কলকাতা: ভোট শুরুর কয়েক ঘন্টা আগেও হিংসা পিছু ছাড়ল না। সেই হিংসার রেশের মধ্যেই শনিবার সকাল থেকে ভোট পর্বের সূচনা। সকাল সকালই মানুষের লাইন চোখে পড়েছে বিভিন্ন বুথে। অভিযোগ উঠেছে, বহু বুথে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দেখা মিলছে না। কোনও কোনও বুথে আবার সিভিক ভলান্টিয়ারদেরও দেখা গিয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টের পরিষ্কার নির্দেশ ছিল, বুথে তাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে রাখা যাবে না। সাতসকালেই বিরোধীরা শাসকদলের বিরুদ্ধে বুথ দখলের অভিযোগ আনেন। তবে বেশ কয়েক জায়গায় শান্তিপূর্ণ অবাধ ভোট হচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। যদিও রাজ্য জুড়ে বিক্ষিপ্ত ঘটনা সামনে আসছে।
এবার পঞ্চায়েত ভোট হবে ৬০ হাজার ৫৯৩টি বুথে। মোট ভোটার ৫ কোটি ৬৭ লক্ষ ২১ হাজার ২৩৪। সব চেয়ে বেশি ভোটার রয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনায়। ওই জেলার মোট ভোটার ৫৭ লক্ষ ৭৪ হাজার ৪৮২। চাহিদামতো কেন্দ্রীয় বাহিনী পাওয়া গেলেও প্রতি বুথে সেই জওয়ানদের রাখা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশনও।
কমিশন জানিয়েছে, ২২ জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েতে ৬৩ হাজার ২২৯ আসনে প্রার্থীর সংখ্যা ১ লক্ষ ৭০ হাজার ৮১২। পঞ্চায়েত সমিতির ৯ হাজার ৭৩০ আসনে প্রার্থী ৩১ হাজার ১৬ জন। আর জেলা পরিষদের ৯২৮ আসনে প্রার্থী আছেন ৪ হাজার ৪৬৭ জন।
২০১৮ সালে পঞ্চায়েতের তিন স্তরে প্রায় ৩৪ শতাংশ আসনে তৃণমূল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিল। সেবার শাসকদল বিরোধীশূন্য পঞ্চায়েত গড়ার ডাক দিয়েছিল। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ২০১৮ সালে সেই বিরোধীশূন্য পঞ্চায়েত গড়ার মূল কারিগর ছিলেন। তখনকার দাপুটে তৃণমূল নেতা অধুনা বিজেপি নেতা ঘোষণা করেছিলেন, বিরোধীশূন্য পঞ্চায়েত দিতে পারলে ৫ কোটি টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। গত পঞ্চায়েত ভোটে হাজার হাজার আসনে বিরোধীরা প্রার্থীই দিতে পারেনি। এবার অবশ্য চিত্রটা কিছুটা হলেও বদলেছে। শাসকদলের হুমকি অগ্রাহ্য করে, মারধর খেয়েও বহু আসনে বিরোধীরা প্রার্থী দিতে পেরেছে। শাসকদলের নেতারা বুক বাজিয়ে বলছেন, আমরা চাইলে আরও বেশি ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারতাম। তাঁদের দাবি, গোলমাল হলে বিরোধীরা এত বেশি মনোনয়ন জমাই দিতে পারত না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, দুতিনটি বুথে বিরোধীরা গোলমাল করেছে। আর কেন্দ্রীয় বাহিনী দিতে হবে বলে লাফাচ্ছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী আমাদের কাঁচকলা করবে। এবার শাসকদল ১২ শতাংশের কিছু বেশি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে তিন স্তরের বহ আসনে।
এবারের পঞ্চায়েত ভোটে শাসকদলের বড় হাতিয়ার রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রের বঞ্চনা, একশো দিনের কাজের টাকা আটকে রাখা, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার থেকে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সাফল্য, বিজেপি-বাম-কংগ্রেসের আঁতাঁত প্রভৃতি। এছাড়াও প্রচারের ইস্যু ছিল কেন্দ্রীয় এজেন্সির অতিসক্রিয়তা। বিরোধীদের মূল হাতিয়ার শাসকদলের সন্ত্রাস, দুর্নীতি এবং চুরি। বাম-কংগ্রেস তো স্লোগানই তুলেছে, চোর ধরো, জেল ভরো। বিজেপিও চুরি এবং দুর্নীতিকেই প্রচারে তুলে ধরেছে।