন জেএনইউ-তে ফের এবিভিপি-এসএফআই সংঘর্ষ, আহত দু’পক্ষের পড়ুয়ারা
অপরদিকে রাজধানীর দূষণ নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্র তিনটি পদক্ষেপের কথা জানায়৷ হলফনামায় জানানো হয়, কৃষকদের নাড়া পোড়ানো দিল্লি দূষণের প্রধান কারণ নয়৷ কেন্দ্রের তরফে সলিসিটর জেনারেল সুপ্রিম কোর্টকে জানান, দিল্লির দূষণের মাত্র ১০ শতাংশ ঘটে কৃষকদের ফসল পোড়ানো থেকে৷ তবে রাজধানীর দূষণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কড়া লকডাউন, জোড়-বিজোড় সংখ্যায় গাড়ি চালানো এবং ট্রাক প্রবেশ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করার মত প্রস্তাব দেন তিনি৷ কেন্দ্র মনে করে এই তিনটি ব্যবস্থা নেওয়া হলে দূষণের মাত্রা অনেকটাই কমিয়ে আনা যেতে পারে৷
তখন সুপ্রিম কোর্ট জানায়, তাহলে আগামিকাল সন্ধ্যার মধ্যে আপনারা হলফনামা দিয়ে জানান কোন কোন শিল্প বা পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিলে দূষণ কমে আসবে৷ এবং এর বিকল্প ব্যবস্থা কী হতে পারে সেটাও জানাতে হবে৷