Placeholder canvas
কলকাতা বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪ |
K:T:V Clock

Placeholder canvas
Fourth Pillar | কিম করনিয়ম? কী করিতে হইবে?  
কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক Published By:  কৃশানু ঘোষ
  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২৩, ১০:৩০:০০ পিএম
  • / ১৫০ বার খবরটি পড়া হয়েছে
  • কৃশানু ঘোষ

বেশিদিন পুরনো নয়, ১৯৯৪, উত্তর কোরিয়ার কমিউনিস্ট শাসনের একচ্ছত্র নেতা কিম ইল সাং সরে যাচ্ছেন, তাঁর জায়গায় আসছেন তাঁরই পুত্র কিম জাং ইল। কমিউনিস্ট শাসন তাও আবার বংশানুক্রমিক। সেই সময়ে আমাদের দেশের কমিউনিস্টরা কিছু বলেছিলেন? না, তাঁদের হীরণ্ময় নীরবতাই ছিল অস্ত্র। এক কাগজে কার্টুন ছাপা হয়েছিল, গাছের পেছনে নগ্ন ই এম এস নাম্বুদিরিপাদ। সেই সময়ের সিপিএম সাধারণ সম্পাদক নিজেকে লুকোচ্ছেন, কিন্তু অবাক চোখে দেখছেন পুরোদস্তুর সৈন্য পোশাক পরা নতুন কমিউনিস্ট রাজাকে। কার্টুনের ক্যাপশন ছিল কিম করনিয়ম? হোয়াট ইজ টু বি ডান? কী করিতে হইবে? তারপরে সেই কিম জাং ইল সরে গেছেন, তাঁর জায়গা নিয়েছেন তাঁর পুত্র কিম জং উন। না, ইজরায়েল থেকে ইথিওপিয়া, কানাডা থেকে কামচাটকা নিয়ে বিস্তর কথা বলা কমিউনিস্ট পার্টি এই বংশানুক্রমিক শাসন নিয়ে কোনও কথা বলেনি। এবার শোনা যাচ্ছে সেই কিম জং উনও তৈরি করছেন তাঁর কন্যাকে, চতুর্থ প্রজন্মের বংশানুক্রমিক কমিউনিস্ট শাসক, আশা করাই যায় আগের মতোই কমিউনিস্ট পার্টি এ বিষয়ে নীরব থাকবে। ধরুন চীন, সেখানে শ্রমিকদের অধিকার কতটা সুরক্ষিত? তাদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার আছে? নাকি নেই? সে নিয়ে কমিউনিস্ট পার্টিকে কখনও কোনও প্রশ্ন করতে শুনেছেন? চীনে তিব্বতের আত্মনিয়ন্ত্রণ নিয়ে বা চীনের সংখ্যালঘু উইঘুরদের নিয়ে আদৌ কোনও প্রশ্ন এদেশের কমিউনিস্ট পার্টির আছে? আমাদের দেশের সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে আমরা কথা বলি, কমিউনিস্ট পার্টিও সরব, চীনের উইঘুরদের নিয়ে নীরব কেন? কমিউনিস্টদের এরকম আলাদা অধিকার আছে নাকি? এখানে সব ধর্মের সমান অধিকার, চীনে নয় কেন? এই সহজ প্রশ্নটা মাথাতেও কি এনেছে এদেশের কমিউনিস্ট পার্টি? 

