গত ২০ দিন ধরে পাক রেঞ্জারদের হাতে বন্দি হুগলির রিষড়ার বাসিন্দা বিএসএফ-এর কনস্টেবল পূর্ণমকুমার সাউ। তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রজনী সাউয়ের সঙ্গে কথা হল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। রজনী জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে আশ্বাস দিয়েছেন, এক সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণমকে ফেরানো হবে। যুদ্ধে ড্রোন উড়ছে, দু’ ধারের ধ্বংসছবি দেখতে দেখতে একটা সময়ে সব আশা হারিয়েছিলেন তাঁরা। এ যুদ্ধের অবশ্যম্ভাবী পরিণতির কথা ভেবে। রবিবার রজনী বললেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। উনি বলেছেন, এক সপ্তাহের মধ্যে ফিরে আসবেন পূর্ণম, আমার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নিয়েছেন। পরিবারে কে কে আছেন, সে সবও জানতে চেয়েছেন। পরিবারের পাশে থাকবেন বলেও আশ্বস্ত করেছেন তিনি। এখন আমি এখন অনেকটাই নিশ্চিন্ত বোধ করছি।’’ দেশ আক্রান্ত হলে দেশের সেনা লড়বে, লড়েছে, আমরা দেখেছি কীভাবে ধুলিসাৎ হয়েছে পাক জঙ্গি ডেরাগুলো। আমরা দেখেছি রাতের আকাশে আলোর ঝলকানি। আর সেসবের মধ্যেই যুদ্ধকে আরও উত্তেজক করে তুলতে বেশ কিছু মিডিয়ার আপ্রাণ পরিশ্রম। আমরাই বলতে পারি, হ্যাঁ জোর গলায় বলতে পারি, ওরকম একটা গুজব আমাদের স্ক্রিনে ছিল না, করাচি দখল বা রাওলপিন্ডির পিণ্ডি চটকে দেওয়ার দাবি আমরা করিনি। কিন্তু এসব দেখে পূর্ণম এর ঘরের মানুষগুলোর অবস্থা আমরা বুঝতে পারি, অন্তঃসত্ত্বা এক মহিলার উৎকণ্ঠা আমরা বুঝতে পারি। কে আগে মাথা নত করেছে, কে হেরেছে, কে জিতেছে, কার ডাকে এল এই যুদ্ধবিরতি এসব নিয়ে যখন কূটকাচালি চলছে তখন রজনী পেয়েছে আলোর সন্ধান, যুদ্ধ থেমেছে, নিশ্চয়ই বাড়ি ফিরবে তার পূর্ণম, যে শিশু এখনও জন্মায়নি, তার বাবা বাড়ি ফিরবে, নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে, এ কি কম কথা? এটাই আমাদের বিষয় আজকে, যুদ্ধ শেষ, এবার পাকিস্তানে বন্দি বাংলার ছেলেকে ঘরে ফেরান।
সোমবার বৈঠক রয়েছে ভারত ও পাকিস্তানের। স্বাভাবিকভাবেই বিভিন্ন আলোচনার মধ্যে ওই বৈঠকেই উঠে আসবে পূর্ণম প্রসঙ্গ, পূর্ণমের ফেরা নিয়ে আলোচনা হবে নিশ্চয়ই। সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যেই দাবি করেছেন, পূর্ণমকে ফিরিয়ে আনুন। পূর্ণমকে ফেরাতে তৎপর হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীও। শোনা গেল এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিএসএফের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে কথাও হয়েছে তাঁর। এক সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণমকে ফেরানোর আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, পূর্ণমের স্ত্রী ও বাবা-মায়ের যে কোনও রকম চিকিৎসার প্রয়োজন হলেও পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে রাজ্য।
আরও পড়ুন: Aajke | দিলীপ ঘোষ দল থেকে বাদ পড়ছেন?
