বৃষ্টিতে ভিজে ঘরে ফিরেই গরমাগরম চা বা কফির সঙ্গে পছন্দের মুখরোচক৷ তা পেয়াজি হোক বা শিঙাড়া, সন্ধ্যেটা জমে যায়! আর তারপর যদি মেনুতে থাকে খিচুড়ি আর ডিমভাজা, কেয়া বাত! এর বেশি আর কে চায়? এর বেশি চাওয়াটা ঠিকও না। তবে রাস্তাঘাটে দোকানের ছাদ থেকে চুঁইয়ে পড়া নোংরা জল, কাদা জল, ভেজা স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া আর একগুচ্ছ জীবাণু ও সংক্রমণের আশঙ্কা যে নিমেষেই বর্ষা নিয়ে এত শখ-আহ্লাদ মাটি করে দিতে পারে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সময় খাবার নিয়ে বাড়তি সতর্ক থাকার প্রয়োজন। তাই বর্ষাকালে কী খাবেন আর কী খাবেন না এই নিয়ে রয়েছে বিস্তর মতভেদ। সুস্থ থাকতে রইল বর্ষাকালের খাওয়া-দাওয়া নিয়ে নানা মুনির নানা মতের সরলীকরণ।
১. বর্ষাকালে সি ফুড, প্রশ্নই ওঠে না! সত্যি তাই কি?
খারাপ আবহাওয়া ও সমুদ্রের জল ফুলেফেঁপে ওঠায় সাধারণত বর্ষাকালে খুব একটা সমুদ্রে যান না মৎস্যজীবীরা। সেক্ষেত্রে টাটকা মাছ পাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে বেশ কম। এই সময় বাজারে যা পাওয়া যায় অধিকাংশই বাসি বা ফ্রোজেন। আর এই ঠান্ডায় জমিয়ে রাখার পদ্ধতিতে কোনও ত্রুটি থাকলে তার প্রভাব পড়তে পারে আপনার শরীরে। পেটে জীবাণু সংক্রমণের সম্ভাবনাও দেখা দিতে পারে। তবে টাটকা সামুদ্রিক মাছ বর্ষাকালে খাওয়া যেতেই পারে। তবে সেক্ষেত্রে ভালভাবে রান্না করে খাওয়াটাই ভাল।
২. বর্ষাকালে দই নৈব নৈব চ ?
অনেকের ধারণা বর্ষাকালে দই খেলেই বিপদ। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে বরং বর্ষাকালে দই খাওয়া উচিত। কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, দইয়ে প্রচুর পরিমাণে ন্যাচারাল প্রোবায়োটিকস থাকে। এই উপাদান অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। সাধারণত এই সময় আবহাওয়ায় স্যাঁতসেঁতে ভাব, আর্দ্রতা ও তাপমাত্রার হেরফেরে খাবার খুব সহজেই খারাপ বা সংক্রমিত হতে পারে। সেক্ষেত্রে অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভাল থাকলে হজম প্রক্রিয়া ঠিক থাকে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলার ক্ষেত্রেও দই যথেষ্ট উপকারী।
৩. যতই উপকারী হোক না কেন, শাক পাতা দূরে রাখাই ভাল
বর্ষাকালে শাকপাতায় ছোট পোকামাকড় ও জীবাণু থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই এক্ষেত্রে এগুলি এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। আর ফল ও তরিতরকারি ভাল করে কচলে ধুয়ে নেওয়া প্রয়োজন। যাঁদের পেটের সমস্যা রয়েছে তাঁরা খেতে চাইলে গরম জলে ধুয়ে বা হাল্কা ফুটিয়ে নিতে পারেন।
৪. আইসক্রিম বর্ষাকালেও ?
বিশেষজ্ঞদের মতে, খাওয়া যেতেই পারে৷ যদি জ্বর বা সর্দিকাশির মতো সমস্যা না থাকে। তবে রাস্তার কুলফি না-খেয়ে ভাল ব্র্যান্ডের আইসক্রিম খাওয়া ভাল। অন্তত সেগুলি স্বাস্থ্যকর ভাবে তৈরি করা হয়।
তবে কাঁচা খাবার, দীর্ঘক্ষণ কেটে ফ্রিজের বাইরে রাখা স্যলাড, রান্নাকরা খাবার দীর্ঘক্ষণ ধরে বাইরে পড়ে থাকলে সেগুলি না খাওয়াই ভাল। এ ছাড়া খুব বেশি তেল-মশলার খাবার এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। সূর্যের রোদের উপর নির্ভরশীল আমাদের হজম প্রক্রিয়া। বর্ষাকালে মেঘলা আকাশ বা একটানা বৃষ্টির প্রভাব পড়ে আমাদের শরীরের উপর৷
এ ছাড়া বর্ষাকালে স্ট্রিট ফুডের দিকে একদমই নজর না দেওয়া শ্রেয়। পাশাপাশি নিয়ম মেনে জল খেলে দেখবেন বর্ষাকালের একগুচ্ছ জীবাণুর মধ্যেও আপনি দিব্যি সুস্থ্ রয়েছেন।