নয়াদিল্লি: গুগলকে ১,৩৩৭ কোটি টাকা জরিমানা করেছিল কম্পিটিশন কমিশন অব ইন্ডিয়া (Competition Commission of India – CCI)। গত বছরের শেষ পর্বে এই বিপুল পরিমাণ আর্থিক সাজার কথা শুনিয়েছিল এদেশের ন্যায্য বাণিজ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা (Fair Trade Regulator)। বুধবার ন্যাশনাল কোম্পানি ল অ্যাপেলেট ট্রাইব্যুনাল (National Company Law Appellate Tribunal – NCLAT) রায় দিয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম এবং জনপ্রিয় সার্চ ইঞ্জিন গুগলকে (Google) জরিমানার ওই অর্থ দিতেই হবে। ট্রাইব্যুনালের দুই সদস্যের বেঞ্চ (Two-member Bench) এই নির্দেশও দিয়েছে, আগামী ৩০ দিনের মধ্যে জরিমানা বাবদ ১,৩৩৭.৭৬ কোটি টাকা জমা করতে হবে।
কম্পিটিশন কমিশন অব ইন্ডিয়া বা সংক্ষেপে সিসিআই ২০২২ সালের ২০ অক্টোবর গুগলকে জরিমানা করেছিল। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের ক্ষেত্রে মার্কিন এই প্রযুক্তি সংস্থা প্রতিযোগিতা-বিরোধী অনুশীলন চালাচ্ছে। পোশাকী ভাষায় যাকে বলা হয় – অ্যান্টি কম্পিটিটিভ প্র্যাক্টিসেস (Anti-Competitive Practices)। পাশাপাশি, ভারতের এই নিয়ন্ত্রক সংস্থা গুগলকে অন্যান্য অন্যায্য ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড (Unfair Business Practices) বন্ধ করারও নির্দেশ দিয়েছিল। এর মধ্যে অন্যতম হলো, গুগল অন্য কোনও সংস্থার প্রোডাক্ট তাদের অপারেটিং সিস্টেমে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে অনেক জটিল প্রক্রিয়া তৈরি করে রেখেছে। এক্ষেত্রে একচ্ছত্র ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগও আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
আরও পড়ুন: Rahul Gandhi | মোদি-বিতর্কের কেন্দ্র থেকেই রাহুলের ভোট প্রচার শুরু কর্নাটকে
সিসিআই’য়ের করা জরিমানার বিরুদ্ধে ন্যাশনাল কোম্পানি ল অ্যাপেলেট ট্রাইব্যুনালে আবেদন জানিয়েছিল গুগল। এখানে উল্লেখ্য, এনসিএলএটি হলো সিসিআই’য়ের উত্তরবিচারকারী কর্তৃপক্ষ (Appellate Authority)। অর্থাৎ সিসিআই যা নির্দেশ জারি করে, তার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আবেদন করা যায়।
গুগল যে আবেদন দাখিল করেছিল, তা খারিজ করে দিয়েছে এনসিএলএটি। ট্রাইব্যুনাল এটাও বলেছে, এক্ষেত্রে সিসিআই যে তদন্ত চালিয়েছে, তাতে কোনওভাবেই স্বাভাবিক ন্যায়বিচার (Natural Justice) উল্লঙ্ঘিত হয়নি।
গুগলের বিরুদ্ধে যে অ্যান্ড্রয়েড অ্যান্টিট্রাস্ট কেস (Android Antitrust Case) চালানো হয়েছে, তাতে একাধিক অভিযোগ রয়েছে মার্কিন এই সংস্থার বিরুদ্ধে। তার সবকটিই গুরুতর অভিযোগ। অ্যান্ড্রয়েড পরিচালিত স্মার্ট ডিভাইসে ডিফল্ট ওয়েব ব্রাউজার (Default Web Browser) হিসেবে গুগল ক্রোম (Google Chrome) দেওয়া থাকে। তার পরিবর্তে ইউজার (User) নিজের পছন্দ মতো ব্রাউজার ব্যবহার করতে পারেন ঠিকই, কিন্তু সেই প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল (Complex Process)। আবার পরিবর্তন করে ফেললেও অনেক সময়তেই ডিফল্ট ওয়েব ব্রাউজারের আইকন দেখায় না বা ফের পরিবর্তন হয়ে যায়, এমনও অভিযোগ রয়েছে ইউজারদের তরফে।
গুগল ম্যাপ (Google Map), গুগল ড্রাইভ (Google Drive), ইউটিউব (YouTube), জিমেইলের (Gmail) মতো ইনবিল্ট অ্যাপ গুগল এতদিন অ্যান্ড্রয়েড ইউজারদের রিমুভ (Remove) করতে দিত না। ট্রাইব্যুনালের রায়ে গুগলকে জরিমানার (Penalty) অর্থ দিতে হচ্ছে এবং যে যে বদল আনতে বলা হয়েছে, তাও তারা করছে। শুধুমাত্র ভারতীয় ইউজারদের জন্য গুগল তাদের অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের ইউজার ইন্টারফেসে (User Interface – UI) বদল আনছে। গুগলের সমস্ত ডিফল্ট এবং ইনবিল্ট অ্যাপ (Default and Inbuilt App) রিপ্লেস ও রিমুভ (Replace and Remove) করা যাবে। একথা তারা আগেই জানিয়েছে।
সিসিআই কিংবা ট্রাইব্যুনাল যে নির্দেশ দিয়েছে, গুগল সে সম্পর্কে গভীর উদ্বিগ্ন (Concern)। তাদের দাবি ২০১৮ সালে ইউরোপীয় কমিশন (European Commission) যে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত দিয়েছিল, তার তুলনায় ভারতীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থার রায় অত্যন্ত কঠোর।
ভারতে ৬০০ মিলিয়ন স্মার্টফোন ব্যবহৃত হয়, এর মধ্যে ৯৭ শতাংশই অ্যান্ড্রয়েড পরিচালিত। অন্যদিকে, ইউরোপে (Europe) ৫৫০ মিলিয়ন স্মার্টফোন ব্যবহৃত হয়। তার মধ্যে ৭৫ শতাংশ অ্যান্ড্রয়েড পরিচালিত স্মার্টফোন।