কীভাবে পূর্ণম ধরা পড়ে গেল পাক বাহিনীর হাতে? গত ২৩ এপ্রিল ফিরোজ়পুর বর্ডারে ডিউটি করার সময় পাক রেঞ্জার্সের হাতে বন্দি হন সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ২৪ নম্বর ব্যাটালিয়নের কনস্টেবল পূর্ণম। ভুল করে পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশে ঢুকে একটি গাছের তলায় বিশ্রাম নেওয়ার সময় সে দেশের রেঞ্জার্স পূর্ণমকে বন্দি করে। তার পর থেকেই হুগলির রিষড়ার সুশীলাচন্দ্র আওয়ান রোডের বাড়িতে উৎকণ্ঠা আর উদ্বেগ। পূর্ণমের নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে ২০টা দিন অতিক্রান্ত হয়েছে, কিন্তু এখনও ছাড়া পাননি। মাঝে পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকেও বসেছে বিএসএফ। তবে সমাধানসূত্র মেলেনি, কারণ যুদ্ধের তীব্রতা বাড়ছিল। তারই মধ্যে পূর্ণমকে ঘরে ফেরানোর জন্য গত ২৮ এপ্রিল রজনী এবং তাঁর বাড়ির লোকজনেরা গিয়েছিলেন পঞ্জাবে। তারও আগে বিএসএফ আধিকারিকেরা পূর্ণমের রিষড়ার বাড়িতে গিয়েছিলেন। কিন্তু যুদ্ধ শুরু হল, রাফাল, এফ১৬ আর ড্রোনের ওড়াউড়ি দেখে নিশ্চিত বৈধব্যে ছবি ভাসছিল রজনীর চোখে। এখনও কি সেই উৎকণ্ঠা গেছে? না, একেবারে গেছে তা বলব না কারণ আজ পর্যন্ত পাক সেনা অফিসারেরা একটা কথাও জানাননি। যুদ্ধ, দেশপ্রেম, শান্তির দাবি, অল কোয়ায়েট ইন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট কিংবা রবীন্দ্রনাথে মানব ধর্ম নিয়ে দুর্দান্ত আলোচনার শত মাইল দূরে এক অন্তঃসত্ত্বা নারী কেবল তার পুরুষটিকে ঘরে ফেরাতে চায়। ঘরে ফিরলে আর যেতে দেবে যুদ্ধে? অস্ফুট গলায় জবাব, পেট চলবে কী করে? মানে পূর্ণম আবার যাবে, পূর্ণমদের যেতেই হবে। আমরা আমাদের দর্শকদের কাছে জানিয়েছিলাম, আমাদের বাংলার ছেলে, রিষড়ার ছেলে পূর্ণম পাক সেনাদের হাতে বন্দি, আপনারা কি তার নিঃশর্ত মূক্তির দাবিতে গলা মেলাবেন? শুনুন মানুষজন কী বলছেন।
যুদ্ধ কারণে অকারণে, ধর্মযুদ্ধ, অধর্মের যুদ্ধ, ন্যায় যুদ্ধ, অন্যায় যুদ্ধ হয়, হতেই পারে। আমার দেশে ঢুকে আমার দেশের মানুষকে মেরে দিয়ে চলে যাবে, আমি কিছু বলব না, এটা তো হতে পারে না। আবার সেই দেশেরও সেনা আছে, অস্ত্র আছে, তাদেরও হাজার একটা কুযুক্তি আছে বইকী, তারাও ছেড়ে কথা কইবে না। কিন্তু মধ্যে এই বিচ্ছিন্ন অসহায়তার ছবি আমাদের বিষন্ন করে, যুদ্ধের স্বরূপটাকে তুলে ধরে, হ্যাঁ অর্জুনও বিষন্ন হয়েছিলেন যুদ্ধের আগে তাঁর প্রিয়জন স্বজন হারানোর ভয়ে। আমরাও উৎকণ্ঠায় আছি, রজনীর স্বামী ঘরে ফিরুক, আগামী শিশুটি নিশ্চিন্তে পৃথিবীতে আসুক শান্তির ছাড়পত্র নিয়ে। যুদ্ধ শেষ, এবার মোদিজি পাকিস্তানে বন্দি বাংলার ছেলেকে ঘরে ফেরান।