কোভিডের ওষুধ হিসেবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিংবা ব্রেস্ট ক্যান্সার শুধু মাত্র বয়স্কদেরই হয়, এ রকম আরও কত ভ্রান্ত ধারণার শিকার অনেকেই। আর করোনাকালে এই সব ভুল ধারণার যেন আঁতুড়ঘরে পরিণত হয়েছে সোশাল মিডিয়া। পশ্চিম দেশগুলি তাই এই পরিস্থিতির নাম দিয়েছে ইনফোডেমিক। সহজ ভাষায় এ যেন তথ্যের অতিমারি। ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে গেলেই যে কোনও রোগ নিয়ে এত তথ্য রয়েছে যে কোনটা সঠিক আর কোনটা ভুল তার বিভেদ করা দিন দিন কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এই নিয়ে ইতিমধ্যেই সোচ্চার হয়েছে বিশ্বের দেশগুলি ও রাষ্ট্রপুঞ্জ সহ বিভিন্ন দেশীয় ও অন্তর্দেশীয় সংগঠন। আজ ওয়ার্ল্ড স্ট্রোক ডে-তে তাই স্ট্রোক নিয়ে এ রকমই বেশ কিছু ভ্রান্ত ধারণার সত্যতা জেনে নিন-
ভ্রান্ত ধারণা: স্ট্রোক শুধুমাত্র বয়স্ক রোগীদের হয়।
সত্যতা: বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এটা ঠিক নয়। অনেক ক্ষেত্রে অল্প বয়স্করা বিশেষ করে যারা ৩০ থেকে ৪০-র মধ্যে তারাও স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে, রিস্ক ফ্যাক্টারগুলি হল ডায়বিটিস(diabetes), হাইপারটেনশন(hypertension), ফ্যামিলি হিস্টরি(family history), ফ্লাকচুয়েটিং লিপিড প্রোফাইল(fluctuating lipid profile) এবং ধুমপান(smoking) করা। তবে এগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখলে এবং নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করলে শরীর সুস্থ থাকবে। স্ট্রোকের সম্ভবনা অনেকটাই কম করা যাবে।
ভ্রান্ত ধারণা: স্ট্রোকের লক্ষণ বোঝা কঠিন
সত্যতা: বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা একট ভুল ধারণা। স্ট্রোকের উপসর্গ বোঝাতে একটা টার্ম বা শব্দের প্রয়োগ তাঁরা প্রায়শই করেন। সেটা হল B.E.F.A.S.T, এখানে B for balance মানে শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে সমস্যা। E for eyes মানে চোখের সমস্যা। F- facial expression মানে মুখের ভঙ্গির সমস্যা। A- Arm weakness মানে বাহুতে সমস্যা। S মানে Slurring speech কথা বলতে সমস্যা। T-timely management মানে সময় থাকতে ব্যবস্থা নেওয়া। এই লক্ষণগুলি থাকলে সময়ের মধ্যে হাসপাতাল যাওয়া খুবই প্রয়োজনীয় ।
ভ্রান্ত ধারণা: স্ট্রোক(stroke) ও সিজা(seizure) মানে একই বিষয়।
সত্যতা: মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বিঘ্নিত কিংবা রক্তক্ষরণ হলে স্ট্রোক হয়। অন্যদিকে সিজা(seizure) হল শারীরিক (physical) বা ব্যবহারিক(behavioural) ক্ষেত্রে কিছু পরিবর্তন যা মস্তিষ্কে(brain) অতিরিক্ত ইকেট্রিকাল ডিস্চার্জের(electrical discharge) কারণ দেখা দেয়। অনেক ক্ষেত্রে স্ট্রোকের(stroke) কারণে সিজা হতে পারে। তাই এই দুটো কে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। বরং চিকিত্সকের সঙ্গে অবিলম্বে আলোচনার প্রয়োজন।
ভ্রান্ত ধারণা: স্ট্রোকের কোনও চিকিত্সা নেই
সত্যতা: অস্কেমিক স্ট্রোক(ischemic stroke) (যখন ক্লটের কারণে মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ কমে যায়) প্রায়ই হয়। তাই এই সমস্যার জন্য থ্রমবোলিকটিক এজেন্টের(thrombolytic agenst) মাধ্যমে ক্লট ভেঙে ফেলা হয়। তবে এই রোগের উপসর্গ দেখা দেওয়ার পাঁচ ঘন্টার মধ্যে রোগীকে হাসপাতলে নিয়ে যাওয়া না গেলে বাচানো সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে সময় থাকতে ব্যবস্থা নেওয়াটা খুবই প্রয়োজনীয়।
ভ্রান্ত ধারণা: স্ট্রোকের সঙ্গে হৃদরোগের সম্পর্ক রয়েছে
সত্যতা: স্ট্রোক ব্লাড ভেজেল(blood vessels) বা রক্তনালীকে প্রভাবিত করে এবং এর ফলে মস্তিষ্কে স্থায়ী কিংবা অস্থায়ী ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই স্ট্রোক মানে মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালনের বা সরবরাহ বাধা সৃষ্টি হওয়া। সেটা এই রক্তনালীতে ক্লটের কারণে কিংবা রক্তনালী ফেটে যাওয়ার কারণে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়। তাই স্ট্রোককে হৃদরোগের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলবেন না।
ভ্রান্ত ধারণা: স্ট্রোকে শুধুমাত্র পুরুষরা আক্রান্ত হন
সত্যতা: এটা ঠিক স্ট্রোক মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। তবে তার মানে এটা একেবারেই নয় যে মহিলাদের স্ট্রোক হয় না। তাই সচেতন থাকুন স্ট্রোকের লক্ষণ দেখলে চিকিত্সকের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করুন কিংবা তড়িঘড়ি হাসপাতালে যান। সুস্থ থাকুন।
ছবি সৌজন্য: Unsplash