Placeholder canvas
কলকাতা সোমবার, ০৯ জুন ২০২৫ |
K:T:V Clock
Fourth Pillar | এক দেশ এক নির্বাচন এবং মোদিজি’র মিথ্যাচার
কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক Published By:  কৃশানু ঘোষ
  • প্রকাশের সময় : মঙ্গলবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ১০:২০:০০ পিএম
  • / ৩১৩ বার খবরটি পড়া হয়েছে
  • কৃশানু ঘোষ

মানুষ প্রশ্ন করছে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে, প্রশ্ন করছে চাকরি নিয়ে, প্রশ্ন তুলছে বিরোধীরা, তাদের এক অংশ এক জায়গায় সংঘবদ্ধ হচ্ছেন। কাজেই মোদিজির সেই পুরনো ট্যাকটিক্স, পুরনো চাল, দৃষ্টিটাকে ঘুরিয়ে দাও। সেই মহাভারতের অশ্বত্থামার হাতে দুধের বদলে পিটুলি গোলা দিয়ে কান্না থামিয়েছিলেন দ্রোণাচার্য, সেইরকম। দ্রোণাচার্য তাঁর অক্ষমতা ঢাকতে এই কাজ করেছিলেন, ইনিও এঁর চূড়ান্ত অক্ষমতা ঢাকার জন্যই এরকম করে থাকেন। যেন নতুন এবং যুগান্তকারী কিছু একটা মানুষের সামনে এনে হাজির করছেন, সেইরকম ভাবে উনি এই এক দেশ এক নির্বাচনের কথা তুললেন। সাধারণত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিকে রাজনৈতিক বিতর্কের মধ্যে ডেকে আনা হয় না, কিন্তু সেই প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে এক কমিটি তৈরি করে এক দেশ এক নির্বাচন বিষয়টা খতিয়ে দেখার ব্যবস্থা করলেন। দেশসুদ্ধ লোক যে বিষয় নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত, সেই বিষয়ে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিকে টেনে আনা হল। অবশ্য মোদিজির কাছ থেকে সংসদীয় শিষ্টাচার আশা করাটাও এক বোকামো। কিন্তু এটা তো নতুন কিছু নয়। দু’ দুটো ল কমিশনে এই বিষয় নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা হয়েছে। ১৯৯৯ সালে প্রথমবার এই বিষয়টা হতে পারে বলে বলা হয়েছিল, কিন্তু ল কমিশন এটাও জানিয়েছিল যে এটা রাতারাতি করা সম্ভব নয়। ২০১৮ সালে ল কমিশন জানায় যে এটা সম্ভব নয়, এর জন্য আমাদের সংবিধানের বহু অংশে সংশোধন আনতে হবে, সংবিধানের এই কাঠামোতে এই এক দেশ এক নির্বাচন সম্ভব নয়। পার্সোনাল, পাবলিক গ্রিভান্সেস, ল অ্যান্ড জাস্টিস দফতরের পার্লামেন্টারি স্ট্যান্ডিং কমিটিতেও এই নিয়ে আলোচনা হয় ২০১৫ সালে। সেখানেও এক দেশ এক নির্বাচনের বদলে দুটো কি তিনটে ভাগে নির্বাচনের কথা বলা হয়েছিল, কিন্তু তারপরেও সংসদ ভেঙে যেতে পারে, কীভাবে সংসদ ভাঙতে পারে তা নিয়েও বিস্তর আলোচনা হয়েছিল। ২০১৮-তে নীতি আয়োগ থেকেও এই বিষয়ে বহু আলোচনা ইত্যাদির পরে জানানো হয় দু’ বারে নির্বাচন করা সম্ভব কিন্তু তার জন্যও সংবিধান সংশোধন করতে হবে। 

মোদিজিও এই কথা আজ প্রথমবার বললেন না। ২০১৯-এ ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতা দিবসে বক্তৃতা দেওয়ার সময়েই এই কথা বলেছিলেন। পুরনো দাদ হাজা একজিমার মতো এই চুলকানি আজকের নয়, এটা ফিরে ফিরে এসেছে বহুবার। ভাবখানা হল দেশ নিয়ে তো কেউ ভাবেনি, মোদিজিই একা ভাবছেন, মানুষের কত টাকা খরচ হয় এই রাজ্য আর দিল্লির ইউনিয়ন গভর্নমেন্ট নির্বাচনের জন্য, তাই খরচ বাঁচাতেই এই ব্যবস্থা। ভক্তরা সঙ্গে সঙ্গে মাঠে নেমে পড়েছেন, এক দেশে একই সঙ্গে ভোট হবে, দেশে এই প্রথম, জয় মোদিজি, মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়। তাদের কে বোঝাবে যে দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে দু’ দুটো নির্বাচন এভাবেই হয়েছে। হ্যাঁ, ১৯৫২ আর ১৯৫৭ সালের নির্বাচনে কেন্দ্র আর রাজ্যের নির্বাচন মোটামুটি একসঙ্গেই হয়েছে, ওই কেরল বাদ গিয়েছিল। কিন্তু তারপরে কি নেহরু চক্রান্ত করে সব আলাদা করে দিলেন? না তা তো নয়। দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন নির্বাচন হতে শুরু করল। কারণ কোয়ালিশন সরকার হল, ভাঙল, নির্বাচিত সরকার এল, পুরো টার্ম শেষ করার আগেই তা ভাঙল, কাজেই নতুন করে নির্বাচন করাতে হল, মানে একই সঙ্গে নির্বাচন হওয়ার শৃঙ্খলাটা ভেঙেছে রাজনৈতিক বাস্তবতা মেনেই। আজ যদি, কীভাবে সম্ভব জানি না, কিন্তু যদি সবকটা রাজ্য আর কেন্দ্র সরকারের নির্বাচন একসঙ্গে করে দেওয়াও যায়, কাল সেই বাস্তবতা আবার ফিরে ফিরে আসবে, আবার সরকার ভাঙবে, আবার জোড়াতালি দিয়ে সরকার তৈরি হবে, আবার ভাঙবে আবার নির্বাচন হবে অসময়ে। কাজেই এক দেশ এক নির্বাচন যদি করতেই হয়, তাহলে প্রথম সমস্যা হল কবে থেকে করা হবে? ধরুন বলা হল ডিসেম্বর থেকে করা হবে, তাহলে কর্নাটকে কী হবে? এই তো ক’দিন আগে মানুষ ৫ বছরের জন্য নির্বাচিত করেছে নতুন সরকারকে, সেই সরকার ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন হবে? আমাদের বাংলার কী হবে? আমাদের সরকারের চলার কথা ২০২৬ পর্যন্ত। তার আগে নির্বাচন মেনে নেবে শাসকদল? ধরুন করা হল, কোনও গ্যারান্টি আছে যে প্রত্যেক রাজ্য সরকার পূর্ণ আর স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে? যদি না পায় সেক্ষেত্রে জোড়াতালি সরকার হবে, তার চেষ্টাও যদি না ফল দেয়? তাহলে? ধরুন সরকার চলল এক বছর, তারপর দলের মধ্যে মতবিরোধে সরকার পড়ে গেল, কী হবে? বাকি চার বছর রাষ্ট্রপতি শাসন? মানে সেক্ষেত্রেও চার বছর রাজ্যের মানুষজন নির্বাচিত সরকার পাবে না? একই বিষয় কেন্দ্রের সরকার নিয়েও হতেই পারে। সেই সরকারও ভাঙতেই পারে। 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | ইন্ডিয়া জোটের মুম্বই বৈঠক আদতে ঘোড়ার ডিম প্রসব করল 

