নয়াদিল্লি: তিনি স্ট্রিট ফাইটার৷ লড়াই করতে ভালোবাসেন৷ বিধানসভা ভোটপর্বের পুরোটাই হুইলচেয়ারে প্রচার করেছেন। ২ মে খাতা খুলতে দেখা গিয়েছে বাংলা তাঁর মেয়েকেই চায়। নরেন্দ্র মোদি বা অমিত শাহ্-এর বিজেপিকে চায় না। মে মাস থেকে জুলাই। মাত্র তিন মাসের মধ্যেই বাংলা ছেড়ে তাঁর বার্তা নিয়ে দিল্লি পৌঁছে গিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী। মমতার লড়াইয়ের স্পিরিট দেখে বিরোধীরাও বাড়তি অক্সিজেন পাচ্ছে।
মমতা বলেছেন জোট বাঁধতে। বলেছেন, এ বার লড়াই মোদির বিরুদ্ধে। প্রশ্ন ছিল সেই লড়াইয়ে বিরোধী মুখ হবেন কে? তৃণমূল নেত্রীর উত্তর, গণতন্ত্রকে বাঁচাতে, দেশকে বাঁচাতে মুখ পছন্দ করে নেবেন জনতাই। আগের চেয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী তিনি৷ যার ঝলক দেখা গিয়েছে এবারের দিল্লি সফরে মমতার বডি ল্যাঙ্গুয়েজে৷
আরও পড়ুন: তৃণমূলের ‘খেলা হবে’ স্লোগান নিয়ে গান লিখবেন জাভেদ আখতার
একুশের ভোটের ফল নিয়ে বিশেষজ্ঞেরা কাটাছেঁড়া করেছেন। নানান কারণের মধ্যে অন্যতম বড় কারণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ দেশের কোনও বিরোধী দল যা করতে পারেনি তা করে দেখিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের একটা আঞ্চলিক দল৷ যে দলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ ভাঙা পায়ে হুইলচেয়ারে বসে গোটা রাজ্য চষে বেরিয়েছিলেন তিনি৷ দিয়েছিলেন ‘খেলা হবে’ স্লোগান৷ খেলা শেষে। এ বার নতুন খেলার বার্তা নেত্রীর কথায়। রাজ্যে বিজেপির গোহারার পর মমতার পাখির চোখ দিল্লি৷ তবে স্পষ্টবক্তা মমতা খোলাখুলি জানিয়েছেন, এ কাজ তাঁর একার পক্ষে সম্ভব নয়৷ সমস্ত বিজেপি বিরোধী দলকে এক জোট হতে হবে৷
আর সেই জোট গঠনের কাজে সলতে পাকাতে পাঁচদিনের জন্য দিল্লি গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ দেখা করেছেন বিরোধী দলগুলির সঙ্গে৷ কথা হয়েছে সোনিয়া এবং রাহুল গান্ধীর সঙ্গেও৷ বিজেপি বিরোধী জোট গঠনে মমতার তৎপরতা দেখে রাজনৈতিক মহলের ধারনা জোটের অন্যতম মুখ মমতাই৷ সোনিয়ার সঙ্গে কথা হয়েছে। ছিলেন রাহুল গান্ধীও। বৈঠকের শেষে ১০ জনপথের চৌকাঠ পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে গিয়েছে গান্ধী পরিবার। তিন জন আলাদা আলাদা রাজনৈতিক চরিত্রের ছবি ধরা পড়েছে এক ফ্রেমে। সেই ছবি নিয়েও রাজধানীতে জোর চর্চা। বৈঠকের ফল যাই হোক, বিজেপি বিরোধী জোটে শেষপর্যন্ত কংগ্রেস থাক অথবা না থাক, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ বলছে মমতা এখন থেকেই অনেক ধীর, অনেক আত্মপ্রত্যয়ী।
আরও পড়ুন: দেশের মধ্যে পিছিয়ে বিহার, ‘ডবল ইঞ্জিন সরকার’ নিয়ে নীতীশকে খোঁচা আরজেডি-র
বিচক্ষণ মমতা ভালোই জানেন, তাঁকে জোটের সম্ভাব্য মুখ হিসেবে তুলে ধরা হলে অঙ্কুরেই বিনষ্ট হতে পারে তৃতীয় ফ্রন্ট গঠনের স্বপ্ন৷ তাই নিজের চেয়ে প্রাধান্য দিয়েছেন অন্য দলের নেতাদের৷ মমতা জানিয়ে দেন, ‘আমি লিডার নই, ক্যাডার৷’ সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলিকে তাদের রাজ্যে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামার পরামর্শ দিয়েছেন৷ বিশেষজ্ঞদের কথায়, মমতার আত্মবিশ্বাসই তলানিতে ঠেকে যাওয়া বিরোধীদের আত্মবিশ্বাস জোগাচ্ছে৷ দিল্লি সফরে মমতার শরীরী ভাষায় প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের ছায়া খুঁজে পাচ্ছেন রাজধানীর পোড় খাওয়া রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা।