কলকাতা: আজ বুধবার সন্ধে ৬টা ৪ মিনিটে চাঁদের মাটিতে পা রাখা কথা চন্দ্রযান ৩-এর (Chandrayaan-3) ল্যান্ডার বিক্রমের (Vikram Lander)। দেশ-বিদেশের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন সেই মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য। ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর (ISRO) অভিযানের সাফল্য কামনায় চলছে প্রার্থনা। অন্যান্য চন্দ্রাভিযানের থেকে এই মিশন অনেকটা কঠিন, কারণ চাঁদের নিরক্ষরেখা এলাকা নয়, চন্দ্রযানের ল্যান্ডার অবতরণ করবে দক্ষিণ মেরুর কাছে। কঠিন হওয়ার কারণ এই জায়গাটি অত্যন্ত বন্ধুর, একাধিক জ্বালামুখ, বড় বড় গর্তে ভর্তি।
যুগান্তকারী অ্যাপোলো মিশন (Apollo Mission) সহ একাধিক চন্দ্রাভিযানে অবতরণ হয়েছিল নিরক্ষরেখার কাছে, যে জায়গাটা তুলনামূলক নিরাপদ। কিন্তু সাম্প্রতিক কালে আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি, সবাই দক্ষিণ মেরুকেই চাঁদমারি বানিয়েছে। এর কারণ কী?
আরও পড়ুন: চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা, চন্দ্রযান সফল হলে মোদির ‘বিক্রম’ই হবে বিজেপির ‘প্রচার-প্রজ্ঞান’
প্রথম অ্যাপোলো ল্যান্ডিংয়ের আগে পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল চাঁদে জল থাকতে পারে। কিন্তু অ্যাপোলো মিশনে চাঁদের মাটির যে সমস্ত নমুনা আনা হয়েছিল তা ছিল ‘শুষ্ক’। এরপর অনেকগুলো বছর পেরিয়ে গিয়েছে। ২০০৮ সালে নতুন প্রযুক্তির আলোয় আগের নমুনাগুলো পরীক্ষা করেন ব্রাউন ইউনিভার্সিটির (Brown University) গবেষকরা। ভলক্যানিক কাচের মধ্যে হাইড্রোজেনের অস্তিত্ব খুঁজে পেলেন তাঁরা। পরের বছর ইসরোর চন্দ্রযান অভিযানের সঙ্গী হয়েছিল নাসার (NASA) এক অত্যাধুনিক যন্ত্র। চাঁদের মাটিতে জলের অস্তিত্ব টের পায় সেই যন্ত্র।
Chandrayaan-3 Mission:
Here are the images of
Lunar far side area
captured by the
Lander Hazard Detection and Avoidance Camera (LHDAC).This camera that assists in locating a safe landing area — without boulders or deep trenches — during the descent is developed by ISRO… pic.twitter.com/rwWhrNFhHB
— ISRO (@isro) August 21, 2023
সেই বছরই (২০০৯) নাসার যান চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে গিয়ে জলীয় বরফের সন্ধান পায়। তার অনেক আগেই (১৯৯৮ সাল) নাসারই লুনার প্রসপেক্টর (Lunar Prospector) প্রমাণ পেয়েছিল, দক্ষিণ মেরুর ছায়াঘন জ্বালামুখগুলিতে জলীয় বরফ আছে। জল বা জলীয় বরফের অস্তিত্বের জন্যই মহাকাশ বিজ্ঞানীদের চাঁদের দক্ষিণ মেরুর যাওয়ার এত প্রচেষ্টা।
এখন প্রশ্ন হল, জল পাওয়া গেলে কী হবে?
উত্তর, চাঁদের জল বা জলীয় বরফ খুঁজে পাওয়া গেলে তা হবে মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক যুগান্তকারী ঘটনা।
প্রথমত, কোটি কোটি বছরের পুরনো জলীয় বরফের গবেষণা করে চাঁদের আগ্নেয়গিরি, পৃথিবীতে ধূমকেতু এবং গ্রহাণু কী বয়ে এনেছে এবং মহাসমুদ্রের উৎস কী, এই সব জানা যাবে। দ্বিতীয়ত, জলীয় বরফ যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে তা চন্দ্রাভিযানে যাওয়া মহাকাশচারীদের পানীয় জলের উৎস হতে পারবে। যন্ত্রাপাতি ঠান্ডা করতেও কাজে লাগবে এই জলীয় বরফ। তৃতীয়ত, জলের অণু ভেঙে হাইড্রোজেন দিয়ে জ্বালানি উৎপাদন করা যাবে এবং পড়ে থাকা অক্সিজেন মহাকাশচারীদের কাজে লাগবে। এই সমস্ত ব্যবস্থা যথাযথ হলে, মঙ্গল গ্রহে অভিযানের জন্য বেস ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে চাঁদকে।