হুগলি: বড় শখ করে লকডাউনের সময় গাড়ি কিনেছিলেন মেদিনীপুর বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (Vidyasagar University Professor-) অধ্যাপিকা নন্দিনী ঘোষ (Professor Nandini Ghosh)। কোন্নগর থেকে ট্রেনে যাতায়াত করা সমস্যা হচ্ছিল। তা ছাড়া লকডাউন পর্বে ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। তাই তাড়াহুড়ো করে গাড়ি কিনেছিলেন নন্দিনী। সেই গাড়িই কাল হল। আক্ষেপ করছিলেন নন্দিনীর বাবা সুদীপ ঘোষ।
সোমবার সন্ধ্যায় উলুবেড়িয়ার কুলগাছিয়ার কাছে ১৬ নম্বর জাতীয় সড়কে ট্রেলারের ধাক্কায় দুমড়ে-মুচড়ে যায় নন্দিনীদের গাড়ি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আর এক সহকর্মী সোদপুরের বাসিন্দা মিশা রায় (৩৩)। গাড়ি চালাছিলেন হুগলির উত্তরপাড়ার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ দাস (৩১)। ট্রেলারের ধাক্কায় তিনজনেরই মৃত্যু হয় ঘটনাস্থলে। স্থানীয় লোকজন এবং পুলিশ ও দমকলের কর্মীরা গ্যাস কাটার দিয়ে গাড়ির অংশ কেটে ক্ষতবিক্ষত দেহগুলি উদ্ধার করে। মেধাবি এই দুই অধ্যাপিকার অস্বাভাবিক মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না পরিবারের লোকজন।
নন্দিনী মেদিনীপুরের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বটানি শিক্ষিকা ছিলেন। নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস ইনস্টিটিউট থেকে বোটানি নিয়ে গবেষণা করেছেন। গবেষণার জন্য দেশ-বিদেশে সম্মানিত হন। প্রথমে তিনি শ্রীরামপুর কলেজে পড়াতেন। পরে গবেষণা শেষ করে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগ দেন।
আরও পড়ুন: সেপ্টেম্বরের গোড়ায় দেশ জুড়ে প্রতিবাদ সপ্তাহের ডাক সিপিএমের
নন্দিনীর বাবা সুদীপ বলেন, রোজকার মতো সোমবারও সকাল ৮টা বাড়ি থেকে রওনা দিয়েছিল। বিকেল ৫টায় মেদিনীপুর থেকে বেরিয়ে মাকে ফোনও করেন। ৮টা বেজে গেলেও বাড়ি না ফেরায় আমাদের চিন্তা হয়। ওর সঙ্গে সহকর্মী সোদপুরের নিশাও ছিল। তিনজনের কাউকেই ফোনে ধরতে না পারায় আমাদের উদ্বেগ বেড়ে যায়। তিনটে ফোনই অনবরত বেজে যাচ্ছিল। ধরছিলেন না কেউই।
প্রাক্তন সরকারি আমলা সুদীপ লালবাজারের এক পরিচিত অফিসারকে ফোনে ধরেন। ওই অফিসারও বিভিন্ন জায়গায় ফোনাফুনি শুরু করেন। এরই মধ্যেই নন্দিনীর মোবাইল থেকে ফোন আসায় সুদীপ আশার আলো দেখেন। ফোনের ও প্রান্ত থেকে উলুবেড়িয়া থানার সেকেন্ড অফিসার পরিচয় দিয়ে একজন জানান, পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে নন্দিনী সহ তিনজনের। সুদীপের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। তিনি মিশা এবং বিশ্বজিতের বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিন বাড়িতেই ততক্ষণে কান্নার রোল উঠে গিয়েছে।