ওয়াশিংটন: ৬৬ মিলিয়ন (৬.৬ কোটি) বছর আগে অ্যাস্টেরয়েডের (Asteroid) আঘাতে পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল ডাইনোসররা (Dinosaur)। তবে এর থেকেও বড় প্রলয় দেখেছে আমাদের গ্রহ, তাকে মহাপ্রলয় বলাই ভালো। আজ যেমন মানব সভ্যতার ভুলে বিশ্ব উষ্ণায়ন দেখা দিয়েছে, ২৫ কোটি বছর আগে প্রাকৃতিকভাবেই উষ্ণায়ন ঘটেছিল পৃথিবীর। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত সেই উষ্ণায়নের (Warming) কারণ এবং এর জেরে প্রাণিজগতের ৯০ শতাংশ বিলুপ্ত হয়ে যায়।
হঠাৎ এই প্রসঙ্গ কেন?
দক্ষিণ আফ্রিকায় পাওয়া গিয়েছে প্রাগৈতিহাসিক যুগের এক প্রাণীর জীবাশ্ম। হিংস্র শিকারি প্রাণীটি ওই মহাপ্রলয়ের সময়কার। সরীসৃপ এবং স্তন্যপায়ীর মাঝামাঝি একটি প্রজাতি, আকারে বাঘের মতো, ছুরির মতো লম্বা শ্বদন্ত (Canine Teeth) ওয়ালা প্রাণীটির নাম ইনোস্ট্রান্সেভিয়া। যে জীবাশ্ম পাওয়া গিয়েছে, তা থেকে বিজ্ঞানীরা এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে মহাপ্রলয়ে অতি সহজেই হার মেনে নেয়নি সে। বাঁচার জন্য পাড়ি দিয়েছে হাজার হাজার মাইল, লড়াই করেছে হাজার হাজার বছর, অবশেষে একসময় লুপ্তই হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: Sudan Civil War | যুদ্ধের আতঙ্ক কাটছেই না, ঘুম ভেঙে চিৎকার সুদান থেকে মিশরে পালানো শিশুর
এর আগে এই প্রাণীটির জীবাশ্ম (Fossil) পাওয়া গিয়েছিল রাশিয়ার (Russia) উত্তর-পশ্চিমে আর্কটিক সাগরের সীমান্তে। এবারেরটি পাওয়া গেল দক্ষিণ আফ্রিকার (South Africa) মধ্যস্থলে অবস্থিত একটি ফার্মে। জীবাশ্ম বলছে, অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে নিজের উৎসস্থল থেকে বেরিয়ে পড়েছিল ইনোস্ট্রান্সেভিয়া, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এবং ৭০০০ কিমি পথ অতিক্রম করে সে, অবশেষে দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছয়, যেখানে শিকারি প্রাণীদের চারটি প্রজাতি ততদিনে নিশ্চিহ্ন। এখানে এসেও শেষরক্ষা হয়নি, বিলুপ্ত হয়ে যায় ইনোস্ট্রান্সেভিয়া।
নর্থ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ ক্রিশ্চিয়ান ক্যামারার বলছেন, এই প্রাণীরা শিকার করত তাদের বাঁকা ছুরির মতো ধারালো দাঁত দিয়ে। সরীসৃপের মতো হামাগুড়িও দিত না আবার স্তন্যপায়ীদের মতো খাড়াও নয়, মাঝামাঝি ধরনের ছিল এই ইনোস্ট্রান্সেভিয়া। প্রোটোম্যামালদের যেমন দাঁড়ানোর ভঙ্গি হয় ঠিক সেরকমই ছিল। তবে জন্তুটি লোমশ ছিল কি না তা এখনই বোঝা যায়নি।
আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে ইউরেশিয়া অঞ্চলে লাভা ছড়িয়ে পড়েছিল। হাজার হাজার বছর ধরে বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড জমা হতে থাকে। এর ফলে ক্রমশ বাড়তে থাকে পৃথিবীর তাপমাত্রা। সমুদ্র এবং বায়ুমণ্ডলে কমতে থাকে অক্সিজেনের মাত্রা। মহাসমুদ্রে জল অ্যাসিডে পরিণত হতে থাকে এবং পৃথিবী ক্রমে মরুভূমিতে পরিণত হয়। এই ভয়াবহ জলবায়ুতে ৯০ শতাংশ প্রাণীই নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। বাঁচার চেষ্টা করেছিল ইনোস্ট্রান্সেভিয়া, কয়েক হাজার বছর লড়াই করে শেষ পর্যন্ত সেও হার মানে।