ওয়েব ডেস্ক: ‘ভ্যাম্পায়ার’ (Vampire) কি সত্যিই কাল্পনিক নাকি বাস্তবেও এমন রক্তচোষা প্রাণীর অস্তিত্ব ছিল, তা নিয়ে ‘নানা মুনির নানা মত’। কিন্তু সার্বিয়া (Serbia) দেশে অবস্থিত একটি নির্জন কবরস্থানের একটি শিলালিপি আজও বয়ে বেড়াচ্ছে এক ‘ভ্যাম্পায়ার’-এর স্মৃতিকে। না, কোনও গল্প নয়, ইতিহাসের এক ঘটনা থেকেই সার্বিয়ায় শুরু হয় রহস্য। একের পর এক মানুষের মৃত্যু এবং কবর খুঁড়ে তাঁদের দেহ তুলে তা থেকে রক্ত শুষে খাওয়ার দাগ- এই সব নিয়েই ১৭২৫ সালে সার্বিয়ায় জন্ম নেয় এক ‘ভ্যাম্পায়ার’-এর গল্প।
সালটা তখন ১৭২৫, সময়টা গ্রীষ্মকাল। সার্বিয়ার রাজধানী বেলগ্রেড থেকে ১০০ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত ছোট্ট গ্রাম কিসিলিয়েভোতে অস্বাভাবিকভাবে একের পর এক মানুষের মৃত্যু হতে শুরু করে। গ্রামজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। সেই সময় গ্রামবাসীদের মনে হয়, রাতে কবর থেকে উঠে এসে কেউ জীবিতদের রক্ত চুষে খাচ্ছে। আর এক্ষেত্রে সন্দেহের তীর যায় পিটার ব্লাগোজেভিচ নামের এক মৃত ব্যক্তির দিকে। কারণ জীবদ্দশায় তিনি একাধিক খারাপ কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সন্দেহের বশে গ্রামবাসীরা পিটারের মৃতদেহ কবর থেকে তুলে আনেন। দেখা যায়, তার দেহ প্রায় অক্ষত। কিন্তু মুখ থেকে টাটকা রক্ত ঝরছে। সেটি দেখে গ্রামবাসীরা ধরে নেন, গ্রামের মৃত্যুমিছিলের নেপথ্যে রয়েছেন পিটারের প্রেতত্মাই।
আরও পড়ুন: পর্তুগালের আকাশে বিশাল ঢেউ! উষ্ণ ইউরোপে এবার সুনামির আতঙ্ক?
কিন্তু পিটার যে আদেও ‘ভ্যাম্পায়ার’ ছিলেন, তার কোনও প্রমাণ এখনও পর্যন্ত মেলেনি। তা সত্ত্বেও মৃত এক মানুষকে ভয় পেয়ে তাঁর দেহ কবর থেকে তুলে এনে পুড়িয়ে ফেলা হয়। খ্রীস্টান হওয়া সত্ত্বেও তাঁর মরদেহ পুড়িয়ে সেই ছাই ভাসিয়ে দেওয়া নদীর জলে। পিটারের এই ঘটনা ভিয়েনা থেকে প্রকাশিত তৎকালীন পত্রিকা ‘উইনারিসচেস ডায়ারিয়াম’ (Wienerisches Diarium)-এ ২১ জুলাই ১৭২৫ তারিখে ছাপা হয়।
পিটারের সেই কবর আজও রয়ে গিয়েছে অক্ষত অবস্থায়। এককথায়, ইতিহাসের একমাত্র ‘ভ্যাম্পয়ার’-এর নিদর্শন হিসেবে সার্বিয়ার ওই কবরস্থানে রয়ে গিয়েছে পিটারের কবরের শিলালিপি। সম্প্রতি যেটির সন্ধান মিলেছে। ঘটনার ৩০০ বছরের বেশি সময় পর ‘ডাউজিং রড’ পদ্ধতিতে খোঁজ মিলেছে এই প্রাচীন কবরের। সেই কারণেই রহস্যময় এই ইতিহাস পুনরুজ্জীবিত হয়েছে ফের একবার।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই ‘ভ্যাম্পায়ার’ শব্দটি এক কীভাবে? ইতিহাসবিদ ও ট্রিনিটি কলেজ ডাবলিনের ইউরোপীয় অধ্যয়ন কেন্দ্রের প্রধান ক্লেমেন্স রুথনার মনে করেন, এই ‘ভ্যাম্পায়ার’-রূপকথা আসলে এক ভুল অনুবাদের ফল। পুরনো বুলগরিয় শব্দ ‘ইউপিয়র’ মানে হচ্ছে ‘খারাপ লোক’। সম্ভবত গ্রামবাসীরা মৃদু স্বরে এই শব্দ উচ্চারণ করায় অস্ট্রিয়ান সেনা ও ডাক্তাররা ভুলবশত সেটিকে ‘ভ্যাম্পায়ার’ বলে লিখে ফেলেন। সেই থেকেই জন্ম নেয় ‘ভ্যাম্পায়ার’।
দেখুন আরও খবর: