কলকাতা: কোর্ট রুমের বাইরে হাত জোড় করে বিড়বিড় করছিলেন অনেকক্ষণ৷ নজরে এলেও উপস্থিত অনেকেই কিছু বুঝে উঠতে পারছিলেন না৷ কিন্তু, কোনও দিকেই ভ্রুক্ষেপ ছিল না মধ্য পঞ্চাশের মানুষটার৷
ঘড়িতে তখন বেলা ১ টা হবে। কালো পোশাকের দুই আইনজীবী আদালতের নির্দেশ শোনাতেই যেন বাঁধ ভাঙল মানুষটার৷ আদালত না আইনজীবী না ঈশ্বর কাকে ধন্যবাদ জানবেন… বুঝে উঠতে পারছিলেন না ৷ চোখের কোণার চিকচিক করা ছবিটাই যেন বলে দিচ্ছিল… মেয়েকে ফিরে পাওয়ার ক্ষীণ আশাটাই আজ আলো দেখাচ্ছে৷
ভরসা থাকলেও ভয় তো ছিলই৷ আদালত এ ভাবে পাশে দাঁড়াবে, হয়তো ভাবতে পারেননি৷ ঠিক যেমন করে কোনও দিনও কল্পনা করতে পারেননি ঘুমের মধ্যে মেয়েটা এক দিন হারিয়ে যাবে৷ হাজারো ঝড়ঝাপটা সামলে ২৪ টা বছর আগলে রেখেছিলেন, সেই মেয়েটাকে তুলে নিয়ে যাবে শয়তানগুলো …
সেই দিনটার কথা আজও ভোলেননি সমীর রায় (নাম পরিবর্তন)৷ গত বছরের ২৪ জুলাই। বারাসত থেকে অপহরণ করা হয় নমিতা রায় (নাম পরিবর্তন)। বয়স তখন মাত্র ২৪। সে দিনই বারাসত থানায় অভিযোগ দায়ের করেন নমিতার বাবা। শুরু হয় তদন্ত। পরিবারের তরফে অভিযোগ করা হয়, পাশের বাড়ির এক যুবক তন্ময় বিশ্বাস ওই যুবতীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। জানা যায়, এরপরই ওই যুবতীর বাবা তন্ময় বিশ্বাসের মামার বাড়িতে পৌঁছে যান। কিন্তু মেয়ের কোনও সন্ধান পাননি।
এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে বারাসত থানার তদন্তকারী আধিকারিকরা অভিযুক্ত তন্ময় বিশ্বাসের মামাকে থানায় তলব করেন। যুবতীর বাবাকেও থানায় ডেকে পাঠানো হয়৷ তখন অভিযুক্ত তন্ময় বিশ্বাসের মামা কৃষ্ণ দে বাংলাদেশে ভিডিও কল করলে ওই যুবতীর অবস্থান যেমন জানা গিয়েছিল, তেমনিই মেয়ের সঙ্গে কথা বলার সুযোগও হয় ওই সমীরবাবুর।
তবে সেই ভিডিও কলে কেমন আছে তা স্পষ্ট করেনি মেয়ে। বাবার অভিযোগ মেয়েকে মাদক খাইয়ে রাখা হয়। যে সময় কথা হচ্ছিল তখন ওই যুবতী আছন্ন ছিল৷ সমীরবাবু অভিযোগ করেন, মাদক খাওয়ানোয় এমনটা ঘটেছে ।
এর পরই হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন সমীরবাবু। কিন্তু, বিষয়টা রাজ্যের সীমা ছাড়িয়ে ভিন দেশে চলে গিয়েছে৷ সমীরবাবুর আইনজীবীরা জানান, সিবিআই, সিআইডি-র পাশাপাশি ইন্টারপোলের সহযোগিতা লাগবে৷ এক সঙ্গে কাজ করলেই ফেরানো সম্ভব মেয়েকে৷ সেই মতো আদালতে আবেদন করেন সমীরবাবুর দুই আইনজীবী সুদীপনয়ন ঘোষ ও রাজীব মল্লিক। শুক্রবার সেই আবেদনে সাড়া দিল কলকাতা হাই কোর্ট৷ বলল, সিবিআই, সিআইডি এবং ইন্টারপোলকে এক সঙ্গে কাজ করে মেয়েকে ১৬ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাবার কাছে ফিরিয়ে দিতে৷ স্বাভাবিক ভাবেই বিচারপতি রাজশেখর মান্থার এই নির্দেশে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন বাবা৷
আর শুরু করেছেন দিন গোনার, মেয়েকে কাছে ফিরে পাওয়ার৷ এক স্বপ্ন সফরকে সঙ্গী করে …
আরও পড়ুন: শিয়ালদহ-বনগাঁ লাইনে ধস, বন্ধ রেল চলাচল