তালিবানি তান্ডবের প্রভাব এবার পড়তে চলেছে টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও? ঘটনার গতি প্রকৃতি এমন কিছুর ইঙ্গিতই দিচ্ছে।কিন্তু আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হল, রশিদ-নবিরা খেলতে নামবেন টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।
আফগানিস্তান ক্রিকেট দলের মিডিয়া ম্যানেজার হিকমত হাসান সোমবারই বলেছেন,‘আমাদের দল টি-২০ বিশ্বকাপ খেলব। প্রস্তুতি নিয়ে সংশয় নেই। আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই ক্রিকেটাররা কাবুলেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করবে। আমাদের আবার অস্ট্রেলিয়া,ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে ত্রি-দেশীয় সিরিজ রয়েছে সামনে। তার জন্য ভেন্যু খুঁজছি আমরা। ভারতে হলে ভালো হত।আগেও ওখানে খেলেছি আমরা। এটাই কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপের প্রস্তুতির অঙ্গ হয়ে কাজে লাগবে।আমরা শ্রীলঙ্কা ও মালয়েশিয়ার সঙ্গেও কথা বলছি এই সিরিজের জন্য। আমরা পাকিস্তানেও খেলতে যাব।’ শুধু তাই নয়, এই পরিস্থিতিতে ঘরোয়া ক্রিকেট প্রতিযোগিতা করার বিষয়তেও আশাবাদী হিকমত হাসান।
আরও পড়ুন: তালিবানের প্রাণভয়ে দেশ ছাড়তে কাবুল বিমানবন্দরে থিকথিকে ভিড়
আফগানিস্তানে একের পর এক এলাকার দখল করে নিয়েছে দেশটির তালিবান গোষ্ঠী। ইতোমধ্যে দেশটির অধিকাংশ এলাকার দখল তাদের দখলে। এখন তারা রাজধানী কাবুল দখলের অপেক্ষায় । এরইমধ্যে আফগানিস্তানের কান্দাহার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, খোস্ত সিটি স্টেডিয়াম এবং কুন্দুজ ক্রিকেট স্টেডিয়াম তালিবানদের দখলে চলে গেছে। ফলে এই দেশটির অক্টোবরে আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
প্রতিনিয়ত প্রচার মাধ্যম যে সব খবর আপডেট দিচ্ছে , তাতে স্পষ্ট তালিবানরা ইতোমধ্যে আফগানিস্তানের কান্দাহার ও গজনির মতো বড় বড় শহর, ১০টির বেশি প্রাদেশিক রাজধানী পুরো কব্জায় নিয়ে নিয়েছে। সর্বশেষ খবরে জানা যাচ্ছে , তালিবানরা রাজধানী কাবুলও দখলে নিয়েছে। এমিরেটস এয়ারলাইন্সের সব বিমান কাবুল পরিষেবা আপাতত বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি অনেক আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থা আফগানিস্তানের আকাশ পথের করিডোরও ব্যবহার করছে না।
জানা গেল, তালিবান নেতা আব্দুল ঘানি বরাদার এখন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হয়ে বসে পড়েছেন। দেশ ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছেন, আগের আফগান প্রেসিডেন্ট গনি। সব কিছু মিলিয়ে দেশটির পরিস্থিতি অনিশ্চয়তার দিকে প্রতি ঘণ্টায় ঢলে চলেছে।
আরও জানা যাচ্ছে, আফগানিস্তানে প্রধান ৬টি ক্রিকেট স্টেডিয়াম রয়েছে। এর মধ্যে ৩টি স্টেডিয়ামের দখল ইতিমধ্যে নিয়ে নিয়েছে তালিবানরা। কিন্তু আগের পরিকল্পনা মতন আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য আফগানিস্তান দলের টানা অনুশীলন শুরু করার কথা ছিল। অক্টোবরেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।
আইসিসি এখনও কিছুই ঘোষণা করেনি। আজ রাষ্ট্রপুঞ্জের সভা। এই দেশের ক্রিকেট আর ক্রিকেটারদের ভবিষ্যত কী-তা সকলের অজানা। তালিবানরা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দখল নিয়ে নেওয়ার জন্য ঘোর অনিশ্চয়তা। অন্যদিকে দেশটির বর্তমান বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই রশিদ খান-মহম্মদ নবিদের অনুশলীন করাই এক প্রকার অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে স্বাভাবিক কারণেই আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও আফগানিস্তান দলের অংশ গ্রহণ করা নিয়ে ঘোরতর সংশয় দেখা দিয়েছে।
দেশের এই অস্থির অবস্থা দেখে দুদিন আগেই ক্রিকেটার রশিদ খান সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশ্ব নেতাদের কাছ থেকে সাহায্য চেয়েছিলেন। অলরাউন্ডার মহম্মদ নবিও ট্যুইট করেন দেশের এমন পরিস্থিতি নিয়ে।
The ongoing war in Afghanistan has led to humanitarian crisis. Please support @RashidKhanFund & @Afghan_cricketA emergency online fundraiser to provide basic essentials to those affected by the conflict. Link below ⬇️ https://t.co/6AoUdDABty
— Rashid Khan (@rashidkhan_19) August 10, 2021
উল্লেখ্য, জাতীয় দলের বড় সংখ্যক ক্রিকেটার আফগানিস্তানেই থাকেন । আর রশিদ খান, মুজিব উর রহমান এবং মহম্মদ নবি আইপিএল খেলার জন্য অবশ্য দেশের বাইরে। আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তারাও ক্রিকেটারদের অনুশীলনের ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নিতে পারছে না। দেশটির জনগনের দুশ্চিন্তা এখন শুধুই তালিবানদের নিয়ে। ক্রিকেট নিয়ে ভাবনা এখন আপাতত পিছনের সারিতে চলে গেছে।
তালিবানদের এমন আকস্মিক অভিযানের কারণে কাবুল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম আপাতত বন্ধ। শুধুমাত্র জালালাবাদের গাজি আমানুল্লা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম এখনও আফগান সরকারের দখলে আছে। তাও চলে যাবে, তালিবান নেতা আব্দুল ঘানি প্রেসিডেন্ট হয়ে বসে পড়তেই। তালিবানরা কাবুল দখল করে নেওয়ায় সেই স্টেডিয়ামও হাতছাড়া হয়ে গেছে। দেশটির বেশিরভাগ ক্রিকেটার কাবুলের এই স্টেডিয়ামেই অনুশীলন করেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে অনুশীলন তো দুরের কথা, ক্রিকেটাররা নিজেদের ও পরিবারের জীবন রক্ষায় ব্যস্ত। কবে থেকে প্রস্তুতি শুরু হবে, তা কেউ জানে না।
ছবি: সৌ-টুইটার