মুম্বই: টাকা জমিয়ে সোনা কেনার চল রয়েছে এদেশে৷ মধ্যবিত্ত ভালোই জানে, অসময়ে, বিপদে-আপদে এই হলুদ ধাতুই কাজে লাগবে৷ তাই অতিমারিতে সর্বস্বান্ত অনেক মধ্যবিত্ত সোনার গয়না বিক্রি করা শুরু করেছেন৷ গয়না ব্যবসায়ীদের কথায়, সোনার দাম বাড়ায় গয়না বিক্রি করে বেশি টাকা পাওয়া যাচ্ছে৷ তাই মানুষ এখন সোনা কিনছেন কম৷ বরং বিক্রি করতে দোকানে আসছেন বেশি৷
মুম্বইয়ের কবিতা জোগানি৷ পেশায় একজন বস্ত্র ব্যবসায়ী৷ ৪৩ বছর কবিতা গিয়েছিলেন মুম্বইয়ের একটি জুয়েলারি বাজারে৷ সঙ্গে ব্যাগে ভরে নিয়ে গিয়েছিলেন কয়েকটি সোনার গয়না৷ গয়নাগুলো ভালোভাবে পরখ করে, ওজন মেপে জহুরি বললেন, ‘৮০ গ্রাম সোনা আছে৷ বিক্রি করলে ২ লাখ টাকা মত পাওয়া যাবে৷’ শুনে কবিতা রাজি হয়ে যান৷ বলেন, ‘২৩ বছর আগে বিয়ের সময় গয়নাগুলো কিনেছিলাম৷ এখন বিক্রি করতে এসেছি৷ এছাড়া উপায় নেই৷ দেড় বছর টানা লকডাউনে ব্যবসা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল৷ দোকানের বিল, ১৫ জন কর্মীর বেতন কিচ্ছু দিতে পারিনি৷’
আরও পড়ুন: লেজার লাইটের পর এবার দর্শকদের জন্য বন্ধ বুর্জ খলিফা
আজিজ প্রেমজি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমীক্ষা বলছে, করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় কামড়ের জেরে ভারতে চরম আর্থিক মন্দা দেখা গিয়েছে৷ বহু ব্যবসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷ অনেকে চাকরি হারিয়েছেন৷ ব্যাঙ্কে জমানো টাকা দিয়ে যতদিন সম্ভব টেনে-টুনে সংসার চলেছে৷ জমানো পুঁজিও শেষ হওয়ার পর সোনা বন্ধক রেখে কেউ কেউ ঋণ নিয়েছেন৷ তার পরেও অনেক বাবা-মা সন্তানদের স্কুল ফি দিতে পারেননি৷ বাড়ি ভাড়ার টাকা মেটাতে হিমশিম খেতে হয়েছে৷ পরিসংখ্যান বলছে, গত দেড় বছরে ২৩০ মিলিয়ন ভারতীয় দরিদ্রতার শিকার হয়েছেন৷ তার উপর পেট্রোল-ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি, আকাশছোঁয়া গ্যাসের দাম তাদের জীবন কাটানো আরও মুশকিল করে দিয়েছে৷
এই সোনার গয়না বেচে ২ লাখ টাকা পেয়েছেন কবিতা৷ ছবি-ভাইরাল হওয়া ছবি থেকে নেওয়া
বেঁচে থাকতে গেলে টাকা দরকার৷ এদিকে কাজকর্ম না থাকায় হাতে টাকাও নেই৷ তাই সাধারণ রোজগেরে মানুষের নজর পড়েছে শেষ সম্বল- সোনায়৷ এই যেমন কবিতা জোগানি৷ বিয়ের সময় কেনা সোনার চুড়ি বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন৷ তাঁর মত আরও অনেকে গয়না নিয়ে ছুটছেন সোনার দোকানে৷ মুম্বইয়ের জাভেরি বাজারে পারিবারিক গয়নার দোকান রয়েছে কুমার জৈনের৷ ৬৩ বছরের স্বর্ণ ব্যবসায়ীর কথায়, মানুষ আগেও সোনা বিক্রি করতে আসত৷ কিন্তু মহামারির সময় যেন সোনা বিক্রির হিড়িক পড়েছে৷ আগে এত মানুষকে সোনা বিক্রি করতে দেখিনি৷ করোনা ও তার জেরে ডাকা টানা লকডাউনে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে৷ গত কয়েক মাসে মহিলারা আসছেন সোনা বিক্রি করতে৷ তবে সবচেয়ে খারাপ লাগে যখন দেখি মহিলারা কাঁদতে কাঁদতে গলা থেকে সোনার মঙ্গলসূত্রটা খুলে দিচ্ছে৷ ভাবুন কী দিন এল?’
আরও পড়ুন: ২০০ কোটি টাকা দুর্নীতি মামলায় অভিনেত্রী নোরা ফতেহিকে ইডির তলব
ওই সোনার দোকানে গয়না বিক্রি করে ২ লক্ষ টাকা পেয়েছেন কবিতা৷ বলেন, ‘ছোটবেলায় মা বলত, টাকা জমিয়ে সোনা কিনে রাখ৷ তখন মায়ের কথা অত শুনতাম না৷ কিন্তু এখন বুঝি মা ঠিক বলত৷ প্রত্যেকের টাকা জমিয়ে সোনা কিনে রাখা উচিত৷’