নয়াদিল্লি: সুপ্রিম কোর্টে গত বৃহস্পতিবার ওয়াকফ মামলার (Waqf Ammendment Act) শুনানি হওয়ার কথা ছিল। ওই দিন শুনানি হয়নি। কেন্দ্রের আর্জিতে শুনানির দিন পিছিয়ে মঙ্গলবার করা হয়। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court) প্রধান বিচারপতি গবই এবং বিচারপতি মাসিহ্র বেঞ্চে সংশোধিত ওয়াকফ আইন সংক্রান্ত মামলার শুনানি শুরু হয়। এদিন মামলার শুনানিতে কেন্দ্র তিনটি বিষয়ের উপর হলফনামা জমা দিয়েছে। বিষয়গুলির উপরেই মামলাকে সীমিত রাখার অনুরোধ করেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। যদিও তাতে আপত্তি জানান মামলাকারী পক্ষের আইনজীবী কপিল সিব্বল, অভিষেক মনু সিঙ্ঘভিরা।
এদিন মামলার শুনানির শুরুতে তিনটি বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত বলে আদালতে জানান, এস জি মেহতা। তিনি বলেন, আদালত কর্তৃক ওয়াকফ হিসাবে ঘোষিত সম্পত্তিগুলিকে ওয়াকফ হিসাবে বাতিল করা উচিত নয়। সেগুলি ওয়াকফ ব্যবহারকারীর দ্বারা হোক বা ওয়াকফ-ডিডের মাধ্যমে হোক। আদালত যখন বিষয়টি নিয়ে বিচার করছে। সংশোধনী আইনের শর্তাবলী, কালেক্টর যখন সম্পত্তিটি সরকারি জমি কিনা তা তদন্ত করছেন, তখন ওয়াকফ সম্পত্তিকে ওয়াকফ হিসেবে গণ্য করা হবে না এবং সেটা কার্যকর হবে না। ওয়াকফ বোর্ড এবং কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিলের সকল সদস্যকে অবশ্যই মুসলিম হতে হবে, পদাধিকারবলে সদস্য ছাড়া। অ্যাডভোকেট সিব্বল মেহেতার এই কথায় আপত্তি জানান। সিব্বল বলেন, আইনটি ওয়াকফ সম্পত্তিকে রক্ষা করার জন্য। কিন্তু ওয়াকফ সম্পত্তিকে দখল করার জন্য আইনটি তৈরি হয়েছে। এই আইনটি এমন ভাবে তৈরি করা হয়েছে যে কোনও রকমের প্রক্রিয়া ছাড়াই সম্পত্তি নিয়ে নেওয়া যায়। তাঁর বক্তব্য, ওয়াকফ সম্পত্তি হল দান করা সম্পত্তি। এটি অন্য কাউকে হস্তান্তর করা যায় না।
ওয়াকফ সংশোধনী আইনে যেমন ওয়াকফ বোর্ডে হিন্দুদের রাখার বন্দোবস্ত করা হয়েছে, তেমন হিন্দুদের মন্দির পরিচালন সংস্থায় কি মুসলিমদের রাখা হবে? এই প্রশ্নও তোলা হয় সুপ্রিম কোর্টে। এর জবাবে তুষার মেহতা বলেন, সুপ্রিম কোর্টের স্থগিতাদেশের ইঙ্গিতের পর, কেন্দ্র ওয়াকফ সংশোধনীতে রাজি। অমুসলিমদের নিয়োগ করবে না, ঘোষিত ওয়াকফের উপর স্থিতাবস্থার পর।
সিব্বল বলেন, সরকার নিজস্ব পদ্ধতি নির্ধারণ করে, যে কেউ তার বিরোধিতা করতে পারে। এটা একটা দিক। দুই, ওয়াকফ কী? এটি আল্লাহর (ঈশ্বরের) প্রতিদান। একবার ওয়াকফে হস্তান্তর করলে তা সর্বদা ওয়াকফই থাকবে। কারণ হল আমাদের সংবিধানের অধীনে, রাষ্ট্র ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলিকে অর্থায়ন করা যায় না। মসজিদ থাকলে রাষ্ট্র অর্থায়ন করতে পারবে না। যদি কবরস্থান থাকে, তাহলে তা ব্যক্তিগত সম্পত্তি দিয়ে তৈরি করতে হবে। তার থেকে কোন