ওয়েব ডেস্ক: হীরে ব্যবসায়ী নীরব মোদির (Nirab Modi) জামিনের আবেদন ফের খারিজ করে দিল লন্ডনের হাইকোর্ট। পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের (PNB Scam) ১৩ হাজার কোটি টাকার জালিয়াতি মামলায় অভিযুক্ত নীরব ২০১৯ সাল থেকে যুক্তরাজ্যের জেলে বন্দি। বৃহস্পতিবার তাঁর আইনজীবীরা দীর্ঘদিন কারাবন্দিত্ব ও শারীরিক অবনতি উল্লেখ করে নতুন করে জামিনের আর্জি জানান। কিন্তু বিচারপতি মাইকেল ফোর্ডহ্যাম স্পষ্ট জানিয়ে দেন— নীরব মোদির পলায়নের সম্ভাবনা এখনও রয়েছে এবং তাঁর হাতে যথেষ্ট আর্থিক সামর্থ্য আছে, যা দিয়ে তিনি মামলার সাক্ষীদের প্রভাবিত করতে পারেন।
সিবিআই এক বিবৃতিতে জানায়, লন্ডনের কিংস বেঞ্চ ডিভিশনের হাইকোর্টে নীরব মোদির নতুন জামিনের আবেদন খারিজ করা হয়। ব্রিটিশ ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিস (CPS) তাঁর জামিনের যুক্তিগুলি জোরালোভাবে বিরোধিতা করে। ভারতে নীরব মোদির বিরুদ্ধে তিনটি পৃথক ফৌজদারি মামলা রয়েছে—CBI-র তরফে পিএনবি জালিয়াতির মূল মামলা, অর্থ পাচার সংক্রান্ত ইডির মামলা এবং সাক্ষীদের প্রভাবিত করার অভিযোগে আরেকটি CBI মামলা।
আরও পড়ুন: প্রতিরক্ষা খাতে আরও বরাদ্দ! রণসাজে সজ্জিত হচ্ছে ভারত
২০১৯ সালের ১৯ মার্চ একটি প্রত্যর্পণ পরোয়ানার ভিত্তিতে গ্রেফতার হন নীরব মোদি। এরপর ২০২১ সালের এপ্রিলে যুক্তরাজ্যের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল তাঁর প্রত্যর্পণের নির্দেশ দেন। কিন্তু আইনি জটিলতা কাটিয়ে এখনো ভারতে তাঁকে ফেরানো সম্ভব হয়নি। ইতিমধ্যে তিনি লন্ডনের বিভিন্ন আদালতে অন্তত দশবার জামিনের আবেদন করেছেন, যার মধ্যে ২০২4 সালের মে মাসে ওয়েস্টমিনস্টার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তাঁর শেষ প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়।
এই বছরের শুরুতে লন্ডনের থেমসাইড জেল থেকে ভিডিয়ো লিঙ্কে হাইকোর্টে হাজির হন নীরব। সেখানে তিনি দুবাই-নিবন্ধিত একটি সংস্থার তরফে নেওয়া ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ নিয়ে ভারতীয় ব্যাঙ্কের মামলা স্থগিত রাখার আবেদন জানান। বিচারপতি ডেভিড বেইলি সে সময় মন্তব্য করেন, “একটি গোপন প্রক্রিয়ার ফলাফলের জন্য তাঁকে রিমান্ডে রাখা হয়েছে, যা অন্তত ২০২৬ সালের শেষ পর্যন্ত চলবে।”
নীরব মোদির সঙ্গে এই কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়েছে তাঁর কাকা মেহুল চোকসিরও। সিবিআই জানিয়েছে, বেলজিয়ামে চিকিৎসার সময় মেহুলকে সেখানকার কর্তৃপক্ষ গ্রেফতার করেছে। দু’জনের বিরুদ্ধেই পিএনবির মুম্বইয়ের ব্র্যাডি হাউস শাখার কিছু কর্মকর্তার সহায়তায় জাল লেটার অফ আন্ডারটেকিং (LoU) ও ফরেন লেটার অফ ক্রেডিট (FLC) ব্যবহার করে বিদেশি ব্যাঙ্ক থেকে বিপুল পরিমাণ ঋণ তোলার অভিযোগ রয়েছে। এসব ঋণের দায়ভার শেষমেশ বহন করে পিএনবি, যার ফলে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কটির বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়।
সিবিআই জানায়, এসব LoU-র ভিত্তিতে এসবিআই মরিশাস, এলাহাবাদ ব্যাঙ্ক হংকং, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক হংকং, ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া অ্যান্টওয়ার্প, কানাড়া ব্যাঙ্ক মামানা ও এসবিআই ফ্রাঙ্কফুর্টের মতো বিদেশি ব্যাঙ্ক থেকে অর্থ তোলা হয়। এই অর্থ ঋণগ্রহীতা সংস্থাগুলি ফেরত না দেওয়ায় সুদ-সহ সম্পূর্ণ অর্থ ফেরত দিতে হয় পিএনবিকেই। ফলে এই ‘LoU-প্রচলিত’ প্রতারণার দায়ভার পড়ে ভারতের সাধারণ জনগণের কাঁধেই।
দেখুন আরও খবর: