কলকাতা: টানা সাত ঘণ্টা ইডি-র দফতরে হাজিরা দিলেন কলকাতা টিভি’র সম্পাদক কৌস্তুভ রায়। সকালে হাজিরা দেওয়ার সময় বলেছিলেন, ‘কোন মামলায় ডেকেছে তা জানি না। কেন ডেকেছে তা বুঝতে পারছি।’ হাজিরার পর বেরিয়েও, কৌস্তুভের বক্তব্য, ‘ধমকে চমকে কলকাতা টিভির মুখ বন্ধ করা যাবে না।’ একই সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছেন, প্রয়োজনে আবার ডাকলে হাজিরা দেবেন। কিছু কাগজপত্র ইডি জমা করতে বলেছে, তিনি সে গুলো পাঠিয়ে দেবেন।
একটি মামলায় কলকাতা টিভির সম্পাদক কী ভাবে টাকা ফেরত দিয়েছেন তা জানতে চায় ইডি। কৌস্তুভ রায় বলেন, ‘এ নিয়ে ডিটেল জানতে চায় এনফোর্সমেন্ট ডায়রেক্টরেট। তদন্ত চলছে, কীভাবে টাকা আমি শোধ করছি বা কী আমার প্ল্যানিং, তার ডিটেলসও আমি বলে দিয়েছি। এবং তদন্তে আমি সহযোগিতা করেছি। আগেও করেছি, এখনও করছি। কিন্তু তিন বছর পরে কেন ডাকল সেটা আমি বুঝতে পারছি না।’ এর আগে ২০১৮ সালে কৌস্তুভ রায়কে একবার তলব করে ইডি। তারপর তিন বছর পার। এই মামলায় এনফোর্সমেন্ট ডায়রেক্টরেট কোনও তথ্য জানতে চায়নি।
ইডি দফতরে কলকাতা টিভি’র সম্পাদক কৌস্তুভ রায়।
কলকাতা টিভি’র অন্যতম প্রধান শো ‘চতুর্থ স্তম্ভ’। চ্যানেলের সম্পাদকীয় প্রতিবেদন। যেখানে সরাসরিই কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের একধিক ভুল নীতির বিরুদ্ধে চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করে গিয়েছে কলকাতা টিভি। স্পেডকে স্পেড বলতে, কালোকে কালো বলতে কখনওই পিছপা হয়নি। সংবিধানকে মর্যাদা দিয়ে, প্রতিদিনই এভাবে ‘চতুর্থ স্তম্ভ’ সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকা কী হতে পারে তা বুঝিয়ে দিয়েছে। কৌস্তুভ রায়ের বক্তব্য, ‘গত সাত বছরে কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে বিজেপি সরকার যেভাবে ব্যবহার করেছে, তা গত সত্তর বছরেও হয়নি। দেশের উন্নতি গত সাত বছরে কী হয়েছে তা নিয়ে আমি আলোচনা করতে চাই না। কিন্তু কেন্দ্রীয় সংস্থার যে ভূমিকা গোটা দেশ জুড়ে তা বাঞ্ছনীয় নয়।’
তা কেন হঠাৎ করে কেন তলব? কৌস্তুভ রায়ের বক্তব্য, ‘গোটা দেশে যারা যারা নরেন্দ্র মোদি আর বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে যে সব মিডিয়া প্রশ্ন করছে তাদেরকেই ডেকে পাঠানো হচ্ছে। কোথাও নিউজ লন্ড্রি, কোথাও দৈনিক ভাস্কর, কখনও এনডিটিভি। তো সেই তালিকায় কলকাতা টিভিরও নামও সংযোজিত হল।’ এরপরেও কলকাতা টিভির সম্পাদকের স্পষ্ট জবাব, তিনি বা তাঁর প্রতিষ্ঠান প্রশ্ন বন্ধ করবেন না। অন্যায়, না পাওয়া, দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রশ্ন জারি থাকবে।
আরও পড়ুন- নভেম্বর পর্যন্ত ১৪৪ ধারা, তা হলে কি ত্রিপুরায় দুর্গাপুজো হবে না? বিজেপিকে নিশানা মমতার
এ রাজ্যে বিধানসভা ভোটে বিজেপির ভরাডুবি হয়েছে। তারপরেই শুরু হয়েছে ভাঙন। একের পর বিজেপি নেতারা দল ছেড়েছেন। দিন কয়েক আগে পরপর দু’বারের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। একই ভাবে ভোটের পরই একাধিক তৃণমূলের একাধিক নেতাকে কখনও সিবিআই, কখনও ইডি ডেকে পাঠিয়েছে। এ রাজ্যে মামলা হলেও তৃণমূল কংগ্রেস নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিল্লিতে হাজিরা দিতে বলা হয়েছে। সবমিলিয়ে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের মত, এজেন্সি ব্যবহার করে ঘরের ভাঙন আটকাতে চাইছে বিজেপি। এর আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই অভিযোগ বারবার করেছেন।
হাজিরার শেষে বেরিয়ে কলকাতা টিভির সম্পাদক কৌস্তুভ রায়ের বক্তব্য, ‘ধমকে চমকে আমার মুখ বন্ধ করা যাবে না। আমি কথা বলেই যাব।’