পীযূষ গঙ্গোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণায় চৈতি ঘোষাল
আমাদের পীযূষ নিয়ে বলতে গেলে কতো কথাই তো মনে পড়ে। ওর হঠাৎ করে চলে যাওয়াটা আমাকে গভীর শোক দিয়েছিল। ওর দুর্ঘটনার কথা জানার পর থেকেই ঠাকুরের কাছে প্রেয়ার করছিলাম কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ওর সঙ্গে আমি প্রচুর নায়িকার চরিত্রে অভিনয় করেছি। একের পর এক ধারাবাহিক। দারুণ মানুষ ছিলেন। আমার মনে আছে আমার বাবার পরিচালনায় সেই সময় একটা হিন্দি ছবি করেছিলাম ‘বস্তি মে কর্ণ কুন্তি সংবাদ ‘ ওছিল সেই ছবিতে, অনেক পুরোনো আমার বিয়ের বহু আগের কথা। লম্বা আউট ড্র শ্যুট করেছিলাম। দারুণ মজা করে সময় কেটেছিল , গান গাইতে মজা করতো, ওর সঙ্গে থাকলে সময় কীভাবে কাটতো বোঝাই যেতোনা।
ইন্দ্রপুরি স্টুডিও তে যে সব মেকআপ রুম আছে তার মধ্যে সব থেকে বড় মেকআপ রুমটা পেয়েছিলাম আমি আর চিত্রা দি। পরবর্তী সময়ে যখন আমার স্বামীর ভূমিকায় অভিনয় করতে এলো পীযূষ, ও বললো আমাদের মেকআপ রুমেই থাকবে , হাসি ঠাট্টা করে সময় যেতো। কতোবার বলেছি এবার বেরিয়ে অপেক্ষা করো পোশাক বদলাবো। হাজার অসুবিধা হলেও সেই আমাদের সঙ্গে সঙ্গেই থাকতো। আমাকে খুব নজরে রাখতো। ওর নাটক আমি দেখেছি ও আমার নাটক দেখিয়েছে, অনেক প্ল্যান ছিল এক সঙ্গে অনেক কিছু করার কথা ছিল, তবে সব কিছু থামিয়ে চলে গেল। ও আমার এমন একটা ভরসা যায়গা ছিল, যার কাছে যেকোন সময়ে চলে যেতে পারতাম।
অভিনেতা হিসেবে ওর তুলনা ছিলনা। থিয়েটারের সব থেকে দক্ষ একজন অভিনেতা ছিল। থিয়েটারের ছেলে তাই নিজেকে দারুণ ভাবে তৈরি করেছিল। ওর মত অভিনেতা পাওয়া মুশকিল।
আমার পরিবারের খুব কাছের মানুষ ছিল। আমার স্বামী রনজিতের সঙ্গেও কাজ করেছে, দারুণ সম্পর্ক ছিল। আমি দেখেছি একটা ছোট্ট উপহার পেয়েও কতো খুশি হতো । আমাকে অনেকবার বলতো কিরে এখনও কেন বাড়ি যায়নি এখনই বাড়ি যা। অভিনয় হোক বা বাস্তবে চোখ বন্ধ করে ভরসা করতে পারতাম তাঁকে। এখানের মতো এতো প্রচারমুখী ছিলাম কেউই। তখন কাজ দিয়েই দর্শকদের সঙ্গে কানেক্ট থাকতাম। আসলে স্ক্রিনে পীযূষ এর সঙ্গে অনেক প্রেম করেছি তবে বাস্তবে ও আমার এমন বন্ধু ছিল যার কোন জেন্ডার হয়না অবলীলায় সব কিছু শেয়ার করা যায়। ও আদ্যপান্ত একজন শিল্পী ছিল যে সাধারণ মধ্যবিত্ত অথচ এনরিচ পরিবেশ থেকে উঠে আসা একজন ভালো মনের মানুষ। আজ ওকে খুব মিস করি।
অনুলিখন – সুচরিতা দে