মনে আছে সেই নির্বাচনের সময়ে ফকিরের মনোনয়নপত্র জমা হল এবং আমরা জানলাম এক ফকিরের সামান্য পুঁজি মোট ৩.০২ কোটি ফিক্সড ডিপোজিট ২.৮৬ কোটি হাতে ক্যাশ ৫৬০০০ টাকা, ব্যাঙ্কে ৮০৩০৪ টাকা, ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট ৯.১২ লক্ষ টাকা, চারটে সোনার আংটি ২.৬৮ লক্ষ টাকা। জানার পরে যে কারও গান গাইতে ইচ্ছে করবে, এবার মরলে ফকির হব গুজরাটেতে জন্ম নেব, রে ব্যান পরে মব্লাঁ নিয়ে বসব আমি গদি জুড়ে, তোমরা যে যা বলো আমারে। কিন্তু এফিডেভিটে তো কেবল এই তথ্যই ছিল না, আরও কিছু তথ্য ছিল, তারমধ্যে একটা হল তাঁর স্ত্রীর নাম, যা তিনি ২০১৪-র আগে লুকিয়েই রেখেছিলেন, ২০১৪, ২০১৯ আর ২০২৪-এ তিনি সেই তথ্য দিয়েছেন, এবারে যা নতুন জানলাম তা হল ওনার স্ত্রীর পেশা, উনি লিখেছেন উনি জানেন না, ওনার স্ত্রীর আয়ের উৎস, উনি লিখেছেন যে উনি তাও জানেন না, ওনার স্ত্রী যশোদাবেনের আয় সম্পত্তির কোনও খবর তিনি জানেন না এবং ওনার স্ত্রীর ঋণ বা সেক্ষেত্রে সরকারের কাছে বকেয়া ইত্যাদির পরিমাণও তিনি জানেন না। কিন্তু দেশের অনেকের বাপের ভাগ্যি যে উনি ওনার স্ত্রীর নামটা জানেন। হ্যাঁ, উনি মিথ্যেটা এই লেভেলে বলে থাকেন। মব্লাঁর পেনে লেখেন, দেড় লাখের রোদচশমা পরেন, ১২ কোটির মার্সিডিজে চড়েন, দিনে তিন, চার, পাঁচ বার পোশাক পাল্টান, উনি নিজেকে ধার্মিক আর সন্ন্যাসী বলেন!
আমাদের বিবেকানন্দ সন্ন্যাসী ছিলেন, ক্ষেত্রির মহারাজাকে লিখেছিলেন, আমার মায়ের জন্য আমার চিন্তা হয়, আপনি মাসে একটা টাকার অনুদানের ব্যবস্থা করে দিলে বড্ড উপকার হয়। ক্ষেত্রির মহারাজা সেই ব্যবস্থা করেছিলেন, ততদিনে বিবেকানন্দ আমেরিকা ঘুরে এসেছেন, কিন্তু তাঁর মনের ইচ্ছেও লিখেছিলেন শেষ জীবনটা যদি মায়ের সঙ্গে কাটিয়ে দিতে পারতাম, এটা তাঁর আক্ষেপ ছিল, হ্যাঁ তিনিই বলে ছিলেন গর্বের সঙ্গে বলো আমি হিন্দু। রামকৃষ্ণ মারা যাওয়ার আগে বলছেন, নরেন লাটু, এরা সব রইল, তোমার অন্ন বস্ত্রের অভাব হবে না কোনও দিন, কাকে? সারদা মাকে, উনি হিন্দু ছিলেন, কলমা পড়ে মুসলমানও হয়েছিলেন। বুদ্ধ বোধি লাভের পরে গিয়েছিলেন যশোধরার কাছে, বলতে যে আমি তোমাকে না বলেই সংসার ছেড়েছিলাম, ভুল করেছিলাম, আমি বোধি লাভ করেছি তার কিছুটা তোমাকেও দিতে এলাম, তিনি তাঁর স্ত্রী-সন্তানকে বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত করেছিলেন। আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী প্রথমে নিজের স্ত্রীর নাম গোপন রেখেছিলেন, বিয়ে করেছেন