বাঁকুড়া: টেন্ডার দুর্নীতিতে অভিযুক্ত রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে বৃহস্পতিবার বিষ্ণুপুর মহকুমা আদালতে তোলা হল৷ বিষ্ণুপুর পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শ্যামাপ্রসাদকে ফের হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছে পুলিশ৷ এর আগে আদালত তাঁর ৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছিল।
পুরসভার আর্থিক তছরুপের ঘটনায় রবিবার রাজ্যের প্রাক্তন বস্ত্র ও আবাসন মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করা হয়। বিষ্ণুপুর পুরসভায় দীর্ঘদিন পুরপ্রধান ও প্রশাসক হিসাবে ছিলেন তিনি। সেই সময় বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে তিনি প্রায় ১০ কোটি টাকারও বেশি আর্থিক অনিয়ম করেছেন বলে অভিযোগ। সম্প্রতি বিষ্ণুপুর থানায় অভিযোগ জানান বিষ্ণুপুরের মহকুমা শাসক অনুপকুমার দত্ত।
রবিবারই তাঁকে আদালতে তোলা হয়। চারদিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেয় বিষ্ণুপুর মহকুমা আদালত। পুলিশ সূত্রে খবর, জেরায় উঠে আসে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য৷ শ্যামাপ্রসাদের নামে ৬টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের খোঁজ মেলে৷ সে গুলির প্রত্যেকটিতে বিপুল পরিমাণ অঙ্কের অর্থ জমা আছে৷ ৬টি অ্যাকাউন্টই ফ্রিজ করা হয়৷ তাঁর ছেলে ও মেয়ের নামে থাকা একাধিক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও পুলিশি নজরদারিতে রয়েছে৷
আরও পড়ুন: গ্রেফতার হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ‘অসুস্থ’ বিজেপি নেতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়
তদন্তকারী আধিকারিকদের অনুমান, বহু বেনামি জমিতেও মোটা টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন বিষ্ণুপুর পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান৷ এর মধ্যে বেশকিছু জমির হদিশও পান তাঁরা৷ শুধু জমিতে বিনিয়োগেই থেমে থাকেননি, বিভিন্ন ব্যক্তির মাধ্যমে বালি ব্যবসাতেও বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেন শ্যামাপ্রসাদ৷ বালি ব্যবসার সঙ্গে আর কে কে যুক্ত রয়েছেন তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ৷
শুক্রবার শ্যামাপ্রসাদের সঙ্গে দেখা করতে যান বিষ্ণুপুরের বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খান৷ প্রায় ২০ মিনিট থানায় থাকেন তিনি। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথাও বলেন তিনি৷ থানা থেকে বেরিয়ে সৌমিত্র খাঁ বলেন, শুধুই সৌজন্য সাক্ষাৎ৷ দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে৷ তাই দেখা করতে এসেছি৷ সৌমিত্র অভিযোগ করেন, পুলিশ তদন্তের নামে শ্যামাপ্রসাদের উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বিজেপিতে যোগ দেওয়াতেই গ্রেফতার শ্যামাপ্রসাদ, দাবি দিলীপের
গত ৩৪ বছর ধরে কখনও কংগ্রেস, কখনও তৃণমূলের হয়ে বিষ্ণুপুর পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। ২০০৯ সালে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন শ্যামাপ্রাসাদ। ২০১১ সালে বিষ্ণুপুর বিধানসভা থেকে নির্বাচিত হয়ে পরিবর্তনের সরকারের আবাসন বিভাগের পূর্ণমন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি। পরে আবাসন দফতর থেকে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয় নারী ও শিশু কল্যাণ বিভাগের মন্ত্রী হিসাবে।
ফের ওই দফতর থেকে সরিয়ে বস্ত্রমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয় শ্যামাপ্রসাদকে। ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে বিষ্ণুপুর বিধানসভা থেকে হেরে যান তিনি৷ পুরসভার দায়িত্বে বহাল থেকে যান তিনি। ২০২০ সালে পুরসভার মেয়াদ শেষ হবার পরেও তিনি বিষ্ণুপুর পুরসভার পুর-প্রশাসক বোর্ডের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০২০ সালে নভেম্বর মাসে পুরসভার পুর প্রশাসক বোর্ডের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে। ২০২০-র ডিসেম্বর মাসে বিজেপিতে যোগ দেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।