Fourth Pillar | RSS – BJP – মোদি – শাহ ক্ষমতায় থাকার জন্য কোন রাস্তা ধরবেন?
গতকাল বলেছিলাম, আরএসএস – বিজেপি – অমিত শাহ – নরেন্দ্র মোদি এই মূহুর্তে স্পষ্ট বুঝতে পারছেন হাত থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে সরকার, হিন্দু রাষ্ট্রের স্বপ্ন। এমনিতেই বিজেপি টোয়েন্টিফোর ইনটু সেভেন ইনটু থ্রিসিক্সটি ফাইভ ডেজ, সারা বছরের প্রতিটা দিন, প্রতিটা ঘন্টাই ইলেকশন মোডে থাকে, প্রধানমন্ত্রী, বিজেপি দলের প্রতিটা নেতার প্রতিটা কাজের পেছনে থাকে নির্বাচনী পাটিগণিত। দাঙ্গা লাগানো বা দাঙ্গা থামানো দুটোই ঐ হিসেব মেনেই চলে, তিনটে পুরো দিন রাস্তায় পুলিশ ছিল না, সামরিক বাহিনী পৌঁছনোর পরেও তাদের বাহন দেওয়া হয়নি গুজরাটে। মেরে দাও, জ্বালিয়ে দাও, এমন ভয় দেখাও যে এরপর চোখ তুলে কথা না বলতে পারে, তারপর দাঙ্গা থামাবো আমরাই, গুজরাটের ছবি। কিন্তু আজ ছবিটা পাল্টাচ্ছে, সেই বিজেপিই যেদিন থেকে বুঝেছে হাল নড়বড়, নৌকা টলমল, সেদিন থেকেই মাঠে নেমেছে রিপেয়ারিং জব এ। মহারাষ্ট্র আর বিহার, তাঁরা ভেবেছিলেন এই দুটোই আসল মাথা ব্যাথা। প্রথমে শিন্দে কে ভাঙলেন, শিবসেনার একটা অংশ এল, কিন্তু তাতেও সমীক্ষার অন্য সুর, তাই অজিত পাওয়ার, প্রফুল্ল প্যাটেলদের কাজে লাগানো হল, এন সিপি কে ভাঙা হল। ওদিকে বিহারে জিতন রাম মাঁঝিকে আনা হল এন ডি এ তে, এসবের মধ্যেই ঘটা করে এন ডি এ মিটিং ডাকা হল, কিন্তু বিজেপির আভ্যন্তরীণ সমীক্ষা অন্য সুরে কথা বলছে। অন্যদিকে মণিপুর, না পারছেন গিলতে, না পারছেন উগরোতে। এখনও আগুন জ্বলছে, গতকালই ইম্ফলে পোড়ানো হয়েছে কুকি সম্রদায়ের দুটো বাড়ি, সুপ্রিম কোর্ট বেসুরো, সংসদে হাঙ্গামা, এমনকি বহুদিনের পোষা কুকুরেরা এখন ঘেউ ঘেউ করছে, চ্যানেলে দেখা গ্যালো অরররররণব গোঁসাই কে, তিনি মণিপুর নিয়ে প্রশ্ন করছেন, কি কান্ড! দেশের ইংরিজি কাগজের মধ্যে গোটা দুই তিন বাদ দিলে প্রভুর পাদোদক চরণামৃত না খেয়ে সকাল দেখত না, সেই তাদের মুখে অন্য সুর, টাইমস অফ ইন্ডিয়া প্রথম পাতাতে মণিপুর ভায়োলেন্স নিয়ে অনবদ্য রিপোর্টিং করছে। এদিকে মাত্র একদিন আগে সি এস ডিএস লোকনীতির সার্ভে রিপোর্ট বলছে ৮৬% সাংবাদিক মালিকের চাপে, সম্পাদকের চাপে বিজেপির হয়ে লিখতে বলতে বাধ্য হন। আমরা গোদি মিডিয়া বলে এক ব্রাকেটে বহু সংবাদমাধ্যম টিভি চ্যানেলকে রাখছি বটে, কিন্তু তাদের সাংবাদিকরা মুখ খুলতে শুরু করেছেন, কাজেই সেদিকেও নজর আমাদের মোদি শাহের, সেদিকেও মেরামতির কাজ শুরু হয়ে গেছে, ৯০০ কোটি টাকার এক বিরাট বিজ্ঞাপণ পরিকল্পনা তৈরি হয়েছে বলে খবর, মানে শিরদাঁড়া বেচার মূল্য সামনে রাখা থাকবে, আপনি না বিকোলে আপনার মালিক বিকোবে।
