ইস্ট বেঙ্গল–১ মুম্বই সিটি এফ সি–০
(নাওরম মহেশ সিং)
সিংহের গুহায় গিয়ে সিংহ শিকার করল ইস্ট বেঙ্গল। রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় মুম্বই স্পোর্টস এরিনায় গিয়ে তারা হারিয়ে দিল এবারের আই এস এল-এর লিগ শিল্ড জয়ী মুম্বই সিটি এফ সি-কে। আসলে এটাই ছিল মুম্বইয়ের লিগের শেষ ম্যাচ। মাঠেই তাদের হাতে তুলে দেওয়া হল লিগের এক নম্বর টিম হওয়ার জন্য আই এস এল শিল্ড। মুম্বই ফুটবলাররা সেটা নিলেন তেঁতো মুখে। আসলে এটাই ফুটবলের মাহাত্ম্য। ফেভারিট টিমেরও পদস্খলন হয়। এটা কি অঘটন? একেবারেই নয়। কারণ কদিন আগে মুম্বই জামশেদপুরে গিয়ে তাদের কাছে হেরে এসেছে। আঠেরোটা ম্যাচে অপরাজিত থাকার পর তারা প্রথম হারল জামশেদপুরের কাছে। আর ঘরের মাঠে নটা ম্যাচে অপরাজিত থাকার পর রবিবার হারল ইস্ট বেঙ্গলের কাছে। পর পর দুটো ম্যাচে হারকে তাহলে কি বলা যাবে? আত্মতুষ্টি? হয়তো এই কথাটাই ঠিক। আর হারল তো হারল লিগের দুটো নীচের সারির দলের কাছে। নয় নম্বরের পর দশ নম্বরের কাছে। মুম্বই সম্পর্কে এত কথা বলতে হল কারণ তারাই এবার সেরা টিম। তাদের যে ইস্ট বেঙ্গল হারাবে তা লাল হলুদের কট্টর সমর্থকরা ভাবতেই পারেননি। গ্যালারিতে লাল হলুদ পতাকা নিয়ে গায়ে লাল হলুদ জার্সি পরে যে কতিপয় তরুণ তরুনী সারাক্ষণ চেঁচিয়ে গেলেন তাদের পরিশ্রম সার্থক। এদিন তাদের প্রিয় দল আরও বেশি গোলে জিততে পারত। তবে যা হয়নি তা নিয়ে বিলাপ করে লাভ নেই। বরং এই ম্যাচ জিতে তিন পয়েন্টের সঙ্গে আগামি শনিবারের ডার্বির আগে বিরাট মনোবল বাড়িয়ে নিল ইস্ট বেঙ্গল। তাদের এদিনের জয়ের গোলটা করলেন নাওরম মহেশ সিং। এবং সঙ্গত কারণেই তিনি ম্যাচের সেরা।
মুম্বইয়ের আত্মতুষ্টির কথা বলছিলাম। মুম্বই তাদের রক্ষণের স্তম্ভ মেহতাব সিংকে না খেলিয়ে খেলাল উনিশ বছর বয়সী একটা পাহাড়ি ছেলেকে। নাম হালেন। আর ফরোয়ার্ডে গ্রেগ স্টূয়ার্টকে না খেলিয়ে খেলাল একজন ভারতীয়কে। এখানেই তাদের শক্তি আর্দ্ধেক কমে যায়। সুযোগটা খুব ভালভাবেই নিল ইস্ট বেঙ্গল। তাদের মাঝ মাঠে অ্যালেক্স লিমা ফিরে আসায় এবং তাঁর পাশে মোবাসির রহমান বেশ খেলায় ইস্ট বেঙ্গলের ব্লকিং খুব ভাল হচ্ছিল। কিন্তু মুম্বইয়ের ডান দিকে ছাংতে আর বাঁ দিকে বিপিন সিং যে ঝড় তুলছিলেন তা সামাল দিতে হিমসিম খাচ্ছিল লাল হলুদ ডিফেন্স। এই দুজনই বাজপাখির মতো দুটো ডানা দিয়ে ