অধীর গিয়েছিলেন রজত শর্মার আপ কি অদালত শোতে, অধীরের নাম নিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলাকালীন তাঁর বক্তৃতার সময়ে মধ্যে কিছু বলতে ওঠা অধীর চৌধুরিকে তিনি হাসতে হাসতে বসতে বলেন, বলেন আমি জানি অধীবাবু আপনার ফ্রাস্টেশন, আপনি লোকসভায় দলের নেতা কিন্তু অনাস্থা প্রস্তাবে আপনার দল আপনাকেই বক্তার তালিকায় রাখেনি, বেশ আপনাকে আমাদের সময় থেকেই বলতে দেবো, এখন বসুন, বৈঠ যাইয়ে। প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতা দিতে গিয়ে বলেছেন অধীর বাবু আমি বুঝি আপনার অবস্থা, আপনার নাম তো তালিকায় ছিল না, দেখুন যখন তালিকা তৈরি হচ্ছিল, তখন সম্ভবত বংগাল সে কৈ ফোন আয়া হোগা, বলে খ্যাক খ্যাক করে হাসলেন প্রধানমন্ত্রী, ওনার সঙ্গে বিজেপির অন্য নেতারাও হাসলেন, প্রধানমন্ত্রী আরও বললেন যাওবা আমাদের সময় থেকেই অমিত ভাই আপনাকে বলার সুযোগ করে দিল, সেটাও আপনি বলতে উঠে গুড় গোবর করে দিলেন, মানে গুড়ের সঙ্গে গোবর মিশিয়ে ফেললেন। আবার হাসি। হ্যাঁ, অধিকাংশ হিন্দি সিনেমায় বাঙালি এক ভাঁড় চরিত্রের মতই অধীর চৌধুরি দিল্লির রাজনৈতিক মহলে এক ভাঁড় মাত্র, কিন্তু ইদানিং গুরুত্ব পাচ্ছেন কারণ মোদী শাহের লক্ষ্য ইন্ডিয়া জোটের ভালনারেবল জায়গাগুলোকে, নরম জায়গা গুলোকে আঘাত করা, জোটে ফাটল ধরানো। তাই অধীরকে গুরুত্ব দিয়ে বাংলায় কংগ্রেস তৃণমূল কংগ্রেস জোট কে ভাঙা। প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বা ওনাদের সহচর রজত শর্মা সেই কাজেই নেমেছেন, এবং তাতেই উঠে এসেছে নদী আর পুকুরের গল্প, রাজনীতির অসীম সম্ভাবনার গল্প, আর সেই সম্ভাবনার চাপে হাঁসফাস করা কমরেড সেলিমের কিসসা। আজ সেটাই বিষয় আজকে, নদী পুকুর, অধীর, সেলিম ও মমতার গল্প।
অধীর চৌধুরি আর এস পি থেকে কংগ্রেসের দীর্ঘ রাজনীতি জীবনে নানান ওঠাপড়া দেখেছেন, বুদ্ধবাবু বলেছিলেন জেলে পুরবেন, পুরেওছিলেন, সেখান থেকেই লড়েছেন এম এল এ হয়েছেন, এম পি হয়েই বুঝেছেন হিন্দি শিখতে হবে, চলনসই শিখেছেন। মমতার বিরোধিতা উনি করেন নি মমতাই ওনার বিরুদ্ধে ছিলেন, ঐ গুন্ডারা টিকিট পাবে কেন? প্রশ্ন করেছিলেন মমতা। তারপরে অন্য অনেকের সঙ্গে মমতার মিটমাট হয়েছে অধীরের সঙ্গে হয় নি। কিন্তু কেউ যদি ভাবেন, হবে না, তাহলে ভুল করবেন, সেটাই সেদিন রজত শর্মার শোতে তিনি বললেন, পুকুরের রাজনীতি, মানে রাজ্যের রাজনীতিতে অনেক কিছু হয় তার সঙ্গে বহতা নদীর রাজনীতিকে গুলিয়ে ফেলবেন না, বহতা নদী হল দেশ, দেশ অনেক বড়। স্বাভাবিক ছিল পরের প্রশ্ন তার মানে কি মমতা দিদির সঙ্গেও বোঝাপড়া? অধীর জানিয়েছেন, বা বলা ভাল জানিয়ে রাখলেন রাজনীতিতে এক অসীম সম্ভাবনা আছে, সব কিছু সম্ভব। মানে জলের মত সোজা, অধীরবাবু জানেন আগামীকাল হাইকমান্ড আদেশ দিলে একটা আসন না নিয়েও জোট হবে, করতেই হবে। কাজেই গ্লোরিয়াস রিট্রিট, গৌরবজনক পশ্চাদ অপসরণের জায়গাটা ছেড়ে রাখলেন। কংগ্রেসী রাজনীতিতে সেটা এমন কিছু নয়। কিন্তু সেলিম সাহেব, কমরেড সেলিম সাহেবের কী হইবে? ক্যাডারেরা ফুঁসছে, হাজারো প্রশ্ন উঠছে, এই ইন্ডিয়া জোট, সেই জোটের মিটিং এ দলের সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতি নিয়ে, ওদিকে কেরালাতে আরেক বিপদ সেখানে লড়াই কংগ্রেসের সঙ্গে। এদিকে দেশজোড়া জোটের নাম হয়েছে ইন্ডিয়া। তো এই বঙ্গে ২০২৪ এর নির্বাচনে দেওয়ালে কী লেখা হবে? ইন্ডিয়া জোটের প্রার্থী তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রী সৌগত রায় কে পরাজিত করুন, নাকি ইন্ডিয়া জোটের কংগ্রেস প্রার্থী অধীর চৌধুরিকে সমর্থন করুন। এখানেই কি ক্ষ্যামা দিয়েছে দলের সদস্যরা, তাদের প্রশ্ন যদি ইন্ডিয়া জোট জেতে, তাহলে বাইরে থেকে কি সিপিএম তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেসের সরকার কে সমর্থন করবে? সব বাদ দিলাম, এ বাংলায় দলের প্রার্থীদের নামের আগে কী লেখা হবে? ইন্ডিয়া জোটের সিপিএম প্রার্থী অমুক চন্দ্র তমুককে ভোট দিন, উল্টোদিকে তৃণমূলও তো ইন্ডিয়া জোটের প্রার্থী, এমনটাই লিখবে। কাজেই ১৩ পাতার চিঠি লিখে দলের কর্মী সদস্যদের দেওয়া হল বটে, কিন্তু তাদের একটা প্রশ্নেরও কি উত্তর দেওয়া গ্যালো? আদৌ উত্তর আছে? কমরেড সেলিমের কাছে তো নেই, অন্তত জেলার খবর তো তাই বলছে। আমরা মানুষের কাছে জিজ্ঞেষ করেছিলাম, সামনের লোকসভা নির্বাচনে এই বাংলায় সিপিএম, তৃণমূল, কংগ্রেস আসন সমঝোতা না হলে ইন্ডিয়া জোটের হয়ে একই আসনে সিপিএম প্রার্থীও দাঁড়াবে, ঐ একই ইন্ডিয়া জোটের হয়েই তৃণমূল প্রার্থীও দাঁড়াবে, সেরকম হলে মানুষের মধ্যে কি এক চরম বিভ্রান্তি জন্ম নেবে না? শুনুন মানুষজন কী বলেছেন।
সিপিএম বুঝতেই পারছেনা, এই জোটে সামিল হয়ে কতবড় বিভ্রান্তির জন্ম দিতে চলেছে তারা, সেই বুদ্ধি কিন্তু অধীরবাবুর আছে, তিনি নদী পুকুর আর রাজনীতির অসীম সম্ভাবনার কথা টতা বলে একটা এসকেপ রুট খোলা রেখেছেন। মমতার কোনও সমস্যা নেই, উনি যেভাবেই হোক ঐ জোটে জাতীয় নেতৃত্বে একটা গুরুত্বপূর্ণ জায়গা চান, তিনি জানেন সেটুকু পেলেই নিজেকে বিজেপির বিরুদ্ধে বিশ্বাসযোগ্য দল হিসেবে মানুষের কাছে, বিশেষত সংখ্যালঘু মানুষের কাছে রাখা যাবে। তাঁর সংখ্যালঘু ভোটের ক্ষয় রোধ হবে। কিন্তু কমরেড সেলিম, এবং সিপিএম বিলক্ষণ জানেন যে এ এক বিষম গাডডায় পা দিয়েছেন তাঁরা, এর থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব নয়, আবার সিপিএম তৃণমূল নির্বাচনী সমঝোতাও সম্ভব নয়। সব মিলিয়ে রাজনীতির অসীম সম্ভাবনায় সিপিএম এর নাকানি চোবানির এটা কিন্তু সবে শুরু, শেষ হবার আগে আরও অনেক কিছু দেখতে হবে।