মাত্র গতকাল বেল রিজেক্ট হয়েছে আমাদের এডিটর কৌস্তুভ রায়ের, উনি আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত কি না জড়িত সে তো আদালত বিচার করবে, করেই চলেছে আজ বহু বছর হল, একটা আধুলি সিকিও বার হয় নি, কিন্তু সে থাক, আমি বলছি তার বিচার তো আদালতে হবে। কিন্তু যদি উনি শিবির বদল করেন? যদি শিরদাঁড়াটা বিকিয়ে দেন? তাহলেই ওয়াসিং পাউডার নিরমা, ম্যাজিকের মত সব দোষ উবে যাবে, এ নিয়ে কি সন্দেহের কোনও অবকাশ আছে? একবার বিকোলে ঘর হোগা, ঘর মে নল হোগা, নল মে সিঙ্গল মল্ট হোগা সাথ মে তন্দুরি চিকেন হোগা, এটাই তো দস্তুর ছিল এতদিন, কিন্তু সেখানেও সুর বদলাচ্ছে, কৌস্তুভ রায় গতকালই বলেছেন জব তক জেল মে চনা মিলেগা, আনা জানা লগা রহেগা। আকাশের গায়ে কেন টক টক গন্ধ? সুর বেসুরো শোনাচ্ছে সর্বত্র। তো এর এক উপায় হচ্ছে রেওড়ি বিতরণ, সেখানেও গোলযোগ, এই কায়দা এখন সব্বাই বুঝে গেছে, কংগ্রেস বা অবিজেপি শাসিত রাজ্যেও অকাতরে রেওড়ি বিতরণ চলছে, কাছা খুলে সেই রেওড়ি বিতরণের প্রতিযোগিতায় বিজেপি পেরে উঠছে না, এবং বড় কথা হল বিরোধী শাসিত রাজ্যের জনসংখ্যা বেশি, কাজেই রেওড়ির প্রভাবও বেশি। অন্য আরেকটা পথ হল আবার এক জঙ্গী জাতীয়তাবাদের আবেগকে তুলে ধরা, সীমান্তে আবার বালাকোট, সার্জিকাল স্ট্রাইকের স্মৃতিকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা। কিন্তু সে গুড়ে বালি, কারণ পাকিস্থান নিজেই ধুঁকছে, মোদিজী ইন্টারন্যাশনাল ফোরামে গিয়ে শান্তি আর সহবস্থানের কথা বলছেন, এখন ঐ ঘর মে ঘুসকর মারেঙ্গে বলা জায়গা নেই, অন্যদিকে চীন ভারত সীমান্তে উত্তেজনা তো আছে, কিন্তু সেখানে ঘর মে ঘুস কর মারেঙ্গে বলার মত ক্ষমতা নেই আমাদের ৫৬ ইঞ্চির ছাতির প্রধানমন্ত্রীর। কাজেই অস্ত্র একটাই, ঘৃণা ছড়াও দেশজুড়ে, দেশজুড়ে গরিষ্ঠ হিন্দুদের বোঝাও হিন্দু খতরে মে হ্যায়। আমি একবারের জন্যও মনে করিনা যে মণিপুর কেবল মণিপুরের রাজনীতি, সেখানের হিন্দু খ্রিস্টান দ্বন্দ কে কাজে লাগানো হচ্ছে আরও বড় পরিকল্পনা নিয়ে, সঙ্গে হরিয়ানায় আগুন, বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে গোরক্ষক বাহিনী অস্ত্র হাতে ঘুরছে পুলিশের গাড়িতে, কুপিয়ে মারছে গরু পাচারের অভিযোগে, সেখানে নতুন করে আগুন লাগানো হল। লাগাচ্ছে দুই হিন্দুত্বের পান্ডা মনু মানেসর, বিট্টু বজরঙ্গি, এদের দলবলের কাছে অস্ত্র আছে, আধুনিক অস্ত্র, সরকারের সমর্থন আছে, কাজেই কী কারণে সেখানে অশান্তির আগুন ছড়ালো তা নিয়ে সন্দেহের কোনও জায়গাই নেই, নাসের, জুনেইদকে জ্যান্ত পুড়িয়ে মারার দায় এই মনু মানসরের ওপর, এবার সেই বজরং দল, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ আর দূর্গাবাহিনী ব্রজ মন্ডল জলাভিষেক যাত্রার ডাক দেয়, যাত্রা পথেই গুরগাওঁ এর সোহনাতে সংখ্যালঘুদের বাড়ি পোড়ানো শুরু হয়, রাস্তায় ভাঙচুর, গাড়িতে আগুন দেওয়া, পুলিশ হাত গুটিয়ে বসে আছে। এই মনু মানেসর পুলিশের খাতায় পলাতক, কিন্তু সে ফেসবুকে আছে, বিবৃতি দিয়েই চলেছে, এই জলাভিষেক যাত্রার পরিকল্পনা তার।
