তমলুক : ৫১ পীঠের এক পীঠ তমলুকের বর্গভীমা মন্দিরে সকাল থেকে চলছে কালীপুজো। রয়েছে ভক্তদের ভিড়। তাম্রলিপ্ত শহরেই বিরাজ করেন বর্গভীমা। একান্নটি সতীপীঠের এই পীঠে সতীর বাম গোড়ালি পড়েছিল। দেবী এখানে ভীমরুপা ‘কপালিনী’ ও তার ভৈরব হলেন সর্বানন্দ। কথিত আছে মহাভারতের সময় ময়ূরবংশীয় রাজা তাম্রধ্বজের রাজত্বকালে রাজার নির্দেশ অনুযায়ী এক জেলেনি রোজ জ্যান্ত শোল মাছ নিয়ে যেতেন রাজবাড়িতে। একদিন রাজপ্রাসাদে যাওয়ার সময় তিনি লক্ষ্য করেন সবকটি মাছ মরে গেছে, পাশেই ছিল একটা জলাশয়, সেই জলাশয়ের জল মাছের উপর ছিটিয়ে দিতেই মাছগুলো আবার বেঁচে উঠেছিল। এই অলৌকিক ঘটনার কথা রাজা জানতে পারেন। এরপর রাজা সেই জলাশয়ের পাশে বেদির উপর একটি বিগ্রহ দেখতে পেয়েছিলেন। রাজা বুঝতে পারেন এই দেবী জাগ্রতা এবং এই জলাশয়ের জলের দৈবগুণ আছে। তখন রাজা তাম্রধ্বজ এই পবিত্র জলাশয়ের পাশে দেবীর মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা আজ মা বর্গভীমার মন্দির নামে পরিচিত। আজও এই মন্দিরে কালীপুজোতে ঠাকুরকে শোল মাছ দেওয়া হয়।
এই মন্দির স্থাপন নিয়ে আরও একটি কাহিনি কথিত আছে, শোনা যায়, ধনপতি সওদাগর এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই মন্দির প্রতিষ্ঠার কাহিনি থেকেই আমারা আন্দাজ করতে পারি এই মন্দিরের প্রাচীনত্ব। মা বর্গভীমা তমলুকের এই মাতৃমন্দিরে এক হাজার বছরের বেশি সময় ধরে বিরাজ করছেন। মায়ের রূপ নিয়ে মতবিরোধ দেখা যায়। কেউ বলেন কালী, কেউ বলেন উগ্রতারা, কেউ আবার বলেন মা ভীমাদেবী। হাজার বছরের বেশী সময় ধরে মা দুর্গা, মা কালী, মা জগদ্ধাত্রী রূপে পুজো করে আসছেন ভক্তরা। পণ্ডিতেরা বলে থাকেন দেবী ভক্তদের ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ দান করেন তাই দেবী বর্গভীমা নামেই পরিচিত। নাটমন্দির, যজ্ঞ মন্দির, জগমোহন ও মূল মন্দির রয়েছে এখানে। মূলমন্দিরের গর্ভগৃহে কষ্টিপাথরে নির্মিত হয়েছে দেবীর মূর্তি।
আরও পড়ুন : স্বাস্থবিধি মানুন, বাজি ফাটাবেন না, রাতের শহরে বার্তা ‘মা কালী’র
কালীপুজোর দিন পূর্ব মেদিনীপুর সহ পাশের জেলা থেকেও দর্শনার্থীরা ভিড় জমান তমলুকের বর্গভীমা মন্দিরে। সারাদিন চলে বিশেষ পুজো। রাতে মাকে রাজ রাজেশ্বরী বেশে সাজিয়ে চলে পূজার্চনা, হোম যজ্ঞ। পুজো শেষ হয় ভোর রাতে। মাকে কন্তক্ত হিসাবে ষোড়শোপচারে পুজো করা হয়। মায়ের ভোগে শোল মাছ থাকে। তমলুক শহরের সব পুজো মণ্ডপ বর্গভীমা মন্দিরের পুজো দেওয়ার পর বাড়ি কিংবা ক্লাবের কালীপুজো শুরু হয়। গত বছর করোনার জন্য খুব বেশি দর্শনার্থীদের মন্দিরের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। করোনার গ্রাফ কিছুটা হলেও নামে, তাই মন্দিরের ভিতরে শুধু পুরোহিত এবং একজন উদ্যোক্তাকে প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে মন্দির কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মন্দিরের গর্ভগৃহে এবছরও পুষ্পাঞ্জলি দিতে পারবেন না পুণ্যার্থীরা।