আচ্ছা এই সহজ সরল বিষয়টা কি মোদিজি জানেন না? নাও জানতেই পারেন, যে মস্তিষ্ক থেকে ডিমনিটাইজেশনের মতো উদ্ভট পরিকল্পনা আসতে পারে, যে মাথা ভাবে মেঘের আড়াল থাকলে রাডারকে ফাঁকি দেওয়া যায়, সেই মাথায় এমন আজগুবি চিন্তা থাকতেই পারে। আর থাকতে পারে মহান হওয়ার তীব্র বাসনা, কেউ করেনি, আমি করে দেখিয়ে দিলাম, তারপর যা হবে দেশ বুঝবে। কিন্তু আমাকে যদি ব্যক্তিগতভাবে জিজ্ঞেস করেন তাহলে আমি বলব যে এটা উনি জানেন, উনি দেশের মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতে চাইছেন, ঠিক যে সময় বিরোধীরা মুম্বইয়ে বৈঠকে বসেছেন, সেই সময়ে এই বিষয়টাকে রেখে মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়া, যাকে ইদানিং হেডলাইন ম্যানেজমেন্ট বলা হয়, সেটাই করছেন মোদিজি। আবার অন্য আরেকটা বিষয়ও থাকতেই পারে, সেটা আরও সাংঘাতিক। এমনিতেই আরএসএস–বিজেপি, মোদি–শাহের এই নির্বাচন, গণতন্ত্র, সংবিধান ইত্যাদি নিয়ে কোনও মাথাব্যথা নেই, ওঁরা সংবিধানের মূল কাঠামোটাকেই ধ্বংস করতে চান, সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে এই এক দেশ এক নির্বাচন চালু করলে ওঁদের সুবিধের তালিকাটা একবার দেখুন। যে কোনওভাবে একবার বিরোধী রাজ্য সরকার ভেঙে ফেলতে পারলে তারপরের বছরগুলো নিশ্চিন্ত। রাজ্যপালের শাসন মানে তো কেন্দ্রের শাসন, তার মানে কেন্দ্রের কথা মেনে চলো, না হলে এমএলএ কিনে বা অন্য যে কোনও অজুহাতে সরকার ভাঙব, তারপর দাড়িওলা রামছাগল, থুড়ি রাজ্যপাল তো আছেন, তাঁকে সামনে রেখে রাজ্য শাসন চলবে। দু’ নম্বর হল রাজ্যে ওঁর দলের কেউ না থাকলেও চলবে, কেন্দ্রে মোদি, শাহ, যোগী গোছের একজন থাকলেই হবে, তাঁর মুখই ভাসবে সর্বত্র, তিনিই পোস্টার বয়। আমাদের ফেডেরাল স্ট্রাকচার, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো হয়ে দাঁড়াবে এক দেশ এক নেতা এক ভাষা, এক ধর্মের পীঠস্থান। আমেরিকার প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনের মতো একটা ব্যবস্থা তিনি চাইছেন, বিজেপি চাইছে। একজন নেতা যিনি অনর্গল বিষ ছড়াবেন, ঘৃণা ছড়াবেন, স্ট্রিট স্মার্ট যুক্তি দিয়ে মন ভোলাবেন, তিনিই দেশের একচ্ছত্র নেতা হবেন। এবং রিসোর্স, মানে নির্বাচন জেতার টাকা পয়সা। এমনিতে এখনই বিজেপি কর্পোরেট ইলেক্টোরাল বন্ড-এর ৯৫ শতাংশ পেয়ে যাচ্ছে, অন্যদের তুলনায় তার মানি পাওয়ার এত বড় যে কোনও তুলনাই হয় না। সেই তাঁরা দু’ হাতে টাকা নিয়ে নামবেন ভোট করাতে, তাদের সামনে বাকি রাজনৈতিক দলগুলোকে বামন মনে হবে। তাই বিজেপির সরকার এই এক দেশ এক নির্বাচন আনতে চায়, সত্যি করেই চায়। এর ফলে তাঁদের দলেরও সুবিধে, একজন নেতা হলেই চলবে, তাঁর কোনও চ্যালেঞ্জার থাকবে না, তিনিই মুখ, তিনিই মুখোস। 