এবং সংক্ষেপে এটাই হল আমাদের দেশের কমিউনিস্ট পার্টি। যে পার্টি পথচলা শুরু করেছিল ১৯২৫-এ, যে পার্টি ১৯৫২, ১৯৫৭, ১৯৬২-র সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেসের পরে দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল ছিল, সেই দলের আজ লোকসভায় সম্মিলিত মানে সি পি আই আর সিপিএম মিলে সদস্য সংখ্যা ৫। তারমধ্যে সিপিআই ২, যার জাতীয় দলের তকমা চলে গেল। সিপিএম-এর তিনজন সাংসদ, দু’জন তামিলনাড়ুর। ডিএমকে-র সমর্থন না পেলে ওই দুটো আসন তাদের জেতা অসম্ভব। সিপিআই-এরও দুটোই আসন ওই তামিলনাড়ু থেকে। আগামিকাল ডিএমকে হারলে, দুই কমিউনিস্ট পার্টির হাত থেকে এই চারটে আসনও যাবে। উল্টোদিকে দেখুন, সেই ১৯২৫ থেকে পথচলা শুরু করেছিল আরএসএস, প্রথমে হিন্দু মহাসভা, পরে জনসংঘ তারপরে বিজেপি আজ সংসদ দখল করেছে বললেও কম বলা হয়। কোনও আলোচনা ছাড়াই বিল পাশ হয়ে যাচ্ছে, সংসদে বিরোধীদের দেশদ্রোহী বলা হছে, সারা দেশে এক পুলিশি শাসন, এক স্বৈরাচারী শাসন কায়েম করেছে। সেই সময়ে সিপিআই, আদি কমিউনিস্ট পার্টির জাতীয় তকমাটা গেল। সিপিএম ছাগলের তৃতীয় সন্তানের মতো উল্লসিত, ওই তো তৃণমূলের তকমা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। কেন এমনটা হল? চলুন সেটাও একটু আলোচনা করা যাক। 

প্রথম ভুল স্বাধীনতাকেই অস্বীকার করা, নিয়মতান্ত্রিকভাবেও ইংরেজরা সরে গেল, দেশে মানুষের নির্বাচিত সরকার এল, দেশের নিজস্ব সংবিধান এল, কমিউনিস্ট পার্টি প্রথমে স্লোগান দিল, ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়। তারপর যদি বা সেই স্লোগান থেকে সরে এল, কিন্তু নতুন স্লোগান, লাল কিলে পর লাল নিশান, মাঙ্গ রহা হ্যায় হিন্দুস্তান, মানে কী? মানুষজন দেখছেন সাহেবরা চলে গেল, ইংরেজ দারোগা আর নেই। কিন্তু কমিউনিস্ট পার্টি স্লোগান দিচ্ছে, ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায় ভুলো মত ভুলো মত। ভোলা তো দূরের কথা কারও মাথাতেই তো ঢুকল না। তারপরে দেশের স্বাধীনতা দিবস আছে, ঝান্ডা আছে ত্রিবর্ণ পতাকা, কমরেড গলা চিরে স্লোগান দিচ্ছে লাল কিলে পর লাল নিশান, মাঙ্গ রহা হ্যায় হিন্দুস্তান। বহু পরে নকশালরা স্লোগান দিয়েছিল, চীনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান, একই গোত্রের স্লোগান, এক চূড়ান্ত অবিমৃষ্যকারিতা, চূড়ান্ত শিশুসুলভ বিশৃঙ্খলা। যখন এস এ ডাঙ্গে বলছেন, আরএসএস জনসঙ্ঘীরা উঠে আসছে, আমাদের কংগ্রেসের সঙ্গে আসা উচিত, তখন তিনি হলেন প্রতিক্রিয়াশীল। কিছুদিন আগেও সৈফুদ্দিন বলছেন, বিপদ আরএসএস–বিজেপি, আমাদের কংগ্রেসের সঙ্গে যেতে হবে, তখন তাঁকে দল থেকে বিদেয় করা হল। দিস্তে দিস্তে দলিল লেখা হল দলের বাংলা ইংরিজি মালয়ালম কাগজে, তার কিছুদিন পরেই দল কেন কংগ্রেসের সঙ্গেই নির্বাচনী জোট করবে তা নিয়ে গুচ্ছ গুচ্ছ লেখা চলছে। মূল ধারার কমিউনিস্ট পার্টি তো অস্ত্র নিয়ে বিপ্লব করার কথা বলেনি, ভাবেওনি। কিন্তু সারা দেশের বিরোধী দলের লোকজন যখন জ্যোতি বসুকে বলছেন, আপনিই প্রধানমন্ত্রী হন, তখন সিপিএম হয়ে উঠল বিপ্লবী, কভি নহি, বুর্জোয়া পার্লামেন্টকে আমরা কেবল ব্যবহার করব, লেনিনের ভলিউম, মার্কস, দিমিত্রভ কী না এল পাতে, কিন্তু শেষমেশ বদহজম। 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar | নীতীশের ছক এবং কর্নাটক টলমল 

