ওয়েব ডেস্ক : ১২ দিনের যুদ্ধে খামেনেইকে (Ali Khamenei) মারার পরিকল্পনা ছিল ইজরায়েলের! সম্প্রতি এমনই দাবি করেছেন সে দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী কাটজ। তবে বাস্তবে তা কি সম্ভব? ইরানের (Iran) সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনেই। ইরানের অত্যন্ত সুরক্ষিত, প্রতীকী এবং প্রভাবশালী ব্যক্তি তিনি। ইজরায়েল (Israel) বা আমেরিকার (America) পক্ষে তাঁকে সরাসরি আঘাত করা বা হত্যা করা প্রায় অসম্ভব। তার জন্য ৭টি গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। নিচে ইরানের সর্বোচ্চ নেতার নিরাপত্তা ও অপ্রতিরোধ্যতার প্রধান কারণগুলো তুলে ধরা হল।
প্রথমত, খামেনেই (Khamenei) সর্বদা অত্যন্ত গোপন ও সুরক্ষিত স্থানে থাকেন। তার বাসস্থান, অফিস এবং যাতায়াতের রুট সবই সেনাবাহিনীর (বিশেষত রেভল্যুশনারি গার্ড – IRGC) নিয়ন্ত্রণে থাকে। সাধারণভাবে তিনি একাধিক “ডিকয়” ব্যবহারের মাধ্যমে নিজের চলাচল গোপন রাখেন। কখন কোথায় থাকবেন তা প্রায় কেউ জানে না। দ্বিতীয়ত, খামেনেইয়ের ব্যক্তিগত সুরক্ষার দায়িত্বে রয়েছে সশস্ত্র রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (IRGC) — যারা ইরানে একটি স্বাধীন সামরিক শক্তি হিসেবেই কাজ করে। IRGC Intelligence এবং Quds Force বিদেশি গোয়েন্দা ও হামলার আশঙ্কা রুখতে সর্বদা প্রস্তুত থাকে। তৃতীয়ত, ইরানের অত্যন্ত দক্ষ সাইবার গোয়েন্দারা ইজরায়েলি-মার্কিন ড্রোন বা গুপ্তচর পরিকল্পনা শনাক্ত করেছিল। ২০২০ সালে সোলেমানিকে হত্যার পর থেকে খামেনেইয়ের সুরক্ষা বহুগুণে বাড়ানো হয়েছিল।
আরও পড়ুন : সিরিয়ার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলেন ট্রাম্প
চতুর্থ, হিজবুল্লাহ, হুথি, হামাস, পিএমইউর মতো ইরানপন্থী বহু গোষ্ঠী খামেনেইয়ের প্রতি বিশ্বস্ত। খামেনেই’র ওপর হামলা হলে মধ্যপ্রাচ্যে একযোগে ভয়ঙ্কর প্রতিশোধ নিতে পারে এই গোষ্ঠীগুলি। মার্কিন ও ইজরায়েলি গোয়েন্দারা জানে, খামেনেইকে আঘাত মানেই বিশাল প্রতিশোধমূলক যুদ্ধ। পঞ্চম, খামেনেইকে হত্যা করলে সেটি হবে সরাসরি একটি দেশের সর্বোচ্চ নেতাকে হত্যার ঘটনা, যা আন্তর্জাতিকভাবে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস হিসেবে বিবেচিত হবে। এতে ইরান বৈধভাবে পরমাণু প্রতিশোধ বা বিশ্বব্যাপী হামলার যুক্তি পেয়ে যাবে — যা আমেরিকা বা ইজরায়েলের জন্য আত্মঘাতী হবে।
ষষ্ঠ, খামেনেই কেবল একজন রাজনৈতিক নেতা নন, বরং তিনি একজন শিয়া মুসলমানদের ধর্মীয় নেতা (মারজায়ে তাকলিদ)। তাকে হত্যা করলে কোটি কোটি শিয়াদের মধ্যে বিদ্বেষ ও যুদ্ধের আগুন জ্বলে উঠবে, যা মধ্যপ্রাচ্যে আগুনের গোলা হয়ে যাবে। সপ্তম, ইজরায়েল বহুবার বিভিন্ন ইরানি বিজ্ঞানী বা জেনারেলকে হত্যা করলেও খামেনেইয়ের বিরুদ্ধে সরাসরি হামলা চালাতে পারেনি। কারণ তার চারপাশের নিরাপত্তা বলয় এতটাই শক্তিশালী যে হামলা সফল হওয়া প্রায় অসম্ভব।
খামেনেই একটি চলমান প্রতিরক্ষা দুর্গের মতো। তাকে হত্যা করার চেষ্টা মানে একটি ভয়ঙ্কর যুদ্ধের সূত্রপাত হতে পারে, যেটা কেউই চায় না। না ইজরায়েল, না আমেরিকা। তবে অন্যদিকে ইরানের হাতে যাতে পরমাণু অস্ত্র না আসে সে দিকেও নজর থাকবে ইজরায়েল (Israel) ও আমেরিকার (America)।
দেখুন অন্য খবর :