সেটাও গোপন রেখেছিলেন এখন তিনি খোঁজও নেন না তাঁর বিবাহিত স্ত্রীর। কয়েকজনের বক্তব্য, ওসব লাল বাহাদুর শাস্ত্রী ইত্যাদিদের দিন গেছে এখন প্রধানমন্ত্রীকে ধোপদুরস্ত জামাকাপড় পরতে হবে, সিকিউরিটির জন্য বুলেট প্রুফ মার্সিডিজে চড়তে হবে, চড়ুন, উনি প্রধানমন্ত্রীর ঘোরাফেরার জন্য প্লেনও কিনেছেন, কিনুন, কিন্তু নিজেকে ওই ফকির বলাটা ছাড়ুন, সন্ন্যাসী বলা ছাড়ুন। ওয়াটারপ্রুফ জ্যাকেট পরে জলে ডুবে বক ধার্মিকের অভিনয়টা বন্ধ করুন। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে ধর্মের মানেটা বদলে দেবেন না, পৃথিবীর কোনও সন্ন্যাসী ২২টা ক্যামেরা রেখে গঙ্গায় ডুব দেন না, দেড়শোটা স্টিল ক্যামেরা সামনে রেখে হিমালয়ের গুহায় ধ্যান করতে বসেন না। কিসের সন্ন্যাসী? যিনি তাঁর স্ত্রীর খবরও রাখেন না? কোন ধর্ম বলে এমন রীতির কথা? রাম বনবাসে, সিংহাসনে নয়, বনবাসেও সঙ্গে সীতা। ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির বনবাসে সঙ্গে স্ত্রী দ্রৌপদী, আমাদের বেদ উপনিষদে যজ্ঞ সম্পূর্ণই হত না স্ত্রীকে পাশে না রাখলে, দক্ষের যজ্ঞে শিবের ওই তাণ্ডব নৃত্য কেন? কোন হিন্দুত্বের পাঠ পড়াচ্ছেন মোদিজি? নিজের বিবাহিত স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্স? হতেই পারে, হয়, কিন্তু বিবাহিত স্ত্রী, তিনি ফর্মে লিখছেন, অথচ তিনি কী করেন? কী খান? রোজগার কীভাবে করেন? খাবার জোটে কীভাবে? তিনি জানেন না, তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী?
আসলে এ এক ইমেজ বিল্ডিং, এক সর্বত্যাগী সন্ন্যাসীর, কিসের ইমেজ? দুনিয়ার শিল্পপতিদের বিয়েতে হাজিরা দিচ্ছেন, হেঁহেঁ করছেন, তাদের ছেলেমেয়েদের বিয়েতে যাচ্ছেন, কেবল নিজের স্ত্রী বাদ দিলেই সন্ন্যাসী হওয়া যায়? নাকি তেমন বড়লোকের ঘরে কোটিপতি শিল্পপতিদের ঘরে বিয়েটা হলে এই নৌটঙ্কির দরকার হত না? দেশ আপনার পরিবার, অপনা পরিবার বলে ক্যাম্পেন চলছে, যে মণিপুরের নারীকে ধর্ষণের পরে নগ্ন করে প্যারেড করানো হল, তার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন? হাথরসের ধর্ষিতার মা বাবার পাশে? যাননি। ওগুলো পরিবার ছিল না। আসলে এক অত্যন্ত গরিব সৎ সন্ন্যাসীর ছদ্মবেশ ধরার জন্যই এই ব্যবস্থা। উনি চা বিক্রি করতেন, যে স্টেশনে করতেন, তার অস্তিত্বই নেই, সেই সময়ের নরেন্দ্র মোদি মানে কিশোর নরেন্দ্র মোদির ছবি আছে স্যুটেড বুটেড, সেগুলো চা বিক্রি করে হয়? দিলীপকুমার স্টাইলের চুলের বাহার? কিশোর বয়সে আমাদের ক’ জনের স্যুট পরার অভিজ্ঞতা আছে? তাও আবার এক চা বিক্রেতার? হ্যাঁ, বাবার চায়ের দোকান ছিল, রোজগারও ছিল, কেবল ওই ইমেজ বিল্ডিংয়ের জন্য চা বিক্রি আর ভিক্ষের মিথ্যে কথা বলেছেন। অজস্র মিথ্যে বলেন। ভিক্ষের গল্প বলছেন আর সেই সময়ে তাঁর ছবি পাওয়া যাচ্ছে আমেরিকা, ফ্রান্সে। ভিক্ষের টাকায় বিদেশে গিয়েছিলেন মোদিজি?