পূর্ব বর্ধমান: সামাজিক বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী রইলেন শতাধিক নিম্ন বর্ণের মানুষ। দীর্ঘ ৩০০ বছরের বেশি সময় ধরে চলে আসা প্রথা ভেঙে অবশেষে প্রশাসনের সহযোগিতায় তাঁরা গ্রামের প্রাচীন শিব মন্দিরে প্রবেশ করে পুজো দেওয়ার অধিকার পেলেন। বসন্তের শুরুতে পূর্ব বর্ধমান (Purba Bardhaman) জেলার কাটোয়া এক নম্বর ব্লকের গীধগ্রামে ধরা পড়ল এক মানবিক চিত্র।
জানা যায়, পূর্ব বর্ধমান জেলার এই গ্রামের শতাধিক বছরের পুরানো গীধেশ্বর শিব মন্দির (Gidheshwar Shiv Temple) এতদিন কেবলমাত্র উচ্চ বর্ণের মানুষের জন্য উন্মুক্ত ছিল। প্রাচীন রীতির নামে নিম্ন বর্ণের মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু যুগের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই বৈষম্যের বিরুদ্ধেও সরব হন তাঁরা। গত শিবরাত্রির দিন ১৩০টি নিম্ন বর্ণের পরিবার একসঙ্গে মন্দিরে প্রবেশের চেষ্টা করলে তাদের বাধা দেওয়া হয়। মন্দির কমিটির তরফে জানানো হয়, “প্রাচীন রীতি অনুযায়ী নিম্ন বর্ণের মানুষেরা মন্দিরে প্রবেশ করতে পারবে না।”
আরও পড়ুন: দোলের আগেই গরমের দাপট, বৃষ্টিতে ভিজবে এই ৫ জেলা
এই ঘটনার পর থেকেই গ্রামে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে প্রশাসনকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে গ্রামে পুলিশ পিকেট বসানো হয় এবং কঠোর নজরদারি চালানো হয়। গ্রামের অস্থিরতা প্রশমিত করতে কাটোয়া মহকুমা শাসকের দপ্তরে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক আয়োজন করা হয়। বৈঠক শেষে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, মন্দির সবার জন্য, এখানে জাত-বর্ণের ভিত্তিতে কোনো ভেদাভেদ চলবে না।
বুধবার সকালে প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে নিম্ন বর্ণের পাঁচজন প্রতিনিধি মন্দিরে প্রবেশ করেন এবং পূজা দেন। তারা কাঁসর-ঘণ্টা বাজিয়ে, ফুল-ফল সাজিয়ে যথাযথ রীতি মেনে শিবের পুজো করেন। এই ঘটনার মাধ্যমে শুধু ওই পাঁচজনই নয়, বরং ১৩০টি নিম্ন বর্ণের পরিবারের কয়েকশো মানুষের স্বপ্ন পূরণ হল। দীর্ঘদিনের বঞ্চনা ও বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে তারা অধিকার ফিরে পেলেন, যা সামাজিক সাম্যের এক বড় পদক্ষেপ।
দেখুন আরও খবর: