এটিকে মোহনবাগান–২ ওড়িশা এফ সি–০
(হুগো বুমো, দিমিত্রি পেত্রাতোস)
প্রত্যাশিতভাবেই আই এস এল-এর সেমিফাইনালে উঠল এটিকে মোহনবাগান। শনিবাসরীয় সন্ধ্যায় সল্ট লেক স্টেডিয়ামে তারা দাপিয়ে খেলেই হারিয়ে দিল ওড়িশাকে যাদের বিরুদ্ধে তারা সাত ম্যাচ খেলে খখনও হারেনি। এর আগে ছয়টা ম্যাচে জিতেছিল তিনটিতে, বাকি তিনটে ড্র হয়েছে। এদিন মোহনবাগান আরও বেশি গোলে জিততে পারত। শুধু জয়ই নয়, এদিন মোহনবাগানের সঙ্গী হল চোট আঘাতও। দশ মিনিটের মাথায় চোট পেয়ে বেরিয়ে যেতে হল আশিক কুরুনিয়নকে। আর ৬৫ মিনিটে বিপক্ষ স্ট্রাইকারের সঙ্গে সংঘর্ষে বড় রকমের চোট লাগার সম্ভাবনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত গোলকিপার বিশাল কাইথ সেভাবে আহত হননি। যদিও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়ে তাঁকে তুলে নেওয়া হয়। তাঁর বদলে নামেন আর্শ আনোয়ার। প্রায় সারা বছর মাঠের বাইরে বসে থেকেও যে সুযোগটুকু পেলেন তরুণ গোলকিপার আর্শ, তা কাজে লাগালেন। আর আশিকের বদলে নেমে লিস্টন কোলাসো বেশ ভালই খেললেন। বাঁ দিক দিয়ে তাঁর দৌড়গুলোর মধ্যে গোলের সম্ভাবনা ছিল। গোল হয়নি সেটা অন্য কথা। কিন্তু লিগের শেষ দিকে এসে লিস্টন যে ফর্মে ফিরলেন এটা মোহনবাগানের পক্ষে বেশ ভাল ব্যাপার। সেমিফাইনালে মোহনবাগানকে খেলতে হবে গতবারের চ্যাম্পিয়ন হায়দরাবাদ এফ সি-র সঙ্গে। ৯ মার্চ হায়দরাবাদে আর ১৩ মার্চ কলকাতায়। অন্য সেমিফাইনালে লিগ শিল্ড জয়ী মুম্বই সিটি এফ সি-র সামনে বেঙ্গালুরু এফ সি। শুক্রবার বেঙ্গালুরুতে সুনীল ছেত্রীর গোলে বেঙ্গালুরু ১-০ গোলে হারিয়ে দিয়েছে কেরালা ব্লাস্টার্সকে। ৯৭ মিনিটে ফ্রি কিক থেকে গোল করেন ছেত্রী। কিন্তু রেফারি বাঁশি বাজানোর আগে সুনীল শট নিয়েছেন এই অভিযোগে কেরালা এর পর আর ম্যাচ খেলতে চায়নি। রেফারি ক্রিস্টোফার জন মিনিট পনেরো অপেক্ষা করে বেঙ্গালুরুকেই জয়ী বলে ঘোষণা করেন। ৭ মার্চ ম্যাচ হবে মুম্বইতে, ১২ মার্চ ম্যাচ হবে বেঙ্গালুরুতে।
ওড়িশার বিরুদ্ধে মোহনবাগানের জয় নিয়ে কোনও সংশয় ছিল না। এবার দুটো ম্যাচে একটা ড্র হয়েছে, একটায় বাগান জিতেছে। আগের দুটো ম্যাচে কেরালা এবং ইস্ট বেঙ্গলকে হারিয়ে বাগানের মনোবল এখন তুঙ্গে। ব্রেন্ডন হামিল সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর পাশে থাকবার জন্য ফিরে গেছেন অস্ট্রেলিয়ায়। কিন্তু তাতে কোনও ক্ষতি হয়নি। তাঁর পরিবর্ত স্লাভকো দুর্দান্ত খেললেন। ইস্ট বেঙ্গলের বিরুদ্ধে তো গোলই করেছেন। এদিন গোল না করলেও গোল বাঁচানোর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ভূমিকা নিয়েছেন। তবে দিনের সেরা ছিলেন কার্ল ম্যাকহিউ। গ্লেন মার্টিন্স ঘাড়ে ব্যথা পেয়ে এই ম্যাচের বাইরে ছিলেন। পুইতয়াকে পাশে নিয়ে ডিফেন্সিভ স্ক্রিনের দায়িত্বে ছিলেন কার্ল। তাঁর জন্যই ওড়িশা অ্যাটাকাররা বাগান ডিফেন্সের ঘাড়ে চাপতে পারেনি। প্রীতম কোটাল অনেক নিশ্চিন্তে খেলতে পেরেছেন। ওড়িশার এক নম্বর স্ট্রাইকার দিয়েগো মরিসিওকে নড়াচড়া করার সময় এবং জায়গা দেননি কার্ল এবং স্লাভকো। সঙ্গত কারণেই ম্যাচের সেরার পুরস্কার পেয়েছেন কার্ল ম্যাকহিউ। হায়দরাবাদের কোচ মানালো মার্ককিউস গ্যালারিতে বসেছিলেন মোহনবাগানের খেলা দেখতে। তাঁর নোট বইতে অবশ্যই দুজনের নাম উঠে যাবে। একজন যদি হন কার্ল, অপরজন অবশ্যই লিস্টন কোলাসো। ওড়িশার আক্রমণ বলতে মাঝ মাঠে কিছু দৌড় এবং বক্সের সামনে এসে খেই হারিয়ে ফেলা। তাই বিশাল কাইথকে তেমন উদ্বেগজনক মূহুর্ত পেরোতে হয়নি। তবে তাঁর চোটটা নিশ্চয়ই ভাবাচ্ছে বাগানকে। ম্যাচ চলাকালীনই তাঁকে নিয়ে যাওয়া হল স্টেডিয়াম সংলগ্ন হাসপাতালে।
মোহনবাগান টিমটা সেট টিম। সামনের দিকে হুগো বুমো আক্রমণ গড়ার কাজটা করেন। ডান দিকে মনবীর, বাঁ দিকে লিস্টনকে নিয়ে তিনি একটার পরএকটা আক্রমণ তৈরি করেছেন। মোহনবাগান প্রাক্তনী গোলকিপার অমরিন্দর সিং অনেক গোল বাঁচিয়েছেন। কিন্তু ৩৬ মিনিটে হুগো বুমোর বাঁ পায়ের ভলিতে গোল খাওয়া আটকাতে পারেননি।বাঁ দিক থেকে দিমিত্রির কর্নার এর ওর পা হয়ে যখন বুমোর কাছে গেল তখন গোল লাইন থেকে তিনি গজ আষ্টেক দূরে। বাঁ পায়ের ভলিটা আটকানো অমরিন্দরের পক্ষে সম্ভব ছিল না। আবার ৫৮ মিনিটে হুগোর ফরোয়ার্ড পাস থেকেই দিমিত্রি উঁচু ভলিতে দ্বিতীয় গোলটা করলেন। এবারের লিগে তাঁর দশটা গোল হয়ে গেল। সব মিলিয়ে মোহনবাগান সেমিফাইনালে হায়দরাবাদের মোকাবিলায় প্রস্তুত। অবশ্যই নিজামের শহর ফেভারিট। কিন্তু বাগান এখন যে ফর্মে তাতে পাশা উল্টে দেওয়ার ক্ষমতা তাদের আছে।