ওয়েবডেস্ক- বন্যাপ্রবণ (Flood-Prone) বাংলাদেশ (Bangladesh) । চারদিকে নদী বেষ্টিত বাংলাদেশে বন্যার কারণে সব সময় ঝুঁকিতে থাকে দেশটি। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার কথা মাথায় রেখে চালু হয়েছে সৌরশক্তিচালিত ভাসমান শ্রেণীকক্ষ (Solar-Powered floating classroom) । এই শ্রেণীকক্ষগুলি সপ্তাহে ছয়দিন নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলিতে পরিদর্শন করে। রাস্তাঘাট বন্ধ থাকা সত্ত্বেও পড়াশোনা অব্যাহত থাকে শিক্ষার্থীদের। ১০ বছর বয়সী সফিকুল ইসলামের মতো শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে। আর বজায় থাকে বন্ধুত্বও। বৃষ্টি বা বন্যার কারণে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা না হওয়ার অপূর্ণতাও মিটিয়ে দিয়েছে সৌরশক্তিচালিত ভাসমান শ্রেণীকক্ষ। ৬ দিনই ক্লাস হয়। নৌকার মধ্যে চলে পাঠদান। কখন সেই নৌকা ঘাটে ভিড়বে তার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে কচিকাঁচাদের মন।
ছাত্র সফিকুল ইসলাম জানিয়েছে, আমার এক এক বন্ধু এক এক জায়গায় থাকে, ফলে এই স্কুল না থাকলে আমি ওদের সঙ্গে দেখা করতে পারতাম না। ওদের সঙ্গে দেখা হলে ভালো লাগে।
২০০২ সালে এই প্রকল্প শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য আনা হয়। এখনও পর্যন্ত প্রায় ২২ হাজার শিক্ষার্থী এই স্কুলে পড়াশোনার মাধ্যমে উপকার পেয়েছে। সন্তানদের শিক্ষার উন্নতির জন্য সুফিয়া খাতুনের মতো আরও অনেক মা এই ভাবে আশার আলো দেখেছেন।
বন্যাপ্রবণ অঞ্চলে শিশুদের নিয়মিত স্কুলে পড়াশোনার ব্যবস্থা করায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতি খুশি অভিভাবকেরা। নৌকাগুলি স্বাস্থ্য ক্লিনিক হিসেবেও কাজ করে এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য অর্থ, কৃষি এবং স্বাস্থ্যবিধির মতো ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ প্রদান করে। নাইজেরিয়া, কম্বোডিয়া ও ফিলিপিন্সের পর বাংলাদেশেও সৌরশক্তিচালিত ভাসমান শ্রেণীকক্ষ মানুষকে ভরসা জুগিয়েছে।
আরও পড়ুন- হাতে নেই আঙুল, তাও জীবনযুদ্ধ জারি! অবাক করবে এই তরুণের গল্প
উল্লেখ্য, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বন্যার ঝুঁকি বেড়েছে বাংলাদেশে। প্রতি বছর বর্ষাকালে বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ বন্যা হয়। যা দেশের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। চরম ভোগান্তিতে পড়ে মানুষ। সব থেকে সমস্যায় পড়ে কচি কাঁচারা। রাস্তাঘাট জলবন্দি থাকার কারণে স্কুলগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়। স্কুলে আসতে পারে না পড়ুয়ারা, দেখা হয় না বন্ধুদের সঙ্গে, ফলে মনমরা বিষণ্ণতা গ্রাস করে। শিশুমনে প্রভাব পড়ে।
এই সময়ের কথা চিন্তা করেই সৌরশক্তিচালিত ভাসমান শ্রেণীকক্ষ। সব থেকে বড় কথা দীর্ঘ দূরত্বে স্কুলে হেঁটে যাওয়ার ক্ষেত্রে সন্তানদের নিয়ে চিন্তিত থাকে অভিভাবকেরা। ফলে এই সৌরশক্তিচালিত ভাসমান শ্রেণীকক্ষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।
এই স্কুলগুলিতে লাইব্রেরি, স্বাস্থ্য ক্লিনিক, সৌর কর্মশালা রয়েছে। সৌরশক্তিচালিত ভাসমান স্কুল, যা স্কুল বাস হিসেবে কাজ করে। কারণ বিভিন্ন নদীতীরবর্তী গ্রাম থেকে শিক্ষার্থীদের সংগ্রহ করে এটি শেষ গন্তব্যে পৌঁছায়, তখন নৌকায় ক্লাস শুরু হয়। এই প্রকল্পটি শিশুদের জন্য বছরব্যাপী স্কুলে পড়াশোনা নিশ্চিত করেছে ফলে স্কুল ছুটের সংখ্যাও কমেছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে আলোর দিশা দেখিয়েছে সৌরশক্তিচালিত ভাসমান শ্রেণীকক্ষ।
২০০২ সালে প্রথম স্কুল-বোট তৈরি করা হয়েছিল। তারপর থেকে এই প্রকল্প ক্রমবর্ধমান স্বীকৃতির সঙ্গে এগিয়ে চলেছে।
পরিবেশগত শিক্ষার ফলে, কৃষকরা কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়েছেন, যার ফলে মাছ মারার হার কমেছে। নদীতে অবৈধ মাছ ধরাও কমে গেছে, যা বিপন্ন মাছকে রক্ষা করে। সৌরশক্তিচালিত ভাসমান শ্রেণীকক্ষ পরিবেশের ভারসাম্যও রক্ষা করে চলেছে।
দেখুন আরও খবর-