কলকাতা: একই মূদ্রার দুই পিঠ হচ্ছে তৃণমূল এবং বিজেপি। এই তত্ত্ব থেকেই জন্ম নিয়েছিল বিজেমূল। যা নিয়ে বিধানসভা নির্বাচনের আগে প্রচার শুরু করেছিল বামেরা। সেই তত্ত্বকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে তৃণমূলকে রাজ্য শাসনের দায়িত্ব দিয়েছে বামেরা। আর বিরোধী আসনে বসিয়েছে বিজেপিকে। বিধানসভায় একটি আসন জোটেনি বামেদের। জোট শরিক কংগ্রেসেরও একই অবস্থা।
আরও পড়ুন- ‘আপনার অযোগ্য নেতৃত্বের ফল ভুগছে বিজেপি যুব মোর্চা’, সৌমিত্রকে নিয়ে দলকে খোলা চিঠি
সেই বিজেমূল তত্ত্ব নিয়েই এখন বিভাজন তৈরি হয়েছে বামেদের অন্দরে। আগে সিপিআই-এর সাধারণ সম্পাদক স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন যে ‘বিজেমূ’ তত্ত্ব ভুল ছিল। প্রায় সেই একই সুর এবার শোনা গেল সিপিএম নেতাদের গলায়। যদিও সরাসরি ভূল স্বীকার না করে তাঁদের বক্তব্য, “তৃণমূল এবং বিজেপি এক নয়।”
আরও পড়ুন- পুজোর ভিড়ে সংক্রমণ আটকাতে এবারও থাকবে কোভিড বিধিনিষেধ
চলতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার ছিল সিপিএম-র কাকাবাবু মুজফফর আহমেদের ১৩৩ তম জন্মদিন। এই বিশেষ দিনে দলের দুর্দশা নিয়ে মুখ খুলেছেন শীর্ষস্তরের নেতারা। আর সেই আলচনার মাঝেই উঠে এসেছে বিজেমূল তত্ত্ব। সিপিএম নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, “নির্বাচনী ফলাফলে বিপর্যয় হয়েছে। এই দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারি না। আত্মসমীক্ষা, আত্মসমালোচনার প্রয়োজন রয়েছে। ভুল করলেও তা থেকে শিক্ষা নিয়েই এগোতে হবে।”
আরও পড়ুন- পাক পঞ্জাবে ভেঙে দেওয়া গণেশ মন্দির তৈরি করে দেবে ইমরান খানের সরকার
একই সঙ্গে সূর্যবাবু আরও বলেছেন, “মানুষ বিকল্প চাইছেন। বিধানসভায় বামেরা নেই। বিকল্পের আস্থা অর্জন করতে হবে। লড়াইটা কঠিন। ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।” বিজেমূল তত্ত্ব নিয়ে তাঁর ব্যাখ্যা, “বিজেপি আর তৃণমূলকে কখনোই এক করে দেখিনি। আঞ্চলিক দলগুলোর নিজস্ব চরিত্র এবং বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তৃণমূল আর বিজেপি পরস্পরের বিরুদ্ধে নির্বাচনে লড়াই করেছে। বোঝাপড়া করেনি।”
আরও পড়ুন- বন্যায় জল থইথই, নৌকা করে শ্বশুরবাড়ি চললেন নববধূ
বিজেপিকে রুখতে সকল প্রকারের প্রয়াস জারি রেখেছিল বামেরা। তবে বঙ্গবাসী বামেদের বিজেপির বিকল্প মনে করেনি। সেই স্থান দিয়েছে তৃণমূলকে। কিন্তু সূর্যকান্ত মিশ্রের দাবি তৃণমূলকে দিয়ে বিজেপিকে আটকানো যাবে না। তাঁর কথায়, “তৃণমূলকে দিয়ে বিজেপিকে আটকানো যাবে না। যারা মনে করছেন, তারা বিজেপির সুবিধা করতে দিচ্ছেন। মতাদর্শ দিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।”
বিজেমূল নিয়ে মুখ খুলেছেন প্রবীণ সিপিএম নেতা তথা প্রাক্তন সাংসদ মহম্মদ সেলিম। তিনিও তৃণমূল এবং বিজেপিকে এক আসনে বসাতে । তাঁর সাফাই, “এক সময়ে কংশাল বলা হতো। কিন্তু তার মানে কংগ্রেস আর নকশাল এক নয়, আলাদা-আলাদা। ঠিক তেমনই বিজেমূল মানে বিজেপি আর তৃণমূল এক নয়। তারাও আলাদা।”
আরও পড়ুন- দলীয় সাংসদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া ব্যক্তিকে দলে স্বাগত জানাল বিজেপি
বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর মুখে অবশ্য এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য শোনা যায়নি। তিনি ঘুরে দাঁড়ানোর পক্ষে সওয়াল করেছেন। দলকে শক্তিশালী করতে দিয়েছেন দাওয়াই। তাঁর মতে, “সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সচেতনতা জরুরি। ২০২১ নির্বাচনের ফলাফল ভয়ঙ্কর খারাপ হয়েছে। ঘরে বসে থাকলে চলবে না। যার যে দায়িত্ব আছে তা সুষ্ঠুভাবে পালন করতে হবে। দলের সর্বক্ষণের কর্মীর সংখ্যা বাড়াতে হবে। পার্টির কর্মীদের ভাতা দিতে হবে।”
আরও পড়ুন- অসুস্থ বৃদ্ধা মাকে প্লাস্টিকে মুড়ে রাস্তায় ফেলে পালাল ছেলেমেয়েরা
জন্মদিনে কাকাবাবুর মতাদর্শ মেনে চলার পক্ষেও সওয়াল করেছেন বিমান বসু। তাঁর কথায়, “সত্যিকারের কঠিন সময়ে মুজফফর আহমেদের কথা মনে করে চলতে হবে। নতুন প্রজন্মের তরুণ-তরুণীদের থেকে দলের সর্বক্ষণের কর্মী বাছাই করতে হবে। দলের কর্মীদের দলকে সময় দিতে হবে।” নির্বাচনের ফলাফল ইতিমধ্যে বিশ্লেষণ করা হয়েছে এবং কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে মত বিনিময় হবে বলে জানিয়েছেন সিপিএম নেতারা।