দেশ আক্রান্ত, দেশ যুদ্ধ লড়ছে, দেশের জওয়ানরা যুদ্ধ লড়ছে, হাজার একটা সংশয় প্রশ্নকে পাশে সরিয়ে রেখে দেশের মানুষ সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছে, এক সুরে কথা বলেছে। আমাদের রাজ্য বাংলাও তার ব্যতিক্রম নয়, ২২ এপ্রিল থেকে ১০ তারিখ যুদ্ধ বিরতির সময়ে এমনকী আগমার্কা আগুনখেকো বামপন্থী বলে যাঁদের স্ট্যাম্প মারা হয়, তাঁরাও কেউ মিছিল করেননি, এক ধরনের সমর্থন তো ছিলই, এবং সরকারের তরফে মুখ্যমন্ত্রী সাফ জানিয়েছেন, রাজ্যের সরকার তৃণমূল দল দেশের এই সঙ্কটে দেশের সরকারের পাশে আছে, আমাদের দেশের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে কোনও প্রশ্ন তোলেননি। যুদ্ধ শেষ হয়েছে, তখন কিছু বাম সংগঠন রাস্তায় নেমেছেন শান্তি চাই দাবি নিয়ে, বেশ করেছেন, সেটা তাঁদের রাজনৈতিক অবস্থান। কিন্তু তৃণমূল তখনও জানিয়েছে রাজনীতির কথা ছেড়েই সেনা জওয়ানদের এই বীরত্বের কথা, শৌর্যের কথা নিয়ে মানুষের কাছে চলুন, পাড়ায় পাড়ায় জাতীয় পতাকা নিয়ে মিছিল হচ্ছে। এবং যুদ্ধবিরতির এক পাকাপাকি চেহারা আসার পরে বিভিন্ন মহল থেকে হাজারো প্রশ্ন এসে হাজির। স্বাভাবিক, দেশ, দেশের মানুষ তো জানতে চায়, হয়েছিলটা কী? কোন তথ্যের ভিত্তিতে যুদ্ধ হল? কোন তথ্যের ভিত্তিতে যুদ্ধবিরতি হল? কে যুদ্ধ বিরতি করাল, কারণ ওধারে ট্রাম্প সাহেব সমানে সেই কথা বলেই যাচ্ছেন, আর মোদিজি কিছুই বলছেন না। কিন্তু তখনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কোনও প্রশ্ন করেননি বা তৃণমূল দলের তরফে কোনও প্রশ্ন তোলা হয়নি। হঠাৎই জানা গেল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভারতের অবস্থান, পাকিস্তানের চোরাগোপ্তা আক্রমণ ইত্যাদির কথা তুলে ধরার জন্য সরকার কিছু সাংসদদের সেই সব দেশে পাঠাবে, একে পলিটিক্যাল লবিইং বলে, তো ভালো কথা। এবারে সেই সরকার নিজেরাই কোনও আলোচনা না করেই বিভিন্ন দলের কোন সাংসদেরা যাবেন, তার তালিকা বার করে দিল। হ্যাঁ এইবারে রুখে দাঁড়ালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জানিয়ে দিলেন এটা সরকার করতে পারে না, সাধারণ সৌজন্য বোধ থাকলে এই কাজ কেউ করতে পারে না। সেটাই বিষয় আজকে, হ্যাঁ অনেকের মধ্যে মমতাই আবার রুখে দাঁড়ালেন।
সরকার নাম ঠিক করে দেওয়ার পরে সিপিএম মেনে নিয়েছে, কংগ্রেসের তরফে আপত্তির কথা শোনা গেছে, অন্য দলগুলো ভাবছে কী করা যায়? মমতা সাফ জানিয়ে দিলেন, না, এটা দলের পেরোগেটিভ, দল কাকে কোন কাজে পাঠাবে, কার কোথায় যাওয়া উচিত সেটা দল ঠিক করবেন মোদিজি নয়। গত ২৫ নভেম্বর ২০২৪, আমাদের চায়ওলা কাম চৌকিদার নরেন্দ্র মোদি সাংবাদিকদের জানালেন, বিরোধীরা হল এক ধরনের গুন্ডা বদমাস, হুলিগান, যাঁরা সংসদ চালাতে দেন না।
আরও পড়ুন: Aajke | ২০২৬ বাংলার নির্বাচনে বিজেপির ভোট কেন আরও কমবে
২৯ নভেম্বর ২০২৪ ভুবনেশ্বরে বিজেপির কর্মিসভাতে বললেন, বিরোধীরা দেশকে তাদের বাপের জমিদারি বলে ভাবে, তারা দেশের মানুষকে ভুল বোঝায়। অগাস্ট ১৫, ২০২৪, দিল্লির লালকেল্লা থেকে ভাষণে বললেন, বিরোধীরা দেশের এই উন্নয়ন সহ্য করতে পারছে না। এপ্রিল ১২, ২০২৫-এ বেনারসে পাবলিক র্যালিতে বললেন, বিরোধীরা কেবল কুর্সি দখলের রাজনীতি বোঝে, নিজেদের আখের গোছায়। এপ্রিল ১৬ ২০২৫ বালাঘাট মধ্যপ্রদেশে এক পাবলিক র্যালিতে তিনি বললেন, মোদি তার প্রতিশ্রুতি রাখে আর বিরোধীরা পাকিস্তানের সুরে কথা বলে। সেই মোদিজি, সেই মোদিজির সরকার এখন সারা পৃথিবীতে দেশের কথা তুলে ধরার জন্য বিজেপির নেতা মন্ত্রীদের সঙ্গে সঙ্গে দেশের বিরোধী দলের নেতাদেরও পাঠাবে। কী কাণ্ড। ৮৬০০ কোটি টাকার বিমানে চড়ে পৃথিবীর সব দেশ ঘুরে এক যুদ্ধের সময়ে পাশে কেউ নেই, প্রতিবেশী তো ছেড়েই দিন, দুনিয়ার একটা দেশও নেই, আর তখন তাঁর মনে পড়েছে দেশের বিরোধীদের কথা যারা নাকি কেবল নিজেদের আখের গোছায়, যারা নাকি কেবল পরিবারের কথা ভাবে, যারা নাকি বদমাস গুন্ডা, যারা নাকি পাকিস্তানের সুরে কথা বলে। বেশ তো ঠেলায় পড়লে বাপের নাম তো অনেকেই করে, কিন্তু মোদিজি ঠিক করে দেবেন তৃণমূলের কোন সাংসদ, কংগ্রেসের কোন সাংসদ যাবে? সাধারণ সৌজন্যের বশেও রাজনৈতিক দলগুলোকে বলা উচিত আপনাদের কে যাবেন আপনারা জানান, এখানে সেসবের তোয়াক্কাও না করে তৃণমূল দলের ইউসুফ পাঠানকে পাঠানো হবে বলে সরকার জানিয়ে দিল। আর হ্যাঁ, ঠিক এইখানেই মমতা ব্যানার্জি রুখে দাঁড়িয়েছেন, সাফ জানিয়ে দিয়েছেন এই অপমান সহ্য করবেন না, পাঠান জানিয়ে দিয়েছেন তিনি যাচ্ছেন না। হ্যাঁ, সব্বাই যখন মিনমিন করছে বা মেনে নিচ্ছে, অমন আগুনখেকো বাম সিপিএম মেনে নিল, সেই জায়গাতে দাঁড়িয়ে সঠিকভাবেই মমতা রুখে দাঁড়ালেন। আমরা আমাদের দর্শকদের জিজ্ঞেস করেছিলাম যে প্রথমত দেশের প্রধানমন্ত্রী মনে করেন যে দেশের বিরোধী দলের নেতারা পাকিস্তানের সুরে কথা বলে, তারপরে তাদেরকে বিশ্বের মানুষজনের কাছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের অবস্থানের কথা জানাতে বিরোধী দলের নেতাদের পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। তারপরে সেই বিরোধী দলের কারা যাবে, সেটাও ওই মোদিজিই ঠিক করে দিচ্ছেন, সেটা মেনে নেননি আমাদের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি কি সঠিক কাজই করেছেন? আপনাদের কী মনে হয়? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দের মতো মোদিজি বুঝতে পারছেন তাঁর ৮৬০০ কোটি টাকার প্লেন কিনে সারা বিশ্বে ঘুরে বেড়ানোই সার, বিশ্বগুরু তো ছেড়েই দিলাম, এতবড় সঙ্কটের সময়ে একটা দেশ ভারতের পাশে এসে দাঁড়াল না অথচ চীনের পাশে খোলাখুলি এসে দাঁড়াল আজারবাইজান টার্কি আর চীন? আমাদের কূটনীতি কোন তলানিতে চলে গেছে। মোদিজি বিদেশে যাচ্ছেন, ইন্ডিয়ান ডায়াস্ফোরা চেল্লাচ্ছে মোদি, মোদি মোদি বলে, অথচ এই সঙ্কটে ভারত একলা, আর তখনও মোদিজি নোংরা রাজনীতি চালিয়েই যাচ্ছেন। হ্যাঁ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন, বিরোধীরাও মুখ খোলা শুরু করেছে।