লন্ডন: এক বা দুটি নয়, মাত্র একবছরের মধ্যে ৭ নবজাতককে (Newborn Baby) হত্যা করেছেন তিনি। পাশাপাশি আরও ৬ শিশুকে খুনের চেষ্টা। পেশায় তিনি একজন নার্স (Nurse)। মহান এই পেশায় থেকে একে একে সাত শিশুকে হত্যা করেন তিনি। নিওন্যাটাল বিভাগের শিশুদের খুনের অভিযোগে অবশেষে গ্রেফতার করা হয়েছে লুসি লেটবি নামের ৩৩ বছর বয়সি এক নার্সকে। ঘটনাটি ঘটেছে ব্রিটেনে। এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে দেশজুড়ে।
জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত নার্সের নাম লুসি লেটবি (৩৩)। গত অক্টোবর মাস থেকে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা চলছিল। ওই নার্স প্রিন্যাটাল বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, হাসপাতালে অসুস্থ বা যে সমস্ত শিশু অপরিণত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করত, তাদের হাওয়া ভরা ইঞ্জেকশন দিয়ে, কখনও বা অতিরিক্ত দুধ খাইয়ে কিংবা ইনসুলিন দিয়ে বিষক্রিয়ায় মেরে ফেলত। উত্তর ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টার ক্রাউন কোর্টে ২২ দিন ধরে আলোচনার পর তার বিরুদ্ধে চুড়ান্ত রায় দেওয়া হয়েছে। কয়েকজন শিশুকে একাধিকবারের প্রচেষ্টায় মৃত্যু নিশ্চিত করেন তিনি। পাঁচ ছেলেশিশু ও দুই মেয়েশিশুকে হত্যা এবং আরও কয়েকজন নবজাতককে হত্যায় অভিযুক্ত হন তিনি।
আরও পড়ুন:ছেলে গ্রেফতার হয়েছে, শোনার পর থেকেই অসুস্থ মা
জানা গিয়েছে, উত্তর-পশ্চিম ইংল্যান্ডের চেস্টার হাসপাতালে ২০১৫ সালের জুন মাস থেকে ২০১৬ সালের জুন মাসের মধ্যে একাধিক শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। রাতের শিফটে কাজ করার সময় লুসি একের পর এক শিশুকে হত্যা করেছেন বলে জানা গিয়েছে। এরপরই লুসি লেটবি নামক ওই নার্সকে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু সেই সময়ে নার্স যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে। তার বিরুদ্ধে বিশেষ কোনও প্রমাণও ছিল না। তবে ওই নার্সের সহকর্মীরাই তাঁর বিরুদ্ধে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তারা জানান, যে ক’টি শিশুর মৃত্যু হয়েছিল, প্রতিটি শিফটেই লুসি দায়িত্বে ছিল। কিন্তু, লুসি নিজেই সহকর্মীদের বোঝাতেন যে গোটা বিষয়টিই দুর্ভাগ্যজনক। এর পিছনে কারোর হাত নেই। লুসির শেষ শিকার ছিল ত্রিপলেট শিশু। পরপর দু’দিনে দুই শিশুর মৃত্যু হয়। তৃতীয় শিশুটিকেও মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন লুসি, কিন্তু ওই শিশুটি বেঁচে যায়। ম্যানচেস্টার ক্রাউন কোর্টে কয়েক মাস ধরে চলা এই মামলার রায়ে তাকে সবচেয়ে ঠান্ডা মাথার সিরিয়াল শিশু হত্যাকারীদের একজন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এদিকে, দু’বার ওই নার্সকে গ্রেফতার করা হলেও, উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে দু’বারই ছেড়ে দেওয়া হয় তাঁকে। তৃতীয়বার ২০২০ সালে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ হাসপাতালের বিভিন্ন নথি উদ্ধার করে। সঙ্গে হাতে লেখা একটি চিরকুটও উদ্ধার করে, যাতে লেখা ছিল “আমি ওদের খুন করেছি, কারণ ওদের যত্ন নেওয়ার মতো যথেষ্ট ভালোমানুষ আমি না। আমি ভীষণ খারাপ মানুষ”। তাতে আরও লেখা “আমি শয়তান আমিই এ কাজ করেছি”। তবে আদালতে যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেন লুসি। আদালতে তিনি দাবি করেন, অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রমী ছিলেন তিনি এবং নিজের কাজকে খুব ভালবাসতেন। চারজন সিনিয়র চিকিৎসক হাসপাতালের ব্যর্থতা ঢাকতে তাঁর ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন।