কলকাতা: বুধবার বিকেলে যাদবপুরকাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু এবং ডিন অফ স্টুডেন্টস রজত রায়কে ডেকে পাঠানো হয় লালবাজারে। সেই মতো রেজিস্ট্রার বিকেলে হাজিরা দিলেও যাননি ডিন। পুলিশ সূত্রে খবর, পড়ুয়ারা ঘেরাও করে রাখার কারণে তিনি লালবাজারে যেতে পারেননি। পুলিশ সূত্রে খবর, ছাত্রমৃত্যুর ঘটনার তদন্তে বুধবার বিকেল ৩টে নাগাদ রেজিস্ট্রার এবং ডিনকে তলব করা হয়েছিল।
বুধবার গভীর রাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের এ-২ ব্লকের নীচ থেকে নগ্ন ও অচৈতন্য অবস্থায় পাওয়া যায় বাংলা অনার্সের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রকে। বৃহস্পতিবার ভোরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। ওই ‘অস্বাভাবিক মৃত্যু’তে র্যাগিংয়ের অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মোট ন’জন গ্রেফতার হয়েছেন। ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় ইতিমধ্যে নানাবিধ প্রশ্নের মুখে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: ভোট পরবর্তী খুনের মামলায় সিবিআইয়ের ভুমিকায় ক্ষুব্ধ আদালত
ইউজিসির র্যাগিং সংক্রান্ত নির্দেশাবলি অমান্য করার কারণও দর্শাতে বলেছে পশ্চিমবঙ্গ শিশু সুরক্ষা কমিশন। বিশ্ববিদ্যালয়কে শো-কজ় করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, সুপ্রিম কোর্ট র্যাগিং সংক্রান্ত যে নির্দেশ দেয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তা অমান্য করা হয়েছে। র্যাগিং নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর নির্দেশিকাও মানা হয়নি। এ নিয়ে রেজিস্ট্রারকে নোটিস পাঠিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনও। পাশাপাশি রাজ্যের কাছেও রিপোর্ট তলব করেছে তারা।
পাশাপাশি এই ঘটনায় আরও চার জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। এ নিয়ে যাদবপুরকাণ্ডে মোট গ্রেফতারির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হল সাত জন। এ ছাড়াও আরও দু’জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। বুধবারই ধৃত চার জনকে আদালতে তুলে পুলিশ হেফাজতে পাওয়ার চেষ্টা করবে পুলিশ।
জানা গিয়েছে, এদিন দুপুর ৩টের সময় তাঁদেরকে তলব করা হয়েছে। ইউজিসি-র নির্দেশিকায় থাকলেও হস্টেল ও ক্যাম্পাসে কেন নেই সিসি ক্যামেরা? মেন হস্টেলে অন্তত ২০ জন প্রাক্তনী থাকতেন, এই অনিয়মে কেন কর্তৃপক্ষ কোনও পদক্ষেপ নেয়নি? বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেল কি গেস্ট বিনা পয়সার হাউস? প্রাক্তনীরা কী করে দিনে পর দিন কর্তৃপক্ষের চোখে ধুলো দিয়ে হস্টেলে থাকছে? বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের ঢোকা নিয়ে কেন কোনও কড়াকড়ি নেই? বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শীর্ষ কর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চায় পুলিশ। বুধবার বিকেলে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য কর্তৃপক্ষকে নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসছেন।
লালবাজার সূত্রে খবর, তদন্তে উঠে এসেছে অন্তত আরও ২০ জন ছাত্রের নাম। যারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করার পরেও হস্টেলে রয়েছেন। তাঁদের ডাকার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। তদন্তকারীদের নজরে রয়েছে গ্রেফতার হওয়া পড়ুয়াদের মোবাইল ফোনও। মোবাইলে ওই রাতের অত্যাচারের ভিডিয়ো থাকতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। তাই মঙ্গলবার ধৃত তিনজনের মোবাইল ফোন ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। বাকিদের মোবাইলে কী তথ্য রয়েছে? সেটা খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা। পড়ুয়া মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটির চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এল। ঘটনার রাতে ওই ছাত্রের সঙ্গে শুধু মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন নয়, তাকে যৌন হেনস্তাও করা হয়েছিল। এখনও পর্যন্ত যাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে তাতেজানা গিয়েছে সেই রাতে র্যাগিং ও যৌন হেনস্তার তথ্য অনেকেই জানিয়েছে।
মৃত ছাত্রের নদিয়ার বগুলায় বাড়িতে যাচ্ছে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল। দলের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল বুধবার নিহত ছাত্রের বাড়িতে তাঁর মা–বাবার সঙ্গে দেখা করতে যাবে। ঘটনার প্রতিবাদে যাদবপুর এইট বি-তে ধরনায় বসবেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। দুপুর ১২টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত ধরনা (Dharna)কর্মসূচি করবে টিএমসিপি (TMCP)।