Placeholder canvas
কলকাতা বৃহস্পতিবার, ০৮ মে ২০২৫ |
K:T:V Clock
Jyoti Basu | জ্যোতি বসু বনাম সিপিএম
কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক Published By:  রাতুল বন্দ্যোপাধ্যায়
  • প্রকাশের সময় : শনিবার, ৮ জুলাই, ২০২৩, ০৯:৫৪:৪৪ এম
  • / ১০৩ বার খবরটি পড়া হয়েছে
  • রাতুল বন্দ্যোপাধ্যায়

শুভাশিস মৈত্র: লন্ডনে তখন ছাত্র জ্যোতি বসু।  ১৯৩৮ সাল। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু লন্ডনে এসেছেন। জ্যোতি বসু গেলেন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে। নেতাজি জিজ্ঞেস করেছিলেন দেশে ফিরে কী করবে? জ্যোতিবসু বলেছিলেন, দেশে ফিরে কমিউনিস্ট পার্টির হোলটাইমার হব। ততদিনে তিনি মার্ক্সবাদে দীক্ষিত হয়ে গিয়েছেন। নেতাজি তাঁকে বলেছিলেন, মনে রেখো পলিটিক্স ইজ নট এ বেড অব রোজেস। এই ঘটনার ৩৯ বছর পরে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হলেন জ্যোতি বসু। তার আগে অবশ্য দু’বার উপমুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। একটানা ৮,৫৪০ দিন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৭৭ সালের ২১ জুন থেকে  ২০০০ সালের ৬ নভেম্বর। এটাই ভারতে এখনও পর্যন্ত দীর্ঘতম মুখ্যমন্ত্রিত্বের রেকর্ড।

আজ ৮ জুলাই তাঁর জন্মদিন। ১৯১৪ সালে এই দিনে জ্যোতি বসুর জন্ম। এবার তাঁর জন্মদিন পড়েছে রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন। আজ সারা দেশে যে পঞ্চায়েত, তার শুরু হয়েছিল এই রাজ্যেই প্রথম, তাঁর নেতৃত্বে ১৯৭৮ সালে। পরে এর জন্য প্রয়োজনীয় সংবিধান সংশোধন করে সারা দেশে তা চালু করেন রাজীব গান্ধী।

আরও পড়ুন: Panchayat Election | কোচবিহারে খুন বিজেপি এজেন্ট, কাঠগড়ায় তৃণমূল

জ্যোতি বসুকে একবার এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন মৃত্যুর পর তাঁকে মানুষ কী ভাবে মনে রাখবেন বলে তিনি আশা করেন। জ্যোতি বসুর জবাব ছিল, ‘মানুষ মনে রাখে না’। এই জবাবের মধ্যে প্রচণ্ড বাস্তববাদী এক মানুষকে খুঁজে পাওয়া যায়। সিপিএম যে আজ রাজ্যে বিধানসভা এবং লোকসভায় আসন সংখ্যায় শ্যূন্যে পৌঁছেছে এই রাজ্যে, সম্ভবত জ্যোতি বসুর কয়েকটি পরামর্শ শুনলে আজ তাদের এই রকম পরিস্থিতিতে পড়তে হত না। এরকম তিনটি ঘটনার কথা বলা যেতে পারে যা নিয়ে জ্যোতি বসু দলকে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু তাঁর মতামতকে গুরুত্ব দেয়নি তাঁর পার্টি। যার মূল্য তাঁর অবর্তমানে এখন দিচ্ছে সিপিএম।

