বাঘ কেন মানুষ খায়?
সত্যি বলতে বাঘ মানুষ খেতে শুরু করে এক প্রকার বাধ্য হয়েই। কোনও রকম আঘাত বা জরাগ্রস্ত হয়ে যখন বাঘ পড়ে এবং স্বাভাবিক ক্ষিপ্রতা হারিয়ে ফেলে তখন মানুষ না খেয়ে তার আর কোনও উপায় থাকে না। প্রায়শই দেখা যায়, শিকারির লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে বা বাঘ সজারু মারতে গিয়ে মারাত্মক রকম আহত হয়েছে। আসলে মানুষ বাঘের স্বাভাবিক শিকার মোটেই নয়। নেহাতই বার্ধক্য বা আঘাতের ফলে অক্ষম হয়ে পড়লে তাকে বাধ্য হয়ে প্রাণধারণের জন্য মানুষের মাংস আহার করতে হয়।
আরও পড়ুন-চতুর্থ স্তম্ভ: গ্রাফ নামছে, পতন অনিবার্য
বাঘ ওত পেতে বসে থাকে, কখন শিকার তার কাছে এসে ধরা দেবে। অতএব শিকারকে দেখে তার ঝাঁপিয়ে পড়া, তার ক্ষিপ্রতা, দাঁত নখের ধারের ওপর অনেকটাই নির্ভর করে। জখমের ফলে বাঘ যখন কাবু হয়ে পড়ে তখন তার দাঁত, নখ অকেজো হয়ে যায়। আর স্বাভাবিক শিকার তখন সে ধরে উঠতে পারে না, হয়ে ওঠে মানুষখেকো।
আরও পড়ুন- এখনও ভয় দেখাচ্ছে ‘আর ফ্যাক্টর’, ৩১ অগস্ট পর্যন্ত বাড়ল বিধিনিষেধ
অনেকেই হয়তো কমবেশি জিম করবেট পড়েছেন। তাঁর প্রায় সব কাহিনি বাঘের উপর। একদিন তাঁর গল্পে জিম করবেট বলছেন, মুক্তেশ্বরের মানুষখেকো বাঘের কথা। অল্পবয়সী এক বাঘিনির চোখ সজারু মারতে গিয়ে খোয়া যায়। ১ ইঞ্চি থেকে ৯ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা ৫০ টি কাটা তার সামনের পায়ের তলায় বিঁধে যায়। যেসব জায়গায় কাটা আটকে ছিল সেই কাটা বের করতে গিয়ে বাঘের গায়ে তৈরি হয় ক্ষত। এমন সময় ক্ষুধার্ত অবস্থায় জঙ্গলে ঝোপের মধ্যে বসেছিল। সেই সময় একটি মেয়ে গরুর ঘাস কাটতে এসে পড়বি তো পড় বাঘের মুখে। প্রথমে বাঘিনির চোখ মেয়েটির দিকে না গেলেও নাগালের মধ্যে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাঘিনি থাবার ঘায়ে মেয়েটির মাথার খুলি চুরমার করে দিয়েছিল।
ঠেকায় না পড়লে বাঘে মানুষ মারে না, একথা গল্প থেকেই বোঝা যাচ্ছে। যে বাঘ সদ্য শিকারের উপর বসেছে বা আহত হয়েছে বা বাঘের বাচ্চা তার সঙ্গে রয়েছে তাকে যদি সেই সময় বিরক্ত করা হয় তা হলে মানুষ মারতে পারে কিন্তু বাঘকে মানুষখেকো বলা চলবে না।
সাধারণত, কোনও জন্তুর হাতে মারা গেলে সন্দেহ হয় তাকে কে মেরেছে ? বাঘে মেরেছে, না চিতাবাঘে মেরেছে। বলা যায়, দিনের শিকার বাঘের আর রাতের শিকার চিতাবাঘের। বাঘ ও চিতাবাঘ দুটোই রাতদিন জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়। ধরনের মিল আছে। এরা অনেক দূর পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে শিকার। এসবের কারণে মনে হতেই পারে যে এরা শিকারও করবে একই সময়ে। তা যে করে না তার কারণ এদের সাহস সমান নয়।
আরও পড়ুন- চতুর্থ স্তম্ভ: গ্রাফ নামছে, পতন অনিবার্য
বাঘ যখন মানুষখেকো হয়ে পড়ে তখন সে আর কোনো তোয়াক্কাই করে না। আর মানুষ রাতের চেয়ে দিনের বেলাতেই বেশি চলাফেরা করে বলে বাঘ দিনের বেলাতেই শিকার ধরতে পারে। রাতে বেরোনোর আর দরকার পড়ে না। আর দিনের বেলায় চিতাবাঘ মানুষের সামনে আসতে সাহস পায় না বলেই রাতে চুপিসাড়ে কাজ সারে।
জিম করবেট বলতেন, যে কোনও শিকারি মেনে নেবেন যে, বাঘ পুরোদস্তুর ভদ্রলোক। তার সাহসের কোনও তুলনা নেই। প্রাণীজগৎ থেকে বাঘ যেদিন লোপ পেয়ে যাবে সেদিন ভারতবর্ষের যে অপূরণীয় ক্ষতি হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর বাঘকে যদি আমরা বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করার ব্যবস্থা না করি, তা হলে সে যে কালক্রমে লোপ পাবে একথাও নিশ্চিত।