হ্যাঁ এটাই পরিকল্পনা, আগুন লাগাও, নফরত ছড়াও, মানুষকে দ্বিখন্ডিত করো। মগজে কারফিউ জারি করো, যাতে নাকি এক আর পি এফ কন্সটেবলের মনে হয়, ইস দেশ মে রহনা হোগা তো যোগী মোদী কহনা হোগা, এদেশে থাকতে গেলে যোগী মোদীর নামগান করতেই হবে। না করলে? জয়পুর মুম্বাই সেন্ট্রাল এক্সপ্রেসে তিনজন সংখ্যালঘু যাত্রী এবং একজন দলিত সহকর্মীকে গুলি করে মেরেই ফেললো আর প[ই এফ কনস্টেবল চেতন সিং! ভাবা যায় তার চৈতন্য মাথায় কতটা বিষ ভরে দেওয়া হয়েছিল, প্রথমে সে তর্কাতর্কি শুরু করে তার সহকর্মীর সঙ্গে, তারপর তাকে গুলি করে মারে, এরপর সে ঐকম্পার্টমেন্টে তিনজন সংখ্যালঘুকে খুঁজে বার করে গুলি করে মারে। এখন বলা হচ্ছে ঐ আর পি এফ জওয়ান নাকি মানসিকভাবে অসুস্থ, যিনি একজন সহকর্মীকে মারার পরে সেই কামরাতে আরও তিনজন সংখ্যালঘুকে খুঁজে গুলি করে মারেন তিনি পাগল নয় শয়তান, পাগল সাজার ভান করছেন। আসামে দেখা গ্যালো বজরং দলের লোকজন অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা? না নেওয়া হয় নি। মেইতেই দের সামরিক বাহিনী আছে, তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, সামরিক প্রশিক্ষণ। সারা দেশ জুড়ে এই আগুন লাগানো গেলেই একমাত্র এই বিপদ থেকে উদ্ধার পেতে পারেন বলে মনে করছেন মোদি শাহ, আর এস এস বিজেপি। তার পরিকল্পনা চলছে, সৎপাল ডাঙ এদের খানিক চেনেন বলেই জানিয়েছেন রাম মন্দির উদ্বোধনে কিছু গন্ডোগোল পাকিয়ে সারা দেশে আগুন লাগানোর চেষ্টা হতে পারে। হ্যাঁ হতেই পারে। কাজেই সাধু সাবধান। সারা দেশ জুড়ে আগুন জ্বেলে নির্বাচনের রুটি সেঁকে নেওয়ার পরিকল্পনায় মেতেছে হিন্দুত্ববাদীরা, কারণ এ ছাড়া তাদের আবার ক্ষমতায় ফেরার কোনও রাস্তা নেই। সেই বড় পরিকল্পনার এক অংগ হল মণিপুর, হরিয়ানা। তার বিরুদ্ধে, এই নফরতের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোটাই আজ সবথেকে বড় কাজ, এক ভারত জোড়ো যাত্রা সেই নফরতের সামনে একটা দেওয়াল তুলতে পেরেছে, আরেকটা ভারত জোড়ো যাত্রায় সামিল হতে হবে আমাদের প্রত্যেক কে, প্রত্যেক মহল্লায়, প্রত্যেক গ্রামে সেই ভারত জোড়ো যাত্রা শুরু করতে হবে। আমাদের অর্থনীতি বৈষম্যের ভারে নুয়ে পড়েছে, বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতিতে ৮০ কোটি মানুষ মাসে ১৫ কেজি আনাজের দান খয়রাতির জন্য বসে থাকে, বেকারেরা ঘুরে মরছে, কাজ নেই। মজুরি কমছে, বয়স্কদের জমা টাকার ওপরে সুদ কমছে, প্রভিডেন্ড ফান্ড থেকে পেনশনের টাকা খাটছে খোলা বাজারে, একের পর এক খবর আসছে ব্যাঙ্কের টাকা লুঠকরে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার, ব্যাঙ্কের অবস্থা খারাপ, কৃষকদের কিছু করার নেই তাই চাষ করছে, আমদানি দ্বিগুণ তো বাদই দিলাম, আমদানি প্রকৃত অর্থে কমেছে, আর সেই সব কিছুকে আড়াল করে এক ধর্মীয় উত্তেজনা তৈরি করে সরকারে টিঁকে থাকতে চায় বিজেপি, মোদি শাহ। আওয়াজ তুলুন, সিংহাসন খালি করো, রামধারি সিং দিনকরের কবিতা।
সবসে বিরাট জনতন্ত্র জগত কা আ পঁহুচা
তেতিস কোটি – হিত সিংহাসন তয় করো
অভিষেক আজ রাজা কা নঁহি প্রজা কা হ্যায়
তেতিস কোটি জনতা কে সর পর মুকুট ধরো
আরতি লিয়ে তু কিসে ঢূঁঢতা হ্যায় মুরখ
মন্দিরোঁ, রাজপ্রাসাদোমেঁ, তহখানো মেঁ
দেওতা কঁহি সড়কোঁ পর গিট্টি তোড় রহে
দেওতা মিলেঙ্গে খেতোঁমে খলিহানোঁ মেঁ
ফাওড়ে আউর হল রাজদন্ড বননে কো হ্যায়
ধুসরতা সোনে সে শৃঙ্গার সজাতি হ্যায়
দো রাহ, সময় কে রথ কা ঘর্ঘর নাদ শুনো
সিংহাসন খালি করো কি জনতা আতি হ্যায়