ওয়েবডেস্ক: ছেলেটিকে জল পর্যন্ত পান করতে দেওয়া হয়নি। কারণ সে ছিল অস্পৃশ্য। যাকে ছোঁয়া যায় না। নীচু জাতের ছেলেটিকে ছুঁলে জাত চলে যেতে পারে। স্কুলে ক্লাসের বাইরে বসতে দেওয়া হত। এমনকী সরকারি চাকরি পাওয়ার পরও তাঁকে হাতে হাতে ফাইল দেওয়া হত না। সেই ছেলেটিই ভারতের সংবিধান লিখেছিলেন। ভীম রাও বাবা সাহেব আম্বেদকর (Dr B R Ambedkar)। সাম্যের (Equality) ধারণায় দেশের সব থেকে শক্তিশালী হাতিয়ার আইনের মূল প্রবক্তা তিনিই। যন্ত্রণাকে তিনি উদ্দেশ্যে বদলে দিয়েছিলেন। এক পাত্র জলের চেয়েও তাঁর জীবন কম গুরুত্বের। এই সমাজ তাঁকে এমনই শিক্ষা দিয়েছিল। আম্বেদকর যখন ৮ থেকে ১০ বছরের। সাঁতারা থেকে কোরেগাঁও যাচ্ছিলেন। এক জায়গায় থামতে হয়েছিল। সেখানে তাঁর সঙ্গে এমন ব্যবহার করা হয় যা অন্যদের সঙ্গে করা হয়নি। আম্বেদকর যে পাত্রে জল খেতেন সেই পাত্র পুনরায় ছোঁয়া হত না। কারণ সেখানে আম্বেদকরের ছোঁয়া রয়েছে। ভারতের প্রথম আইনমন্ত্রী বি আর আম্দেকরকে সোমবার জন্মদিনে একঝলক ফিরে দেখা।
১৮৯১ সালের ১৪ এপ্রিল। আম্বেদকরের জন্ম। মধ্যপ্রদেশের একটি মিলিটারি ক্যান্টনমেন্টে ভূমিষ্ঠ হন। একটি দলিত পরিবারের ১৪তম সন্তান ছিলেন আম্বেদকর। তাঁর বাবা মিলিটারিতে ছিলেন। মেধাবী ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও অস্পৃশ্যতার জন্য স্কুলে ভুগতে হত আম্বেদকরকে। এমনকী শিক্ষককের অবহেলার শিকারও হয়েছিলেন। নিজের জেদে তিনি কলম্বিয়া আমেরিকার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও লন্ডন স্কুল অফ ইকনমিক্স থেকে পঠন পাঠন করেন। একসময় যাঁকে ক্লাসের ডেস্কে বসতে দেওয়া হয়নি। তিনি বাইরে বসতেন। স্কুলেও সবাই যেখানে জল পান করতেন। সেখানে তাঁর অনুমতি ছিল না। সেই ছেলেটিই বিদেশ থেকে উচ্চ ডিগ্রি অর্জন করে আসেন। চাকরি জীবনে জাত লুকিয়ে ছদ্ম নামে হোটেলে থাকতে হয়েছে তাঁকে।
তিনি লিখেছেন, আমি একসময় কর্নারে বসতাম। এমনকী আমার ব্যবহার করা পোশাকও স্কুলের পরিচ্ছন্নতার কর্মীরা ছুঁতেন না। স্ত্রীর গয়না বিক্রি করে বিদেশে শিক্ষা নিয়েছেন। তিনি এতটাই মেধাবী ছিলেন যে অর্থনীতিতে দুবছরের মাস্টার ডিগ্রি এক বছরেই সম্পন্ন করেছিলেন। সেই যুগে মহিলাদের শিক্ষার জন্য অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন আম্বেদকর। বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষা নেন। তার কয়েক সপ্তাহ পরেই ১৯৫৬ সালের ৬ ডিসেম্বর প্রয়াত হন ভারতের এই মহান সন্তান। আম্বেদকরের শিক্ষা ছিল, যা শুধুই উপরে ওঠা নয। অন্যদেরকে টেনে তোলাও।