গণতন্ত্রের সমস্ত ধারণার ঠিক উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে আছে এই আরএসএস–বিজেপি। তারা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে ছিল না, ছিল তো না-ই বরং বিরোধিতা করেছে, বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, তারা আমাদের সংবিধানের বিরোধিতা করেছে, আমাদের জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীতের বিরোধিতা করেছে। আজ তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ, এবং সেই সুবাদেই তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে হাতিয়ার করেই দেশের সংবিধানের মূল কাঠামোটাকেই ধ্বংস করতে চায়, তা আজ স্পষ্ট। সেই চেষ্টাকে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্যই এই এক দেশ এক নির্বাচনের কথা বলা। যাঁরা নিজেরা কোনওদিন কোনও নির্বাচনে বিশ্বাসই করে না, তাঁরা নির্বাচনের কথা বলছে। আপনি কি শুনেছেন কোনও আরএসএস সরসঙ্ঘচালক নির্বাচিত হয়? না, নির্বাচনের কোনও ব্যবস্থা নেই। আপনি কি বিজেপির জাতীয় সভাপতি থেকে শুরু করে কোনও পদাধিকারীকে নির্বাচিত হতে দেখেছেন? কিছুদিন আগেই কংগ্রেস দলের সভাপতির নির্বাচন হয়ে গেল, এর আগেও হয়েছে। বিজেপির হয়? না হয় না, সবটাই মনোনীত। সেই অগণতান্ত্রিক দল আজ ভেক ধারণ করে দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোকে চুরমার করার জন্যই এই এক দেশ এক নির্বাচনের স্লোগান দিয়েছে। যদিও চোখ বুজে বলে দেওয়া যায়, তাদের এই পরিকল্পনা কোনওদিনই সফল হবে না, আমাদের দেশের গণতন্ত্রের শিকড় অনেক অনেক গভীরে, কোনও খাকি উর্দি, ব্রাউন শার্টের দল সেই গণতন্ত্রের কাঠামোকে ধ্বংস করতে পারবে না।      

 

পুরনো খবরের আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০ ১১ ১২ ১৩ ১৪
১৫ ১৬ ১৭ ১৮ ১৯ ২০ ২১
২২ ২৩ ২৪ ২৫ ২৬ ২৭ ২৮
২৯ ৩০  
আর্কাইভ

এই মুহূর্তে

সাড়ে ৬ হাজার ছুঁইছুঁই দেশে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা
সোমবার, ৯ জুন, ২০২৫
আরামবাগে ফুচকা খেয়ে অসুস্থ বহু শিশু ও মহিলা
সোমবার, ৯ জুন, ২০২৫
পদপিষ্টের ঘটনায় মামলা খারিজের দাবিতে কর্নাটক হাইকোর্টে আরসিবি
সোমবার, ৯ জুন, ২০২৫
নবান্ন থেকে বড় বার্তা মুখ্যমন্ত্রীর, কি বললেন তিনি দেখুন..
সোমবার, ৯ জুন, ২০২৫
এবার পুরীতে নিষিদ্ধ মদ ও আমিষ খাবার! সমুদ্রের ধারে আর বসবে না মাছ ভাজার স্টল!  
সোমবার, ৯ জুন, ২০২৫
সোমবার, ৯ জুন, ২০২৫
সোমবার, ৯ জুন, ২০২৫
গোরুমারা জঙ্গল বন্ধ হতে আর সাতদিন, ভিড় পর্যটকদের
সোমবার, ৯ জুন, ২০২৫
দুই সাংবাদিকের গ্রেফতারিতে স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট
সোমবার, ৯ জুন, ২০২৫
ডিনারে পরোটার সঙ্গে খান পনির মির্চি মশলা!
সোমবার, ৯ জুন, ২০২৫
কেরলের উপকূলে সিঙ্গাপুরের পণ্যবাহী জাহাজে রহস্যজনক বিস্ফোরণ! পুড়ছে গোটা জাহাজ
সোমবার, ৯ জুন, ২০২৫
শিক্ষাখাতের টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র! কী বলল সুপ্রিম কোর্ট?
সোমবার, ৯ জুন, ২০২৫
আরজি কর আন্দোলনে যুক্ত চিকিৎসকদের ট্রান্সফার নিয়ে মামলা হাইকোর্টে
সোমবার, ৯ জুন, ২০২৫
জলপাইগুড়ি-শিয়ালদহ সরাসরি ট্রেন, কবে থেকে যাত্রা শুরু?
সোমবার, ৯ জুন, ২০২৫
স্বচ্ছ কালো পোশাকে স্পষ্ট নোরার বক্ষ বিভাজিকা!
সোমবার, ৯ জুন, ২০২৫
© R.P. Techvision India Pvt Ltd, All rights reserved.
Developed By KolkataTV Team