আইফেল টাওয়ারের সামনে ফটো তুলিয়েছিলেন ভিক্ষের পয়সাতে? ছোটবেলায় কুমির ধরা থেকে এন্টায়ার পলিটিক্যাল সায়েন্স নিয়ে মাস্টার্স করা পুরোটা ওই মিথ্যের অঙ্গ। এবং সেই মিথ্যের কোনও আবরণও নেই, সপাটে মিথ্যে বলেই চলেছেন। কচ্ছের কোনও একটা প্রোগ্রামে আদবানিজি গিয়েছিলেন, ৮৮-এ, তিনি নাকি তখনই ডিজিটাল ক্যামেরাতে ওনার অনুষ্ঠানের ছবি তুলে মেল করে দিলেন দিল্লিতে, এটা নিউজ নেশনের সাংবাদিককে বলছেন আর হাসছেন, মানে ভাবো একবার সেই জমানায় আমি কত টেক স্যাভি, তার পরের দিনে সেই ছবি দিল্লির কাগজে ছাপা হতে আদবানিজি তো অবাক। মানে উনি আদবানির থেকে এগিয়েই ছিলেন, এই হচ্ছেন আমাদের উনিজি, কেবল বলার সময়ে খেয়ালই করেননি যে সময়ের কথা বলছেন তখন ডিজিটাল ক্যামেরা নেই, প্রথম ডিজিটাল ক্যামেরাই এল ১৯৯০-এ আর ই-মেলে ছবি অ্যাটাচ করা? ১৯৯৫-তে শুরু হয়।
আরও পড়ুন: Fourth Pillar | কাটা মাথাও বলবে মমতা ব্যানার্জি জিন্দাবাদ
মানে নির্জলা মিথ্যে নয়, এত মিথ্যের পরে মনে হয় উনি এক কমপালসিভ লায়ার, এটা এক ধরনের মানসিক অসুখ। এবং তারসঙ্গে নানান কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস, আর অবিজ্ঞান, অপবিজ্ঞানের ঢিপি। কখনও শ্রাবণ মাসে মাছ মাংস খাওয়া নিয়ে প্রশ্ন করছেন, কখনও মেঘের তলা দিয়ে রাডার এড়িয়ে বিমান চালানোর কথা বলছেন, একবার বললেন এক আজব যন্ত্রের কথা, নালা থেকে একটা পাইপ এনে উলটো হাঁড়ির তলায় রেখে স্টোভ জ্বালিয়ে চা বানানোর কথা, নালাতে নোংরা জল জমে মিথেন গ্যাস হতেই পারে, মিথেন গ্যাস জ্বালানো যায়, অক্সিজেনের সংস্পর্শে এলে এমনিতেও জ্বলতে পারে, মিথেন গ্যাসকে ব্যবহারও করা যায়, কিন্তু নালি থেকে পাইপে করে এনে? ফুটপাথে জ্যোতিষ বসে টিঁয়া পাখি নিয়ে, তাদের কাছে এরকম কথা শোনা যায়, যা আমাদের প্রধানমন্ত্রী বলছেন, এবং কেন বলছেন? ওনার ইমেজ বিল্ডিং। উনি গরিব, উনি ফকির, উনি সন্ন্যাসী, উনি টেক স্যাভি, উনি বিজ্ঞান জানেন, উনি পুরান, উপনিষদ পড়েছেন এই সব মিলে উনি এক মহামানব, অবতীর্ণ হয়েছেন, এই ইমেজটা উনি তৈরি করার চেষ্টা করেছেন, ওনার পাশাপাশি কিছু লোকজন সেটাতে ইন্ধন দিয়েছেন, বিশ্বের প্রত্যেক স্বৈরাচারীরা এইভাবেই তাদের ইমেজ তৈরি করে, তারা জানে ওই ইমেজ দিয়েই এক রূপকথা বিক্রি করতে হবে, সেই ইমেজের অংশ হল এই কুম্ভমেলার গল্প। এই মহাকুম্ভের পুণ্যের গল্প যখন আসছে তখন দেশের অবস্থাটা কেমন? ব্লুম ভেঞ্চার পত্রিকা তাদের ২০২৪-এর ইন্দাস ভ্যালি সমীক্ষার রিপোর্ট বার করেছে। মোদিজির ভাষায় এক হু হু করে এগিয়ে যাওয়া দেশের এক হতাশার ছবি ছত্রে ছত্রে। সেই রিপোর্টে তিনটে আলাদা আলাদা সংস্থার হিসেব দেওয়া হয়েছে যাঁরা ভারতের জনগণের আর্থিক অবস্থার একটা হিসেব দিয়েছেন।
প্রথমে বলি প্রাইস আইসিই ৩৬০ এর হিসেব, সেখানে বলা হচ্ছে ৯২ কোটির কিছু বেশি মানুষের মাথাপিছু বার্ষিক রোজগার সর্বোচ্চ ৬৭০০ ডলার, আজকের হিসেব অনুযায়ী কমবেশি ৫৬/৬০ হাজার, ৩৫ কোটির কিছু বেশি মানুষের রোজগার ওই ৬৭০০ থেকে ২০ হাজার ডলার টাকা, মানে বছরে মাথাপিছু ৬০ হাজার টাকা থেকে ১৬ লক্ষ টাকার মধ্যে। আর ১২ কোটি মানুষের রোজগার ওই ১৬ লক্ষ টাকার ওপরে। গোল্ডম্যান স্যাসে বলছে ১২৭ কোটি মানুষ বছরে মাথাপিছু ৫০০০ ডলার মানে সর্বোচ্চ ৪০/৪৫ হাজার টাকা রোজগার করে ১১ কোটি মানুষ ৫০০০ ডলার থেকে ১০ হাজার ডলার, মানে ৪০/৪৫ হাজার থেকে ৮০/৮৫ হাজার টাকা রোজগার করে আর ৬ কোটি মানুষ ৮৫ হাজার তাকার বেশি রোজগার করে। রেডসির সংস্থার হিসেবে ৫৩ কোটি মানুষ ৩৫০০ ডলার, মানে সর্বোচ্চ ২৮/৩০ হাজার টাকা রোজগার করে, ৭০ কোটি মানুষ ওই ২৮/৩০ হাজার থেকে ১ লক্ষ ১৫ হাজার টাকার মতো রোজগার করে আর ১৫ কোটি মানুষ তার বেশি রোজগার করে। এবং এই ইন্দাস ভ্যালির রিপোর্ট বলছে সর্বস্তরেই এই আয় কমছে না কিন্তু মজুরি বা মাইনে থেকে আয় কমছে। অর্থাৎ তলার সারির আয় আরও কমছে, কাজেই স্বাভাবিকভাবেই কমছে খরচ, খরচ কমলে ছোট মাঝারি উৎপাদকদের মাথায় হাত, এক মন্দার দিকে এগোচ্ছে ভারত, আমার দেশ, গত ১৫/২০ দিন ধরে লাগাতার পড়ছে শেয়ার বাজার, বড় পুঁজি সামলে নেবে, কিন্তু মধ্যবিত্তদের মাথায় হাত পড়েছে, এমনকী এল আই সি বা সরকারি সংস্থার যে টাকা বাজারে খাটানো হচ্ছিল সেখানেও ধস নেমেছে। সব মিলিয়ে ম-এ মজুরির হাল খারাপ। দেশের আম জনতা, শ্রমিক কৃষকের নাভিশ্বাস উঠছে।