প্রথম ঘটনা। যখন সুযোগ এসেছিল জ্যোতি বসু প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণে রাজি ছিলেন কিন্তু তাঁর পার্টি কোমর বেঁধে তাঁকে আটকেছিল দেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়া থেকে। ১৯৯৬ সাল। একাদশ লোকসভা ভোট।  ১৯৮৯  এবং ১৯৯১-এর মতো ফের লোকসভা ত্রিশঙ্কু হলো। আসন সংখ্যা বিজেপির ১৬১  আর কংগ্রেস ১৩৬ ।  বাকিটা আন্যান্য দল।  ভি পি সিং, মুলায়ম সিং যাদব, লালুপ্রসাদ, করুণানিধিরা  বললেন একটানা ১৯ বছরের বাংলার মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুকেই প্রধানমন্ত্রী করা হোক। কংগ্রেস  বাইরে থেকে সমর্থনে রাজি হল বিজেপিকে আটকাতে। এই প্রস্তাব নিয়ে ১৯৯৬ সালের ১৩ মে সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটি বৈঠকে বসল‌। বৈঠকে ভোটাভুটি হল। সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য নানা ধরনের যুক্তি সাজিয়ে বললেন তাঁদের এই প্রস্তাবে মত নেই। তাঁরা চান না জ্যোতি বসু প্রধানমন্ত্রী পদে বসুন।  পার্টির কেরল, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশের সঙ্গে সব থেকে বড় বিরোধিতা এসেছিল পশ্চিমবঙ্গের বেশিরভাগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের পক্ষ থেকে।  ভি পি সিং অনুরোধ করলেন আরেক বার ভেবে দেখতে। পর দিন ফের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক বসল। দ্বিতীয় দিনের ভোটাভুটিতেও একই সিদ্ধান্ত হল। এখানে বলার যে,  এই রাজ্যের যারা সেদিন জ্যোতি বসুর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাবের পক্ষে ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, শ্যামল চক্রবর্তী, গৌতম দেব সহ আরও দু’এক জন। জ্যোতি বসু মেনে নিলেন দলের নির্দেশ। কিন্তু কিছু দিন পরে, দলের বাস্তববোধহীন নেতাদের শিক্ষা দিতে বিশিষ্ট সাংবাদিক এম জে আকবরকে ডেকে এশিয়ান এজ পত্রিকায় একটি ইন্টারভিউ দিলেন এবং বললেন, দল এক ঐতিহাসিক ভুল করল। ১৯৯৭ সালের ১ জানুয়ারি এই সাক্ষাৎকার প্রকাশ হতেই বেশ হৈচৈ পড়ে গিয়েছিল।  অন্য কেউ দলের নেতাদের নামে প্রকাশ্যে এমন কথা বললে তাঁকে অবিলম্বে দল থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হত। কিন্তু জ্যোতি বসুর ক্ষেত্রে অবশ্য তাঁদের আর সেই সাহস হয়নি। তখন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হরকিষেন সিং সুরজিৎ। তাঁকে কলকাতায় আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের অফিসে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, ‘ঐতিহাসিক ভুল’ কথাটা বলে কি জ্যোতি বসু আপনাদের দলের শৃঙ্খলা ভেঙেছেন? সুরিজিৎ কোনও জবাব দেননি। চুপ করেছিলেন। সুরজিৎ নিজে অবশ্য প্রথম থেকেই জ্যোতি বসুর প্রধানমন্ত্রিত্বের পক্ষে ছিলেন। বিরোধীদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন প্রকাশ কারাত।

সিপিআইএম জ্যোতি বসুকে প্রধানমন্ত্রী পদ গ্রহণে বাধা দেওয়ায় তৈরি হল ভারতের প্রথম বিজেপি সরকার।  ১৯৯৬-এর ১৯ মে প্রয়োজনীয় সংখ্যা না থাকা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী পদে বসলেন অটল বিহারী বাজপেয়ী। বিজেপি নেতারা জানতেন গরিষ্ঠতা নেই তাদের, সরকার টিকবে না। তবু তারা সরকারে এলেন। সংসদকে ব্যবহার করলেন। সরকার টিকেছিল মাত্র ১৩ দিন। বিদায়ের দিনে দুর্দান্ত এক ভাষণ দিয়েছিলেন বাজপেয়ী। সারা দেশে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল।

দ্বিতীয় ঘটনা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নতৃত্বে তখন সিঙ্গুর আন্দোলন তুঙ্গে। সমঝোতা সূত্র খুঁজতে হন্যে বুদ্ধদেববাবুর সরকার। এই রকম সময়ে একদিন মমতা গেলেন জ্যোতি বসুর বাড়ি। বহুক্ষণ চলেছিল সেই বৈঠক। পরে বেরিয়ে এসে জ্যোতি বসু মমতার পাশে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘ওঁর কথাটাও সরকারের শোনা উচিত’। এত বড় প্রকল্প। বিরোধীনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কনফিডেন্সে নিয়ে এগোলে এবং ওঁর কথা কিছুটা শুনলে হয়তো সিপিএমের সেদিন ভালোই হত। কিন্তু  সেদিন জ্যোতি বসুর কথা ভেবে দেখা হবে এমন প্রতিক্রিয়াও পাওয়া যায়নি বুদ্ধদেববাবুর সরকারের থেকে বা আলিমুদ্দিন থেকে।       

তৃতীয় ঘটনা। যখন ২০০৮ সালে প্রকাশ কারাতরা অসামরিক পরমাণু চুক্তির বিরোধিতা করে বিজেপির সঙ্গে কৌশলের গোপন জোট করে মনমোহন সিং সরকার ফেলার জন্য অনাস্থা আনলেন, বৃদ্ধ, কার্যত গৃহবন্দী জ্যোতি বসুর এতে সায় ছিল না। প্রণব মুখাপাধ্যায় সেই সময় বিধাননগরে জ্যোতি বসুর বাড়িতে এসে তাঁকে অনুরোধ করেছিলেন, তিনি যেন তাঁর দলকে বোঝান। কিন্তু জ্যোতি বসুর তখন আর রাজ্য দলের উপর প্রায় কোনওই প্রভাব নেই। মনমোহন সিং সরকার কিন্তু ফেলতে পারলেন নাপ্রকাশ কারাতরা। কিন্তু বিষাক্ত হয়ে গেল কংগ্রেসের সঙ্গে সিপিএমের সম্পর্ক (যা এখন আবার মধুর হয়েছে)। রাজনীতির অঙ্গই হল কূট-কৌশল। সেদিন মনমোহন সিং সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ত না হলে রাজ্যে হয়তো তৃণমূল কংগ্রেস এবং কংগ্রেসের জোটও হত না, যে জোট, নির্বাচনের পরপরই ভেঙেও গিয়েছিল। আর জোট না হলে তৃণমূল একক শক্তিতে ক্ষমতায় আসতে পারত কি না তা নিয়ে আলোচনার অবকাশ তো আছেই।   

