আগরতলা: ত্রিপুরায় হিংসা ছড়ানোর অভিযোগে ১০২ সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইনে মামলা করেছে বিপ্লব দেব সরকার। সরকারের এই পদক্ষেপের কড়া নিন্দা করল ত্রিপুরা সিপিএম। দলের তরফে দাবি তোলা হয়েছে, সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে যুক্ত সমাজবিরোধীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে জন্য যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
রাজ্য সরকারের এই ভূমিকা চরম অসহিষ্ণুতামূলক, ব্যক্তি স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ এবং সংবিধান বিরোধী, এমনটাই মত সিপিএমের। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর তরফে একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কোনও ব্যক্তি বা সংগঠনের ভূমিকা যদি সংবিধান বিরোধী হয়ে থাকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে প্রচলিত আইনেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যেত। কিন্তু সরকার সেটা না করে একতরফা পদক্ষেপ গ্রহণ করল।’
আরও পড়ুন: ত্রিপুরায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের হুঙ্কার যাত্রা ঘিরে রণক্ষেত্র, ধর্মস্থানে ভাঙচুর
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘রাজ্য প্রশাসন প্রথম থেকেই সতর্ক হলে পানিসাগর, বিশালগড়, উদয়পুর, কুমারঘাট, কৈলাশহর এবং সদরে যে দুঃখজনক ঘটনাগুলি ঘটেছে তা এড়ানো যেত।…সিপিআই (এম) দাবি জানাচ্ছে মিশ্র বসতি এলাকাগুলিতে প্রশাসনের উদ্যোগে নাগরিকদের নিয়ে শান্তি কমিটি গঠন ও শান্তিসভা সংগঠিত করার জন্য এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সমূহকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য।’
ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামের অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে অভিযোগ ত্রিপুরা পুলিশের
সাম্প্রতিক হিংসার বিষয়ে বিদ্বেষমূলক, ভুল তথ্য পরিবেশনের অভিযোগে ১০২টি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে ইউএপিএ-তে (বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন) মামলা করেছে ত্রিপুরা পুলিশ৷ তার মধ্যে ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে৷ ইতিমধ্যেই অ্যাকাউন্ট বন্ধের নোটিস দেওয়া হয়েছে৷ সুপ্রিম কোর্টের চার আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: হিংসা ছড়ানোর অভিযোগে ত্রিপুরায় ১০২ সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে মামলা
ত্রিপুরা পুলিশ জানিয়েছে, এই সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট গুলির আইপি অ্যাড্রেস, মোবাইল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বর ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে৷ ত্রিপুরা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা একটি সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমকে জানান, আইনজীবীদের সাংবাদিক বৈঠকের বিষয়ের সঙ্গে হিংসার ঘটনা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমগুলিরও সম্পর্ক রয়েছে৷
102 cases were filed under #UAPA against people on fact finding mission and those speaking out against communal violence in Tripura. The list includes prominent lawyers, social workers and journalists.
CPIM condemns these draconian actions of the #Tripura State Govt. pic.twitter.com/R6Cq7KgEwx— CPI (M) (@cpimspeak) November 7, 2021
সিপিএম নেতা পবিত্র কর বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় সাম্প্রদায়িক উষ্কানিমূলক পোস্ট করা বা শেয়ার করা উচিত নয়৷ যা শান্তি বিঘ্নিত করে৷ কিন্তু, এখানে মনে হচ্ছে পুলিশের সমালোচনা করায় কিছু অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়া হল৷’ ত্রিপুরা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বিরাজিৎ সিনহার বক্তব্য, আইনজীবীরা এখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে আসেননি৷ আইনের অপব্যবহার ঠিক নয়।
আরও পড়ুন: রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্যই ত্রিপুরায় অশান্তি, অভিযোগ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী দলের
রাজ্যে বিজেপির মুখপাত্র নবেন্দু ভট্টাচার্য পাল্টা যুক্তি দেন, ‘পুলিশি পদক্ষেপ মত প্রকাশ, বাক-স্বাধীনতার বিরুদ্ধে নয়৷ পুলিশ সত্য উদঘাটনে তদন্ত করছে। গণতন্ত্রে মত প্রকাশ, বাক-স্বাধীনতার কথা বলা হলেও তারও কিছু বিধিনিষেধ আছে৷’
দিন কয়েক আগে বিজেপি শাসিত ত্রিপুরায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মিছিল ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায়। উত্তর ত্রিপুরার পানিসাগর মহকুমায় একটি ধর্মীয় স্থান এবং কয়েকটি দোকানে ভাঙচুর চালানো হয় বলে অভিযোগ। দুটি দোকানে আগুনও ধরিয়ে দেওয়া হয়। এই অশান্তির ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করে হাই কোর্ট। ১০ নভেম্বরের মধ্যে রাজ্য সরকারকে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশও দেয় আদালত।
আরও পড়ুন: ত্রিপুরায় ধারাবাহিক হামলা-হিংসা, আইন-শৃঙ্খলা ফেরাতে রাজ্যপালকে চিঠি তৃণমূল সাংসদ সুস্মিতা দেবের
প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক হিংসার প্রেক্ষিতে ত্রিপুরার ৫১টি জায়গায় প্রতিবাদ সংগঠিত হয়। বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে কয়েক জায়গায় হিংসা শুরু হয়ে যায়। বেশ কয়েকটি দোকানে ভাঙচুর ছাড়াও অনেক সম্পত্তি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনার প্রেক্ষিতেই মামলা দায়ের করে আগরতলা হাই কোর্ট। হাই কোর্ট বলেছে, হলফনামায় পুলিশি তদন্তের রিপোর্ট, কাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হয়েছে তাও স্পষ্টভাবে জানাতে হবে।