আর্থিক উপার্জন নেই, মানুষ তাদের প্রিয়জনদের কবর দিতে আসে। এগুলো দাতব্য প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। প্রধান বিচারপতি বলেন, অন্যান্য মন্দির বা দরগায় যা হয়। সিব্বল জানান, দরগা এবং মসজিদ আলাদা, এই সম্পত্তিগুলি সংরক্ষণের জন্য এটি সম্প্রদায়ের মাধ্যমে হতে হবে। তারা বলে যদি দখলদারিত্ব হয়, তাহলে ওয়াকফের প্রকৃতি বদলে যায়। সিব্বলের বক্তব্য শুনে প্রধান বিচারপতি গবই বলেন, “এমনটা তো মন্দিরেও হয়। আমি দরগায় যাই, সেখানেও এমন হয়।”
আরও পড়ুন: সুপ্রিম কোর্টে ওয়াকফ শুনানি, দেখুন সরাসরি
প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ওয়াকফ সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশনের জন্য কি কোনও বাধ্যবাধকতা আছে? সিব্বল জানান, ছিল, কিন্তু রেজিস্ট্রি না করার জন্য কোন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। প্রধান বিচারপতি আবার জিজ্ঞাসা করেন, রেজিস্ট্রেশন কি বাধ্যতামূলক ছিল? ২০২৫ হল পূর্বের বিষ য়গুলিকে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করা হয়েছে। প্রধান বিচারপতি আবার জিজ্ঞাসা করেন, রেজিস্ট্রেশন কি বাধ্যতামূলক ছিল? সিব্বল বলেন, হতে পারে। রেজিস্ট্রেশন না করলে ওয়াকফের প্রকৃতি পরিবর্তিত হবে। ওয়াকফ হিসাবে বিবেচিত হবে না এই ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হত না।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ২০১৩ সালের আগে ব্যবহারকারীর ওয়াকফ সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশনের হওয়ার প্রয়োজন ছিল না। আদালত বিচার প্রক্রিয়ায় এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে। প্রধান বিচারপতির কথায়, ২০১৩ সালে, ওয়াকফ রেজিস্ট্রেশনের নিয়ম ছিল। কিন্তু অমান্য করার জন্য মুতাওয়ালি অপসারণ ছাড়া আর কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। আদালত এই বিচার প্রক্রিয়ায় এই বিষয়টি নথিভুক্ত করছে। সিবালের কথায়, ওয়াকফ রেজিস্ট্রেশনের জন্য ওয়াকফের চরিত্র পরিবর্তন হবে না। ২০২৫ সালের সংশোধনী আইনে কিন্তু চরিত্র পরিবর্তনের উল্লেখ আছে। নতুন আইনে উল্লেখ আছে যদি ব্যবহারকারীর দ্বারা ওয়াকফ সম্পত্তি থাকে, তাহলে আপনাকে বলতে হবে কে এটি প্রতিষ্ঠা করেছে। প্রধান বিচারপতি, ২০১৩ সালে, ব্যবহারকারীর ওয়াকফের জন্য রেজিস্ট্রেশনের প্রয়োজন ছিল না? সিবাল বলেন, হ্যাঁ, এটিই প্রতিষ্ঠিত নিয়ম। – ব্যবহারকারীর ওয়াকফ সম্পত্তির রেজিস্ট্রেশনের প্রয়োজন নেই । প্রধান বিচারপতি বলেন, ২০১৩ সালের আগে ব্যবহারকারীর ওয়াকফ সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশনের হওয়ার প্রয়োজন ছিল না। আদাল ত বিচার প্রক্রিয়ায় এই বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে।
অন্য খবর দেখুন