সাধারণ লোহিয়াপন্থী সমাজবাদীরাও বুঝে গেলেন জাতের খেলা। আমাদের দেশে নিচু জাত আর গরিব জনতার যে বেসিক কোনও ফারাকই নেই, যুগ যুগ ধরে শোষিত পিছিয়ে পড়া জাতের মানুষই যে পুওর ক্লাস, তারাই যে সর্বহারা, সেই জাতের লড়াইকেও যে একটা ক্লাস স্ট্রাগল করে তোলা যায়, সেটা বোঝার চেষ্টা তো করলই না কমিউনিস্টরা। বরং ওরা জাতের রাজনীতি করে বলে ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে চললেন, আর যখন বুঝলেন তখন মায়াবতী, লালু, মুলায়ম, নীতীশ কুমার, রামবিলাস পাসোয়ান সে খেলায় ডক্টরেট করে ফেলেছেন। ১৯৮৯ ওই ভি পি সিংয়ের সরকার, কমিউনিস্টরা জানতেন না? বিজেপি আরএসএস সম্পর্ক? জানতেন না যে কংগ্রেস দুর্বল হলে বিজেপি কিভাবে জাতীয় রাজনীতির সেন্টার স্টেজ দখল করবে? ওই ১৯৮৯-ই তো বিজেপিকে মাঝমাঠে এনে দিল। চতুর্বেদ মুখস্থ করে ফেলাও সহজ, কিন্তু ১৯৫২ থেকে আমাদের দেশের কমিউনিস্ট পার্টির শত্রু যে কারা, মিত্র যে কারা তা বোঝা অসম্ভব। ক্ষমতায় কংগ্রেস, বিজেপির সঙ্গে জোটে চলে যাচ্ছে কমিউনিস্ট পার্টি, ক্ষমতায় বিজেপি, বিএসপির সঙ্গেও জোট চাইছে কমিউনিস্ট পার্টি। এবং সাংগঠনিক চেহারা, সে তো কহতব্য নয়। 

আরামবাগের জমিদার বলা হত অনিল বসুকে, কোঁচানো ধুতির কী বাহার আমরা দেখেছি, আমরা দেখেছি ডিফাঙ্কড সাংসদ, বছরের পর বছর সাংসপ হয়েছেন, একটা কথাও বলেননি। বছরের পর বছর বিধায়ক হয়েছেন কেবল হাত তোলার জন্য। দলীয় আনুগত্যও নয়, দলের এক গোষ্ঠীর নেতাদের কাছে আনুগত্যই শেষ কথা বলেছে তার ভূরি ভূরি উদাহরণ দেওয়াই যায়। এবং সবশেষে গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার নামে এক চূড়ান্ত আমলাতান্ত্রিক স্বৈরাচার। আমরা সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সেন্ট্রাল কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ব্যস, নিদান হাঁকা হয়ে গেল। এসবের ফলে দলের যে বিরাট প্রাসাদ কিছুদিন আগেও আমরা দেখেছি, তা যে ছিল নেহাত এক বালির প্রাসাদ তা এখন স্পষ্ট। আচ্ছা লালুপ্রসাদ যাদব কতদিন ক্ষমতায় নেই? জেলে গিয়েছেন, অপরাধী ঘোষিত হয়েছেন। তারপরেও জাতীয় রাজনীতিতে কী করতে হবে, কীভাবে তেজস্বীকে রাজি করিয়ে নীতীশকে এনে আরজেডিকে বিহারে ফিরিয়ে আনলেন, তা কি কোনও শিক্ষা দেয় না? মাত্র গতকাল নীতীশ গেছেন ৭৫ বছরের লালুর সঙ্গে কথা বলার পরে গিয়েছিলেন কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া বা রাহুল গান্ধীর সঙ্গে কথা বলতে। এ রাজ্যে তাকিয়ে দেখুন, কিছুদিন আগেও যাঁরা দাপিয়ে বেড়াতেন, তাঁরা প্রত্যেকে কাকতালীয়ভাবেই অসুস্থ, ঘরেই থাকেন। জ্যোতি বসুকে ৯৫ বছর বয়সেও সাধারণ নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে শুনেছি আমরা, শুনেছি তাঁর রেকর্ড করা গলায় ভোটের আবেদন। অথচ আজ তাঁর মন্ত্রিসভার একজনও রাজ্যের রোজকার রাজনীতিতে সক্রিয় নন। বিজেপির চূড়ান্ত অপদার্থতার পরেও ত্রিপুরাতে সিপিএম-এর ভোট আর আসনসংখ্যা দু-ই কমেছে, কেন? কারণ ত্রিপুরার আদিবাসী মানুষদের সমর্থন তাঁরা হারিয়েছেন, যে সমর্থন তাঁদের এনে দিয়েছিলেন দশরথ দেব। সেখানকার আদিবাসী মানুষের আকাঙ্ক্ষা বুঝেও উঠতে পারেনি বামেরা। 

