করণদিঘী: বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব শেষ। তিথি অনুযায়ী, দশমীতে ভারাক্রান্ত মনে বিদায় জানাতে হয়েছে উমাকে। কিন্তু উত্তর দিনাজপুরের করণদিঘী ব্লকের সিঙ্গারদহ গ্রামে,যেন পুজো শেষ হয়েও হল না। এখানে প্রতি বছর দুর্গাপূজার ঠিক আট দিন পর (লক্ষ্মীপুজোর পর) ফের শুরু হয় দেবী দুর্গার আরাধনা। জানা গিয়েছে, এই বিশেষ পুজোটি স্থানীয়দের কাছে সোনামতি কুম্ভরাণী নামে পরিচিত।
শতাব্দীপ্রাচীন এই পুজোর ইতিহাস অনেকের কাছেই আজও অজানা। তবে স্থানীয়রা বলেন, সিঙ্গারদহ গ্রামের এই পুজোটি প্রায় দু’শো বছরের পুরোনো। এই পুজো প্রচলিত হওয়ার পিছনে রয়েছে এক লোকগাথা। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, একসময় এই গ্রামের সোনামতি নামের এক বধূ ছিলেন। দেবীর প্রতি তাঁর ছিল অগাধ ভক্তি। একবার দুর্গাপূজার পর সোনামতি গ্রামের অন্য বধূদের সঙ্গে মেলায় ঘুরতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন। তিনি যখন সাজগোজে ব্যস্ত, তখন তাঁর বন্ধুরা ঘরে ঢুকে দেখেন, সোনামতির জায়গায় স্বয়ং দেবী দুর্গা দাঁড়িয়ে আছেন। সেই থেকে বিশ্বাস, দেবী দুর্গা নিজেই সোনামতির রূপে আবির্ভূত হন। সেই অলৌকিক ঘটনাকে স্মরণ করেই দেবী দুর্গা এখানে সোনামতি কুম্ভরাণী রূপে পূজিত হন।
আরও পড়ুন: মুক্তির কৃপাতেই ঝড়ঝাপটা থেকে মিলবে ‘মুক্তি’, সুন্দরবনের ঘরে জাপানি প্রযুক্তির ছোঁয়া
এই পুজোর বিশেষ রীতিনীতি ও আয়োজন করে থাকেন গ্রামবাসীরা। এই পুজোটি সাধারণত দুর্গাপূজার আট দিনের পরের মঙ্গলবারে অনুষ্ঠিত হয়। এটি একদিনের পুজো হলেও এর আকর্ষণ ও আয়োজন হয় বিশাল। স্থানীয়দের মতে, প্রায় ৫০ বিঘা জমির আয় থেকে ঐতিহ্য মেনে এই পুজো অনুষ্ঠিত হয়।
ভক্তদের সমাগমও হয় চোখে পড়ার মত। এই পুজোকে ঘিরে সিঙ্গারদহ গ্রামে ৭ দিন ধরে মেলা বসে। উত্তর দিনাজপুর জেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী বিহার, দক্ষিণ দিনাজপুর, কোচবিহার এবং জলপাইগুড়ি থেকেও হাজার হাজার মানুষ এই পুজো দেখতে আসেন। দীর্ঘ শতাব্দী ধরে চলে আসা এই পুজো শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি সিঙ্গারদহ গ্রামের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতীক, যা আজও স্থানীয়দের কাছে এক বিশেষ আবেগ এবং ভক্তির জায়গা দখল করে আছে।
দেখুন খবর: