সুভাষচন্দ্র বসু ১৮৯৭ সালের ২৩ জানুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্গত ওড়িশার কটকে এক বিখ্যাত কায়স্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মায়ের নাম প্রভাবতী বসু (দত্ত) ও বাবা জানকীনাথ বসু। সুভাষ ছিলেন তাঁর বাবা ও মায়ের ষষ্ঠ পুত্র। তাঁর বাবা জানকীনাথ ছিলেন একজন সরকারি আইনজীবী। তাঁদের পৈতৃক বাড়ি ছিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার কোদালিয়া যা বর্তমানে সুভাষগ্রামের অন্তর্ভুক্ত।
১৯০২ সালে তিনি তাঁর পাঁচ বড় ভাইয়ের সাথে কটকের প্রোটেস্ট্যান্ট ইউরোপীয় বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত তিনি সেখানেই শিক্ষালাভ করেন। পরবর্তীতে সুভাষকে ১৯০৯ সালে ১২ বছর বয়সে কটকের রাভেনশ কলেজিয়েট বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনি বাংলা ও সংস্কৃত শেখেন। পাশাপাশি বাড়িতে বেদ ও উপনিষদ সম্পর্কেও তিনি শিক্ষালাভ করেন। তিনি ভারতীয় পোশাক পরতে পছন্দ করতেন। তিনি পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ, প্রতিযোগিতা ও পরীক্ষায় সফল হওয়ার ক্ষেত্রে দক্ষতা প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ১৯১২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত ম্যাট্রিক পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন তিনি। ১৯১৩ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হয়ে দর্শনকে অধ্যয়ন বিষয় হিসাবে নির্বাচিত করেন সুভাষ। ক্যান্ট, হেগেল, বের্গসন ও অন্যান্য পাশ্চাত্য দার্শনিকদের সম্পর্কে পড়াশোনাও করেন। বিপ্লব সচেতন দৃষ্টিভঙ্গির কারণে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় ভাল নম্বর পেয়েও তিনি নিয়োগ প্রত্যাখ্যান করেন।
আরও পড়ুন, সংক্ষেপে জেনে নিন স্বামী বিবেকানন্দের জীবনী
সেই সময় অমৃতসর হত্যাকাণ্ড ও ১৯১৯ সালের দমনমূলক রাওলাট আইন, ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের বিক্ষুব্ধ করে তুলেছিল। প্রতিবাদে সুভাষচন্দ্র ‘স্বরাজ’ নামক সংবাদপত্রে লেখেন। পরবর্তীতে তিনি বঙ্গীয় প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির প্রচারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তাঁর রাজনৈতিক গুরু ছিলেন বাংলায় মহান জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ।
সুভাষচন্দ্র ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ হিন্দু (হিন্দুত্ববাদী নন)। কিন্তু আজাদ হিন্দ ফৌজ পরিচালনা ও স্বাধীনতা সংগ্রামের ক্ষেত্রে তিনি সম্পূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ ভাবধারায় সকল ধর্মাবলম্বীদের ঐক্যবদ্ধ করে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দের ভাবাদর্শ তাঁকে অনুপ্রাণিত করেছিল। ছাত্র জীবন থেকে তিনি তাঁর দেশপ্রেমিক সত্তার জন্য পরিচিত ছিলেন।
আরও পড়ুন, সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যুরহস্যের কিনারা আজও হয়নি
সুভাষচন্দ্র বসু ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক চিরস্মরণীয় কিংবদন্তি নেতা। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে তিনি হলেন এক উজ্জ্বল ও মহান চরিত্র। তিনি নেতাজি নামে পরিচিত ছিলেন। তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত উক্তি, “তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব”। তাঁর আরও একটি বিখ্যাত উক্তি হল “দিল্লি চলো” যা তিনি আইএনএ সেনাবাহিনীকে অনুপ্রাণিত করার জন্য বলতেন। জয় হিন্দ তাঁর ব্যবহৃত আরও একটি স্লোগান, যা পরবর্তিতে ভারত সরকার এবং ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী কর্তৃক গৃহীত হয়েছিল। তাঁর উদ্ভাবিত আরও একটি স্লোগান ছিল “ইত্তেহাদ, এতেমাদ, কুরবানী”। এছাড়া আজাদ হিন্দ ফৌজে “ইনকিলাব জিন্দাবাদ” স্লোগানটি ব্যবহার করেছিলেন।
আরও অন্য খবর দেখুন