ভুল রাজনৈতিক দল করে। কিন্তু জ্যোতিবাবুর মতো নেতা যিনি দলকে ভুল ধরিয়ে দিচ্ছেন বার বার, কিন্তু শোনার কেউ ছিল না। এর অনেক কারণের মধ্যে প্রধান কারণ, দল ততদিনে দীর্ঘদিন বাংলায় ক্ষমতায়, কেরলে ক্ষমতায় নিয়মিত ব্যবধানে, সাংসদের সংখ্যা ৬০ ছাড়িয়ে গিয়েছে, এক ধরনের ঔদ্ধত্য মাথা চাড়া দিয়েছে দলে। অনেক নেতার ভাষায় তা প্রকাশ পেতেও শুরু করেছিল। পতনের অন্যতম কারণ সেটাও। আবার এটাও ঠিক পশ্চিমবঙ্গের মানুষ পরিবর্তন চাইছিল। যা ঘটেছে তা এখন ইতিহাস। ইতিহাসে ‘যদি’ কোনও স্থান নেই।

একটানা ৮,৫৪০ দিনের মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের জন্য কী কী করেছেন, নিজের দলের জন্যই বা কী করেছেন এই আলোচনা চলতেই থাকবে। আজ তাঁর জন্মদিনে প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে এই প্রতিবেদন সীমাবদ্ধ থাকল শুধু  ‘তিনি বনাম তাঁর দল’, এই আলোচনায়।

পুরনো খবরের আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০
১১ ১২ ১৩ ১৪ ১৫ ১৬ ১৭
১৮ ১৯ ২০ ২১ ২২ ২৩ ২৪
২৫ ২৬ ২৭ ২৮ ২৯ ৩০ ৩১
আর্কাইভ

এই মুহূর্তে

ধোনির ছয়েই প্লে-অফের স্বপ্নভঙ্গ কলকাতার
বৃহস্পতিবার, ৮ মে, ২০২৫
নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর পাকিস্তানের গুলিবর্ষণ, শহিদ ভারতীয় জওয়ান
বৃহস্পতিবার, ৮ মে, ২০২৫
‘প্রত্যাঘাত হলেও মানবিকতা ভোলেনি ভারতীয় সেনা’, দীপ্ত কন্ঠে মন্তব্য রাজনাথ সিংয়ের
বুধবার, ৭ মে, ২০২৫
Aajke | ছাল ছাড়িয়ে নুন মাখিয়ে, বিজেপির কালাপাহাড় এখন দিলীপ ঘোষ
বুধবার, ৭ মে, ২০২৫
Fourth Pillar | শত্রু এলে অস্ত্র হাতে ধরতে জানি
বুধবার, ৭ মে, ২০২৫
ইডেনে বোমাতঙ্ক, সিএবিকে মেল করে হুমকি
বুধবার, ৭ মে, ২০২৫
প্রত্যাঘাতের পরেও যদি পাকিস্তান না শুধরায় তাহলে…
বুধবার, ৭ মে, ২০২৫
ভারত-পাক উত্তেজনার আবহে মক ড্রিল হল দেশজুড়ে
বুধবার, ৭ মে, ২০২৫
আইপিএলের মাঝেই রোহিতের বিরাট সিদ্ধান্ত! এবার টেস্ট থেকে নিতে চলেছে অবসর?
বুধবার, ৭ মে, ২০২৫
মোদি যোগ্য জবাব দিয়েছেন, বললেন হিমাংশী নারওয়াল
বুধবার, ৭ মে, ২০২৫
বালাকোট থেকে ‘অপারেশন সিঁন্দুর’ মোদির ‘মঙ্গল’ প্রতিশ্রুতি
বুধবার, ৭ মে, ২০২৫
‘অপারেশন সিঁদুর’ এর পর সীমান্তবর্তী ১০ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর! ছিলেন মমতাও
বুধবার, ৭ মে, ২০২৫
বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকের তোপের মুখে রাজ্য নেতারা
বুধবার, ৭ মে, ২০২৫
এয়ার স্ট্রাইকের পরেই সেনা লিখল, ‘ন্যায় হয়েছে’ ‘জয় হিন্দ’
বুধবার, ৭ মে, ২০২৫
সর্বদলীয় বৈঠকের ডাক মোদি সরকারের, কোন বড় সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে সরকার
বুধবার, ৭ মে, ২০২৫
© R.P. Techvision India Pvt Ltd, All rights reserved.
Developed By KolkataTV Team