অভিযোগ মারাত্মক। দেশ জুড়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে, কিংবা রাজ্য ক্রিকেটে, নয়তো আইপিএল দলের নেট বোলারের জায়গা পাইয়ে দেওয়ার ‘খেলা’ চলছে বেশ কিছু দিন ধরে। পরিবর্তে লাখ-লাখ টাকার লেনদেন চলছে। গুরগাঁও পুলিশের ইকোনমিক অফেন্সের কর্মীরা ৩ জনকে গ্রেফতার করার পর এই জালিয়াতি চক্রের বিশাল বিস্তারের খবর সামনে আসছে। সেই জলে ধরা পড়লেন এমন এক ক্রিকেটারের, যিনি বাংলা দলের হয়ে অনূর্ধ্ব – ১৯ দলে একসময় খেলেছেন। এখনও নিয়মিত সিএবি ক্লাব ক্রিকেটে খেলেন।
গত একমাসের উপর ধরে,উঠতি ক্রিকেটারদের ঘিরে এই অভিনব জালিয়াতি নিয়ে গোটা দেশ জুড়ে চলছে তদন্ত। একমাস আগে ৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এবার ২ জন আরও। দুজনই বাংলার। তাঁদেরই একজন ক্রিকেটার-দানিশ মির্জা। অন্যজন-অনুরাগ। তিনিও ক্লাব ক্রিকেটার।
আরও পড়ুন: CAB: কর্তাদের উদ্যোগে শুরু হচ্ছে অফিস ক্রিকেট লিগ
বাংলার ক্রিকেটে দানিশ খেলছেন অনেকদিন ধরে। টাউন, ঐক্য সম্মিলনী, ওয়াইএমসিএ, পাইকপাড়া স্পোর্টিং-এইসব দলের হয়ে খেলেছেন ডানহাতি ভিন রাজ্যের ক্রিকেটারটি। এখনও সিএবি ক্লাব ক্রিকেট লিগে খেলছেন।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দানিশ আর অনুরাগ এক উঠতি ক্রিকেটারের থেকে ৪ লাখ টাকা নিয়েছেন। এবং কথা দিয়েছেন – একটি আইপিএল দলের বোলার হয়ে জায়গা করে দেবে। এটা নাকি হয়ে যাবে দানিশদের ‘স্ট্রং কানেকশন’ দিয়ে।
যে জুনিয়র ক্রিকেটারের থেকে টাকা নেন দানিশরা, তাকে বলা হয়, দানিশ নাকি একটি আইপিএল দলে নেট বোলার হয়ে একসময় ছিলেন। দানিশকে কলকাতা ক্লাব ক্রিকেট অনেকেই চেনে মারকুটে ব্যাটসম্যান বলে। অনুরাগ নিজেও কলকাতা ক্লাব ক্রিকেট খেলেছেন। তবে দানিশের মত জুনিয়র বাংলা দলে জায়গা করে নিতে পারেননি। তদন্তে গুরগাঁও পুলিশের ইকোনমিক অফেন্সের কর্মীরা এই কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত পুলিশ হেফাজতে থাকা অসমের আশুতোষ বোরা’র থেকে এই দুজনের নাম জানতে পারে।
গত মাসে ৪ তারিখ, গুরগাঁওয়ের লে মেরিডিয়ান হোটেল থেকে গ্রেফতার করা হয়ছিল-আশুতোষ বোরা,চিত্রা বোরা এবং নীতিন ঝা-কে। নিউ পালাম বিহারের বাসিন্দা উঠতি ক্রিকেটার আনশুল রাজ সেক্টর ৫০ পুলিশ থানায় লিখিত অভিযোগ জানান। সেটা নেওয়া হয় ২৪ অগস্ট। অভিযোগকারী জানায়, ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে রাজ্য দলে খেলানোর নিশ্চয়তা দিয়েছিল তারা।
তদন্ত করতে নেমে পুলিশ টের পায়, অভিযুক্তের একটি স্পোর্টস ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি আছে সহনা রোডে। দিল্লী, হরিয়ানা, রাজস্থান, মুম্বই আর গুজরাটের ১৮ জন উঠতি ক্রিকেটারের সঙ্গে চুক্তি করে। এইসব ক্রিকেটারের ‘প্রমোশন, ইমেজ বিল্ডিং, ট্রেনিং’ দেখভাল করার কাজ এই সংস্থাটির।
ইতিমধ্যে, তদন্তকারী দল সিআরপিসি (CrPC) সেকশন ৪১-এ নিয়মে ফেলে বিভিন্ন রাজ্য সংস্থা এবং প্রাক্তন ক্রিকেটারদের নোটিশ পাঠিয়েছে। তাতে বলে হয়েছে, তদন্তের স্বার্থে যাবতীয় সাহায্য করতে।
বাংলার কর্তাদের মনোভাব:
বয়স ভাঁড়ানো এবং নানান সরকারি নথি জাল করে কলকাতা ক্লাব ক্রিকেটে খেলা বন্ধ করতে কঠোর পদক্ষেপ করেছে সিএবি। সংস্থার সভাপতি অভিষেক ডালমিয়া এবং সচিব স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় স্পষ্ট করে বলেছেন, বাংলার ক্রিকেটে এসব আর চলতে দেওয়া যাবে না। কড়া নিয়ম চালু হয়েছে। আরও অনিয়ম – জালিয়াতি বন্ধ করে, ক্রিকেটের উন্নতিতে খরচ করবে রাজ্য সংস্থা।
বাংলার ক্রিকেটার দানিশ মির্জার গ্রেফতার হওয়া প্রসঙ্গে সংস্থার সহ-সচিব দেবব্রত দাস বলেন, ‘অনেক আগে দানিশ আমার ক্লাব টাউনে খেলেছে। শুনেছি, এবার সে পাইকপাড়া স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে খেলবে। কিন্তু এই ক্রিকেটারের গ্রেফতার হওয়া প্রসঙ্গে কিছুই জানি না।’
অর্থের বিনিময়ে রাজ্য দলে জায়গা পাওয়া নুতন কিছু নয়। বাংলাতেও বহু সময় এসব নিয়ে শোরগোল হয়েছে। কিন্তু কোনো ক্রিকেটার গ্রেফতার হয়নি। অন্য রাজ্য থেকে দানিশ (শোনা যাচ্ছে তিনি এসেছিলেন কলকাতা ময়দানে উত্তরপ্রদেশ থেকে) এখানে খেলতে খেলতে যে এসব কীর্তিতে নিজেকে জড়িয়েছেন-তা নাকি বাংলার কোনো কর্তাই জানতেন না। তদন্ত যেভাবে এগুচ্ছে, কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বের হতে পারে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভারতীয় বোর্ড এসব রুখতে কী পদক্ষেপ করেন তাও দেখার। পাশাপাশি, এই ক্রিকেট জালিয়াতিতে প্রাক্তন জুনিয়র রাজ্য দলের ক্রিকেটার গ্রেফতার হতেই বাংলার মুখ পুড়ল-তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
ছবি: ফাইল চিত্র।