দেশের বদলাতে থাকা রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে কমিউনিস্ট পার্টি যেন এক ফসিল। নতুন করে ভাবার মানুষ নেই, মানুষের সমস্যার সঙ্গে দলের কর্মসূচিকে জুড়ে নেওয়ার আগে প্রতিবার যদি যান্ত্রিকভাবে লেনিন আর মার্কসের ভলিউম দেখে নিয়ে আসরে নামতে হয়, তাহলে তো এমনটাই হওয়ার কথা। রিপ ভ্যান উইঙ্কলের মতো এক প্রাচীন মানুষ হয়ে গেছে এদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, ক্রমশ স্থবির হয়ে পড়ছে। অথচ এটাও ঠিক যে এই মুহূর্তে কমিউনিস্টদের উজ্জ্বল ভূমিকার প্রয়োজন আছে। বামেদের এগিয়ে আসার প্রয়োজন আছে, সমাজ অর্থনীতিতে তাদের এগিয়ে আসার উপাদান মজুদও আছে। সে জড়তা কাটুক, হিমযুগ পেরিয়ে তুষার গলানো উত্তাপ আসুক সংগঠনে, চিন্তায়, দর্শনে।

পুরনো খবরের আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০ ১১
১২ ১৩ ১৪ ১৫ ১৬ ১৭ ১৮
১৯ ২০ ২১ ২২২৩ ২৪ ২৫
২৬ ২৭ ২৮ ২৯ ৩০ ৩১  
আর্কাইভ

এই মুহূর্তে

মুখ্যমন্ত্রীর চটি ছিঁড়ে যাওয়াকে কটাক্ষ দিলীপের
শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪
উধাও বিজেপির পতাকা, ঝাড়গ্রামে রাজনৈতিক তরজা
শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪
ভরাডুবির মরসুম নিয়ে কী সাফাই দিলেন হার্দিক
শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪
বজরংবলীর আশীর্বাদ পাবেন ৫ রাশির জাতক
মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০২৪
Stadium Bulletin | কোন ৫ কারণে প্লে-অফের দোরগোড়ায় KKR?
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
সোশ্যাল মিডিয়ায় নির্বাচনী প্রচারে সতর্কবার্তা নির্বাচন কমিশনের
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
কখন শচীনের দ্বারস্থ হন কোহলি?
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
চোটে জর্জরিত ম্যান ইউয়ের আজ কঠিন লড়াই
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
মমতার দিদিগিরি বরদাস্ত করব না, কলকাতায় ফিরেই হুঙ্কার রাজ্যপালের
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
অবশেষে স্বস্তির বৃষ্টি কলকাতায়
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
সুদীপের বিরুদ্ধে বিধিভঙ্গের অভিযোগ বিজেপির
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
মঙ্গলবার ৪ কেন্দ্রে ভোট, সব বুথে থাকবে কেন্দ্রীয় বাহিনী
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
সন্দেশখালি ভাইরাল ভিডিওতে কন্ঠস্বর গঙ্গাধর-জবারানির, দাবি শান্তি দলুইয়ের
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
জিতলে গম্ভীরের কৃতিত্ব হারলে দায় শ্রেয়সের? প্রশ্ন কিংবদন্তির  
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
রক্ষাকবচ সত্ত্বেও গ্রেফতার বিজেপি নেতা?
সোমবার, ৬ মে, ২০২৪
© R.P. Techvision India Pvt Ltd, All rights reserved.   Privacy Policy
Developed By KolkataTV Team