বোলপুর: হয় জমি ফেরত দিক নাহলে অধিগ্রহণ হওয়া জমিতে ভারী শিল্প হোক। পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভোট প্রচারে এই জমি বিতর্ককেই মূল অস্ত্র হিসেবে বেছে নিয়েছে বোলপুর শিবপুর মৌজার। ২০০০ সাল। বাম আমলে শিল্পের নামে অধিগ্রহণ হওয়া ২৯৭ একর জমিতে গড়ে উঠেছে আবাসন। এরাজ্যে সরকার তখন বামেদের। মহাকরণে বুদ্ধদেব বাবুদের রাজত্ব। তৎকালীন বোলপুরের সিপিএম সাংসদ সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। বোলপুরে রায়পুর সুপুর অঞ্চলের শিবপুর মৌজায় ২৯৭ একর জমি সরকারিভাবে অধিগ্রহণ করা হলো। সরকারিভাবে জমিদাতা কৃষকদের বলা হলো, এই জমির উপর ভারী শিল্প হবে।
সরকারিভাবে জমি অধিগ্রহনের মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারী শিল্প নির্মাণ করা। যাতে বোলপুর তথা বীরভূম জেলা মানুষদের কর্মসংস্থান হয়। বীরভূম তো বটেই, প্রতিবেশী জেলার পাশাপাশি এ রাজ্যের মানুষদের অর্থনৈতিক চাঙ্গা করে তোলাও যাবে। বামফ্রন্ট সরকার শুরু করলো জমি অধিগ্রহণ। জমিদাতা কৃষকদের বলা হয়েছিল। যারা জমি দেবেন তাদের ন্যায্য মূল্য দেওয়া হবে। বছরে তিন ফসলী জমি যারা দিচ্ছেন তাদের পরিবারের একজনের চাকরি হয়। এলাকায় সমাজ পরিবর্তন ঘটবে। অর্থনৈতিক পরিকাঠামো চাঙ্গা ও হবে।
আরও পড়ুন: Opposition Meet | মহারাষ্ট্রে ‘মহাবিদ্রোহ’, বিরোধী জোট বৈঠক ফের পিছল
বামফ্রন্ট আমলে জমি অধিগ্রহণ হলেও শিল্প করতে তারা ব্যর্থ হয়। কিছু বছরের মধ্যেই তৃণমূল সেই জমিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। জমিদাতা কৃষকদের নিয়ে শুরু হয় আন্দোলন। “হয় জমি ফেরত দাও, না হলে ভারী শিল্প করো।” তখন ছিল বাম বিরোধী জমিদাতা কৃষকদের নিয়ে তৃণমূলের এই মূল স্লোগান। বোলপুরের এই শিবপুর মৌজায় বিতর্কিত জমিতে আন্দোলনে শামিল হন তৎকালীন বিরোধী দলনেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মুকুল রায়, জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল।
তৃণমূল চাষীদের বুঝিয়েছিল, আমরা সরকারে এলে এখানে ভারী শিল্পই হবে। ২০১১ সালে সরকার বদল হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। নবান্নের দখলে জোড়া ফুল। কিন্তু জমিদাতা কৃষকদের যে প্রতিশ্রুতি তৃণমূল দিয়েছিল, তা ফলপ্রসু হয়নি। বোলপুরের শিবপুর মৌজায় ২৯৭ একর জমির উপর তৈরি হয়েছে গীতবিতান টাউনশি, বিশ্ব ক্ষুদ্র বাজার, বিশ্ব বাংলা বিশ্ববিদ্যালয়।
শিবপুর মৌজায় জমিদাতা কৃষকরা আবাসন প্রকল্পের বিরুদ্ধে বহু আন্দোলন করেছে। শিবপুর মৌজায় জমিদাতা কৃষক, লক্ষণ হেমরম, সেলিম সেখ, চন্ডী মাড্ডি দের অভিযোগ, আমরা শিল্পের জন্য জমি দিয়েছিলাম। কিন্তু তার পরিবর্তে শিবপুর মৌজায় বিতর্কিত জমিতে আবাসন প্রকল্প নির্মাণ হয়েছে। হয় এই জমিতে ভারী শিল্প হোক, না হলে আমাদের জমি ফেরত দিক সরকার।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের বামফ্রন্টের তরফ থেকে শিবপুর মৌজায় এই বিতর্কিত জমি এবারের ভোটের প্রচারের হাতিয়ার। সিপিএমের জোনাল সম্পাদক বকুল ঘড়ুইয়ের অভিযোগ, বাম জামানায় শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ হলেও তৃণমূল বিরোধিতা করে সফল করতে দেয়নি। তৃণমূল অবশ্য বলেছিল সরকারে এলে ভারী শিল্প হবে। তৃণমূল সরকার এলেও সেখানে শিল্পের পরিবর্তে আবাসন প্রকল্প হয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভোট প্রচারে এই বিতর্কিত জমি আমাদের অন্যতম অস্ত্র।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে এবার প্রথম কেষ্ট মন্ডল বীরভূম জেলায় অনুপস্থিত। তৃণমূলের দাবি, শিবপুর মৌজার জমিতে সরকার বিশ্ব ক্ষুদ্র বাজার, বিশ্ব বাংলা বিশ্ববিদ্যালয় এবং আবাসন প্রকল্প করেছে। পশুর উন্নয়ন করছে তৃণমূল সরকার বিগত ১০ বছরের। বিরোধীদের কাজ নেই তাই সরকারের বিরুদ্ধে অপবাদ লাগাচ্ছে।