‘ইটস ব্রোঞ্জ, উই মেড ইট’| দীর্ঘ হতাশা, ব্যর্থতার সঙ্গে লড়াই শেষ, অবশেষে সেই কাঙ্খিত মুহূর্ত| ম্যাচ শেষে সতীর্থদের উদ্দেশ্যে তাই গলা ফাটিয়ে চিত্কার অধিনায়কের| তারা যে পেরেছে, সেই বার্তাই তখন মনপ্রীতের গলায়|
হাড্ডহাড্ডি লড়াই| পিছিয়ে থেকে ম্যাচে কামব্যাক| এক অবিশ্বাস্য লড়াই জিতে দীর্ঘ ৪১ বছরের অপেক্ষার অবসান টোকিওর মাটিতে| জার্মানিকে ৫-৪ গোলে হারিয়ে অলিম্পিক হকিতে ব্রোঞ্জ জয় ভারতের| এরপরই আর চোখের জলট ধরে রাখতে পারলেন না মনপ্রীত, সৃজেশরা| হয়ত কাঁদল গোটা ভারতও| তবে দুঃখে নয়, তা ছিল শাপমোচনের আনন্দাশ্রু|
ভারতীয় সময় ভোর সাতটা| টোকিওর হকি ফিল্ডে ভারতীয় দল| আর গোটা ভারতবাসীর চোখে তখন পদক জয়ের আশা| ভারত পারবে তো, একটাই প্রশ্ন তখন সকলের মনে|
খেলা শুরুর প্রথম কোয়ার্টারের কিছুক্ষণের মধ্যেই এগিয়ে যায় জার্মানি| তবে দ্বিতীয় কোয়ার্টারে নেমেই সিমরজিতের গোলে সমতায় ফেরে ভারত| যদিও সেই স্বস্তি ছিল কিছুক্ষণের জন্য| ৮ মিনিটের মধ্যে দু গোল দিয়ে ৩-১-এ এগিয়ে যায় জার্মানি|
তবে কি এবারও পদক আসবে না| এত কাছে গিয়েও শূন্য হাতেই ফিরতে হবে ভারতকে| আশঙ্কার কালো মেঘ যেন তখন ভারতীয় শিবিরকে ঘিরে| কিন্তু মনপ্রীতদের এই নতুন টিম ইন্ডিয়া যে হারার আগে হার মানবে না, সেই মনোভাবের পরিচয় সকলে পেল কিছুক্ষণের মধ্যেই|
২৭ মিনিটে পেনাল্টি কর্ণার| সিমরণজিতের দ্বিতীয় গোল| ব্যবধান কমায় ভারত| শেষ মুহূর্তে ফের ভারতের আক্রমণ| আবারও পেনাল্টি কর্ণার| ভারতকে সমতায় ফেরালেন হরমনপ্রীত| ফের পদকের আশা তখন সকলের চোখে মুখে| ভারতীয় শিবিরের নাছোড় মনোভাব তখন জাত্যভিমান জার্মানির ওপরও প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে দিয়েছে|
এই ভারতকে আটকানো যে অত সহজ নয়, তা তৃতীয় কোয়ার্টারেই স্পষ্ট করে দিলেন রুপীন্দর, হার্দিকরা| ৩১ মিনিটে পেনাল্টি থেকে রুপীন্দর পালসিংয়ের গোল| ৩ মিনিটের মদ্যে ফের গোল হার্দিক সিংয়ের| ৪১ বছরের শাপমোচনের জন্য তখন আর ২৬ মিনিটের অপেক্ষা|
গোল বাড়ানোর সুযোগ অবশ্য সেই কোয়ার্টারেই আরও বেশ কয়েকটা এসেছিল| যদিও তা কাজে লাগাতে পারেনি ভারত| শেষ কোয়ার্টারে লড়াইটা আরও কঠিন| জার্মানি ব্যবধামন কমালেও আর শেষরক্ষা হয়নি| ফাইনাল হুটার বেজে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই মাঠে শুরু বিজয়োল্লাস|
সেই ১৯৮০ সালের পর থেকে অলিম্পিকে ভারতীয় হকি দলের পদকের ভাঁড়ার শূন্য| সেবার স্পেনকে ৪-৩ গোলে হারিয়ে সোনা জিতেছিল ভারত| এবারের লড়াইটা ছিল ব্রোঞ্জের| শক্তিশালী জার্মানিকে হারিয়ে শেষপর্যন্ত পদকের খরা কাটল| ১৯৭৬ সালে মিউনিখ অলিম্পিকে শেষবার ব্রোঞ্জ জিতেছিল ভারত|
সমস্ত সমালোচনা, হতাশার জবাবটাই হয়ত এই জার্মানি ম্যাচটা ছিল| জয়ের পরই মাঠে শুরু চক দে ইন্ডিয়ার গান| আর হার্দিক, সৃজেশ এবং মনপ্রীতরা মেতে পদক জয়ের আনন্দে| হুটার বাজার পর কাঁদতে কাঁদতে মাঠেই শুরু পড়লেন ভারত অধিনায়ক| চোখের জলকে বাঁধ মানাতে পারেননি বাকি সতীর্থরাও| গোটা ভারতবর্ষেও তখন যেন উত্্সবের চেহারা|
হবে নাই বা কেন ৪১ বছর পর পোডিয়ামে যে ফের দেখা যাবে ভারতীয় পতাকা| ব্রোঞ্জ হলেও ধ্যানচাঁদের উত্তরসূরীরা ফের উঠবেন পোডিয়ামে| শাপমোচনের পাশাপাশি ভারতের পঞ্চম পদকও চলে এল এদিনই|