কিন্তু মহাকুম্ভে নাকি শেষ হিসেবে ৬৫ কোটি মানুষ গিয়ে ডুব দিয়েছেন, এবং এই সেই মহাকুম্ভ যা নাকি ১৪৪ বছর পর পর আসে বলে এক বিরাট প্রচার চালানো হয়েছিল, এখন তো খুব পরিষ্কার যে সেই মহাকুম্ভ সরকারি দস্তাবেজ অনুযায়ী, বিভিন্ন সংবাদ সূত্রের হিসেবে ১৯৮৯, ২০০১, ২০১৩ তেও এই মহাকুম্ভও হয়েছে। ১৯৮৯ এ বিবিসির সাংবাদিক মার্ক টালি নিজে কুম্ভ মেলাতে হাজির থেকে ১৪৪ বছর পরের মহাকুম্ভের বর্ণনা দিয়েছেন। ২০০১ এ উত্তর প্রদেশের সিএজি রিপোর্ট, ২০১৩ র সরকারি দলিলেই ওই ১৪৪ বছর পরের ঐ মহাকুম্ভের খবর এখন পাবলিক ডোমেইনে। এমনিতে ব্যাপারটা খুব পরিষ্কার। ধর্ম কারও কাছে আস্থা আর বিশ্বাস, কারও কাছে স্রেফ রাজনৈতিক হাতিয়ার, আর বিরাট সংখ্যক চালাকের কাছে এক শক্তিশালী ব্যবসা। বলাই হয় যে ধর্মের জন্ম পৃথিবীর সবচেয়ে বোকা মানুষটার সঙ্গে সবথেকে চালাক মানুষটার দেখা হওয়ার পরেই হয়েছিল। কিন্তু বিজেপি দুটো অস্ত্রকেই ব্যবহার করে, সমান ভাবে সমান জোরে, সর্বক্ষেত্রে। মিজোরামে বিজেপি এমএলএ জেতার আগে এবং পরে ঢালাও গো মাংসের আয়োজন করেছে, তা গর্ব করে বলেছে। কেরালার বিজেপি সহ সভাপতি মেজর রভি হিমন্ত বিশ্বশর্মার গো হত্যা নিয়ে বাধা দেওয়ার কথাকে অসাংবিধানিক বলেছে। মজা হল এই দুই রাজ্যেই গোমাংস খাওয়া নিয়ে কোনও ট্যাবু কাজ করে না, উচ্চ গোত্রের ব্রাহ্মণরা খায় না বটে কিন্তু গোমাংস খাওয়া নিয়ে কোনও অসুবিধে নেই, ঠিক যেমন গোয়াতেও নেই। আর এসব রাজ্যে ওই হিমন্ত বিশ্বশর্মাদের বাড়বাড়ন্ত নেই, সেখানে গোহত্যা নিবারণ নিয়ে কোনও কথা নেই, কোথায় আছে?
যেখানে এই গোহত্যা এক সেনসেশন তৈরি করবে, এক সাম্প্রদায়িক মেরুকরণ তৈরি করবে, সেই উত্তর ভারতের রাজ্যগুলোতে বিজেপি গোহত্যার বিরোধী, এদিকে এই মুহূর্তে ভারত বিশ্বের তৃতীয় বিফ রফতানিকারক দেশ এবং যে কোম্পানিগুলো বিফ রফতানি করে তাদের অন্তত একটা কোম্পানি ২ কোটি টাকা চাঁদা দিয়েছে বিজেপিকে। হ্যাঁ এটাই বিজেপি। ধর্ম তাদের কাছে আস্থা বা বিশ্বাস নয়, ধর্ম তাদের কাছে ব্যবসা আর রাজনীতির হাতিয়ার। ঠিক সেই কারণেই ওই ১৪৪ বছরের গল্প ছড়িয়ে আমাদের যোগী মোদিজি ৪৫ দিন ধরে এক ব্যবসা চালালেন, লোক ঠকালেন, যে মানুষগুলো প্রচারের মাহাত্মে নিজের সামান্য সম্বলটুকু ১৪৪ বছর পরে আসা মহাকুম্ভের পুণ্য অর্জনের জন্য খরচ করলেন তিনি জানতেও পারলেন না যে মাত্র ক’ বছর আগেই ২০০১ এই বিজেপিরই রাজনাথ সিং যখন মুখ্যমন্ত্রী, সেই বিজেপি রাজত্বেই জানানো হয়েছিল ১৪৪ বছর পরে এসেছে মহাকুম্ভ, তার আগে মুলায়ম সিং যাদবের, মানে সমাজবাদী দলের রাজত্বেও এসেছিল মহাকুম্ভ, সেটাও নাকি ১৪৪ বছর পরে এসেছিল, আবার ২০১৩-তে অখিলেশ যাদব যখন মুখ্যমন্ত্রী, তখনও নাকি মহাকুম্ভ এসেছিল, এসব হিসেব যোগী মোদি জানতেন না? নিশ্চয়ই জানতেন, আসলে ধর্মের নামে মিথ্যে কথা বলে ওনারা ব্যবসা আর রাজনীতি করেন, করছেন, করবেন।