কলকাতা: জাল ওষুধের (Fake Medicine) রমরমা রুখতে কোমর বেঁধে নেমেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। রাজ্যে ধরা পড়া জাল ওষুধের চালানের সূত্র ধরে তদন্তে উঠে এসেছে একাধিক বিজেপি শাসিত রাজ্যের নাম, বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও ওড়িশা। কিন্তু অভিযোগ, প্রয়োজনীয় তথ্য জানাতে অনিচ্ছা দেখাচ্ছে যোগী সরকারের প্রশাসন। তাই ফের একবার উত্তরপ্রদেশ সরকারকে কঠোর ভাষায় চিঠি পাঠাতে চলেছে নবান্ন, যাতে স্পষ্ট করা হবে বিষয়টির গুরুত্ব।
সূত্রের খবর, কিছুদিন আগেই রাজ্যে আসা একাধিক ওষুধের চালানে ভেজালের প্রমাণ মেলায়, বিস্তারিত তথ্য জানতে উত্তরপ্রদেশ সরকারের কাছে চিঠি পাঠিয়েছিল রাজ্য। কিন্তু যেটুকু উত্তর এসেছে, তা একেবারেই অস্পষ্ট এবং আশাপ্রদ নয় বলে মনে করছে ড্রাগ কন্ট্রোল দফতর। এক শীর্ষ সরকারি আধিকারিকের কথায়, “কলকাতায় বাসে করে যে জাল ওষুধ এসেছে, তার উৎস মূলত উত্তরপ্রদেশ ও আশপাশের রাজ্য। তদন্তে যোগী রাজ্যের একাধিক সংস্থার নাম উঠে এসেছে। এই অবস্থায় সংশ্লিষ্ট তথ্য জানাতে বললেও কার্যত নীরব উত্তরপ্রদেশ সরকার।”
আরও পড়ুন: ৪ দিনেই ১০ লক্ষ পুণ্যার্থী, দিঘার জগন্নাথধামে রোজই নামছে ভক্তের ঢল
রাজ্যের দাবি, ভেজাল ওষুধ তৈরি ও সরবরাহে যুক্ত সংস্থাগুলিকে চিহ্নিত করে তাদের লাইসেন্স বাতিল এবং আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ ড্রাগ কন্ট্রোল নির্দিষ্টভাবে কোনও প্রশ্নের উত্তর দেয়নি। এমনকী পশ্চিমবঙ্গের ড্রাগ কন্ট্রোল বিভাগের অনুমান, যে সংস্থাগুলির নাম উঠে এসেছে, তারা দেশের আরও বহু রাজ্যে এই জাল ওষুধ ছড়িয়ে দিচ্ছে। এমনকি এমন ঘটনাও সামনে এসেছে, যেখানে কিছু ওষুধ কলকাতায় আসার পরও তা এ রাজ্যের বাজারে না থেকে অন্য রাজ্যে পাঠানো হয়েছে। এই কারণেই এবার দেশের অন্যান্য রাজ্যের ড্রাগ কন্ট্রোল দফতরের সঙ্গেও যোগাযোগ শুরু করছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
ইতিমধ্যেই কলকাতার অন্তত চারটি ওষুধের দোকানে হানা দিয়ে প্রচুর জাল ওষুধ উদ্ধার করেছে রাজ্য ড্রাগ কন্ট্রোল। বিভিন্ন জেলায়ও একই ছবি। এই ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই আতঙ্ক ছড়িয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। তাই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে চালু করা হয়েছে দুটি হেল্পলাইন নম্বর — 03322252213 এবং 03322252214 — যেখানে যে কোনও সন্দেহজনক ওষুধ সম্পর্কে অভিযোগ জানানো যাবে।
এ ইস্যুকে কেন্দ্র করে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের মুখপাত্রদের দাবি, যখন সিডিএসসিও (CDSCO) নামে একটি কেন্দ্রীয় ওষুধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা রয়েছে, তখন কীভাবে এত বিশাল পরিমাণ ভেজাল ওষুধ বাজারে এল? তাদের প্রশ্ন, সিডিএসসিও-র অনুমোদন ছাড়া কোনও ওষুধ বাজারে বিক্রি হওয়ার কথা নয়। তাহলে এই নজরদারির ব্যর্থতার দায় নেবে কে? চক্রান্তের ছায়ায় জাল ওষুধ চক্র ভাঙতে রাজ্য প্রশাসন এখন আরও কঠোর পথে হাঁটছে — কারণ জীবন নিয়ে কোনও আপস নয়।
দেখুন আরও খবর: