কাকদ্বীপ: ১৪১ বছরে পড়ল কাকদ্বীপের মাইতি পরিবারের দুর্গোৎসব। ১৮৮৫ সালের সেই ব্রাহ্মণের দেওয়া ফর্দ দিয়েই আজও নিয়ম মেনে চলে পুজো। কাকদ্বীপের মাইতি পরিবারের দুর্গোৎসবের ছত্রে ছত্রে লুকিয়ে রয়েছে বহু পৌরাণিক ইতিহাস। আজও তা বয়ে নিয়ে চলেছে এই পরিবারের চার শরিক।
জানা গিয়েছে, ১৮৮৫ সালে অবিভক্ত মেদিনীপুরের দেউলপোতা এলাকায় এই পুজো শুরু করেছিলেন নন্দলাল মাইতি। তাঁর নিজের জমিতে পুজো করার জন্য দেবী তাঁকে স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন। এমনকি সেখানকার ব্রাহ্মণ ও পটিদারকেও দেবী স্বপ্নাদেশে এই পুজোর বিষয়ে জানিয়েছিলেন। কোন স্থানে পুজো করা হবে দেবী নিজেই বেলপাতা, আমশাখা ও সিঁদুর রেখে চিহ্ন বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। সেই সময় থেকেই এই পুজো শুরু হয়েছিল। কিন্তু নন্দলাল বাবুর প্রয়াণের প্রায় ৩০ বছর পর তাঁর চার সন্তান কর্মসূত্রে কাকদ্বীপের গণেশনগরে চলে আসেন। তখন থেকে এখানেই সেই প্রথম বামুন ঠাকুরে দেওয়া ফর্দ মেনে পুজোর আয়োজন করা হয়। আজও সেই পুজো মাইতি পরিবারের সদস্যরা মহাসমারোহে পালন করে থাকেন।
আরও পড়ুন: দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের আদলে নদিয়ার তাহেরপুরে চোখধাঁধানো মণ্ডপ
এবিষয়ে মাইতি পরিবারের বংশধর শরদিন্দু মাইতি বলেন, “দেবী প্রপিতামহকে মূর্তি তৈরি করে পুজো করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই নির্দেশ মেনে প্রতিবছরই মূর্তি তৈরি করে দেবীর আরাধনা করা হয়। এছাড়াও প্রথম বছর পুজোর জন্য ব্রাহ্মণ যে ফর্দ তৈরি করেছিলেন, সেই ফর্দ অনুসারে আজও পুজো করা হয়। এখন চারিদিকেই পুজো হচ্ছে। তাই এখানকার পুজোর আড়ম্বর কমলেও, জৌলুস রয়েছে।”
নন্দলাল বাবুর মধ্যম পুত্র প্রয়াত আশুতোষ মাইতির নাতি ধৃতিব্রত মাইতি বলেন, “আমাদের পরিবারের কেউ কোনদিন বাইরের দুর্গাপুজো দেখেননি। কারণ পুজোর ছয় দিনই সবাই খুব ব্যস্ত থাকেন। ছোটবেলায় দেখেছি দুর্গোৎসবের সময় বাড়ির বারান্দায় খড় দিয়ে আট চালা মণ্ডপ তৈরি করা হতো। প্রতিবেশীরা সবাই সাহায্য করতেন। কিন্তু এখন তা আর সম্ভব হয় না। তবে অতীতের সব রীতিনীতি মেনেই আজও পুজো করা হয়। পুজো শুরুর প্রথম ব্রাহ্মণের বংশধর আজও আমাদের পুজো করে থাকেন। এমনকি প্রথম বছরের প্রতিমা তৈরির পটিদারের বংশধর আমাদের প্রতিমা তৈরি করেন। পরিবারের সবার বিশ্বাস রয়েছে আমাদের মাটির প্রতিমা খুবই জাগ্রত।”
দেখুন খবর: