নয়াদিল্লি: দিন দিন গরম হয়ে উঠছে পৃথিবী। নির্বিচারে গাছ কাটা, অরণ্য ধ্বংসের প্রভাব অনুভব করা যাচ্ছে ব্যাপকভাবে। ভারতও সেই প্রভাব থেকে মুক্ত নয়। কোথাও অস্বাভাবিক অতিবৃষ্টি তো কোথাও খরা। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন এই চরম জলবায়ুর প্রভাবে দেশজুড়ে বাড়তে পারে সংক্রামক এবং কীটপতঙ্গ বাহিত রোগ। সাম্প্রতিক কালে H2N3, অ্যাডিনোভাইরাস (Adenovirus) , সোয়াইন ফ্লু (Swine Flu) সহ একাধিক শ্বাসজনিত জীবাণু নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল দেশের বহু জায়গায়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এখনই এর কারণ জলবায়ু পরিবর্তন না হলেও আগামিদিনে হতেই পারে। জলবায়ু পরিবর্তনে ডেঙ্গি (Dengue), চিকুনগুনিয়া (Chikungunya) এবং ম্যালেরিয়া (Malaria) প্রাদুর্ভাব হতে পারে।
গণস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ পূর্ণিমা প্রভাকরন বলছেন, নিয়মিত তাপমাত্রা বাড়লে তা জীবাণু এবং তার বাহকদের রোগ ছড়ানোর কায়দায় পরিবর্তন আসতে পারে। পরিবর্তন আসতে পারে ইনকিউবেশনের (Incubation) সময়, সংক্রমণের ক্ষমতায় এবং সংক্রমণ ছড়ানোর সময়কালে আর সবকিছু মিলে রোগের উপর প্রভাব ফেলে। প্যাথোজেনিক অর্গ্যানিজমের সঙ্গে সংস্পর্শ থেকে রোগের প্রথম উপসর্গ দেখা দেওয়ার সময়কে বলা হয় ইনকিউবেশন পিরিয়ড। প্রভাকরন এও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তিত হতে থাকলে শক্তি বাড়ে জীবাণু সংক্রমণ এবং তার বাহকদের।
আরও পড়ুন: COVID-19 Update | দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৭ হাজারের গণ্ডিতে
তিনি জানান, উষ্ণ এবং আর্দ্র আবহাওয়া শুধুমাত্র জীবাণু ছড়ানোয় প্রভাব ফেলে না, রোগের ভয়াবহতাও বাড়িয়ে তোলে। এদিকে ইকোলজিস্ট (Ecologist) অ্যাবি টি ভানাক জানাচ্ছেন, জলবায়ুর পরিবর্তনে বদলে যায় বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীর বাসস্থান। তার ফলে কোনও এলাকায় নতুন বাহকের উদ্ভব হতে পারে অথবা কোনও কোনও প্রজাতিকে জীবাণুর সংস্পর্শে আরও সংবেদনশীল করে তুলতে পারে। তা থেকে রোগ ছড়াতে মারে মানবদেহে।
উদাহরণ হিসেবে ভানাক বলছেন, শুষ্ক হিসেবে পরিচিত জায়গায় অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হলে সেখানে সেইসব রোগ ছড়াবে যা আর্দ্র জায়গায় দেখা যায়। এক্ষেত্রে কলেরা, আমাশয়ের মতো জলবাহিত রোগ এবং ডেঙ্গি, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়ার মতো পতঙ্গবাহিত রোগ, দুটোই হতে পারে। আবার অতিরিক্ত তাপপ্রবাহের ফলে ক্ষতি হতে পারে প্রাণীদের, যার ফলে তাদের শরীরে জীবাণু সংক্রমণ হতে পারে এবং তা বহন করতে পারে।
গত বছর বিখ্যাত নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত এক রিপোর্ট জানিয়েছিল, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মানবদেহে জীবাণু সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়বে ব্যাপক হারে। বন্য স্তন্যপায়ীদের মধ্যে এই মুহূর্তে নিঃশব্দে আবর্তিত হয়ে চলেছে প্রায় ১০,০০০ ভয়ানক ভাইরাস, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তা মানুষের শরীরে সংক্রমিত হতে পারে। ভারত, ইন্দোনেশিয়া, চীন, ফিলিপিন্স এবং আফ্রিকার কিছু অংশের ক্ষেত্রে এই রিপোর্ট একেবারে মোক্ষম। গত বেশ কয়েক দশক ধরে এই সমস্ত দেশে ফ্লু, সার্স, এইচআইভি, ইবোলা, কোভিডের প্রকোপ দেখা গিয়েছে।