নয়াদিল্লি: পাঁচ রাজ্যে জয়ের আশা আছে, এমন প্রার্থী খুঁজে বের করতে অন্তর্তদন্ত শুরু করতে চলেছে ভারতীয় জনতা পার্টি। এই তদন্তে বিধানসভা ভোটে জয়ের সম্ভাবনা আছে এমন প্রার্থীমুখ এবং তাঁদের সম্পর্কে জনমানসের প্রতিক্রিয়া, স্বচ্ছ ভাবমূর্তি এইসব ধরা পড়বে। যার রিপোর্ট পৌঁছে দিতে হবে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে। এর ভিত্তিতেই মিজোরাম, তেলঙ্গানা, ছত্তিশগড়, রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশের বিধানসভা ভোটে প্রার্থী বাছাই করবে বিজেপি। যদিও তার আগেই বৃহস্পতিবার মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তিশগড়ের জন্য কয়েকজন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দিল পদ্ম শিবির। নির্বাচন কমিশন ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশের অনেক আগেই রাজনীতির আসরে চমক লাগাল কেন্দ্রের শাসকদল।
এদিন প্রায় আচমকাই ২৩০ সদস্যবিশিষ্ট মধ্যপ্রদেশের ৩৯ এবং ৯০ সদস্যবিশিষ্ট ছত্তিশগড়ের ২১ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে মধ্যপ্রদেশে দল ক্ষমতায় এবং ছত্তিশগড়ে বিরোধী দল তারা। দুই রাজ্যেই মহিলা প্রার্থী রয়েছেন মাত্র ৫ জন করে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পৌরোহিত্যে বুধবার কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটির বৈঠক বসেছিল বিজেপির সদর দফতরে। সেখানেই পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোটকে পাখির চোখ করে গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: বিজেপি প্রার্থীকে ফুল দিতে গিয়ে লাথি খেলেন প্রাক্তন জেলা সহ-সভাপতি
বৈঠকে ঠিক হয়েছে, এই পাঁচ রাজ্যে দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের কার কতটা জেতার সুযোগ বেশি তা নির্ধারণ করতে যাবেন ৩৫০ জন বিধায়ক। উল্লেখ্য, এঁরা সকলেই ভিনরাজ্য থেকে যাবেন। বিজেপি শাসিত অন্য রাজ্য থেকে এই ৩৫০ জন বিধায়ককে নির্বাচন করা হবে সমীক্ষা-কাজের জন্য। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এর মধ্যে ১৬০ জন যাবেন উত্তরপ্রদেশ থেকে, গুজরাত ও বিহারের ১৫০ জন, মহারাষ্ট্রের ৪৫ জন। আগামী ১৮ অগাস্ট মধ্যপ্রদেশের ভোপালে এই বিধায়কদের ডাকা হয়েছে। সেখানে পুরো বিষয়টি বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, দলের সভাপতি জেপি নাড্ডা ছাড়াও দলের তাবড় নেতারা আলোচনায় ছিলেন। উল্লেখ্য, বিজেপির কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিটিই ভোটের প্রার্থী ঠিক করা সহ রণকৌশল, প্রচার, প্রচারের তারকা বক্তা ইত্যাদি ঠিক করে। হিমাচল প্রদেশ, কর্নাটকে দলের বিপর্যয়ের পর নির্বাচন কমিটির দায়িত্ব আরও বেড়ে গিয়েছে। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে রদবদলের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
বিজেপির চিলচোখ রয়েছে মিজোরাম, ছত্তিশগড়, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ এবং তেলঙ্গানার দিকে। এরমধ্যে ছত্তিশগড়, রাজস্থানে কংগ্রেস সরকার রয়েছে। অন্যদিকে, তেলঙ্গানায় অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি সরকার শাসন করছে। একমাত্র মধ্যপ্রদেশে বিজেপি ক্ষমতায় থাকলেও সেখানে ইতিমধ্যেই সরকার-বিরোধী হাওয়া বইছে। মণিপুরের ঘটনার পর মিজোরামের মানুষের মধ্যেও একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কারণ মণিপুরের কুকি-জো সম্প্রদায়ের মানুষ মিজোদের জ্ঞাতি সম্প্রদায়। মণিপুর ইস্যুতে মিজোরামের শাসকদল মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট সম্প্রতি অনাস্থা প্রস্তাবে বিজেপির বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। অন্যদিকে, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইন্ডিয়া জোটও বিধানসভা ভোটগুলির ক্ষেত্রে কী চাল নেয়, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এই পরিস্থিতিতে লোকসভা নির্বাচনের আগে এতগুলি রাজ্যের ভোট বিজেপির কাছে এক বিশাল অগ্নিপরীক্ষা।
বিজেপির অন্দরের খবর, যে কেন্দ্রগুলিতে দল দুর্বল সেগুলির বিষয়ে জোরাল আলোচনা হবে। সেখানে কাকে দাঁড় করানো যায়, তা নিয়েও কৌশল ঠিক হতে পারে। কারণ দলের নেতারা চাইছেন দুর্বল কেন্দ্রগুলিতে জোর দিতে। বৈঠকে রাজ্যভিত্তিক ইস্যু ঠিক করার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বা সঙ্কল্পপত্রের বিষয়বস্তু নিয়েও কথা হবে কেন্দ্রীয় নির্বাচনী কমিটির বৈঠকে।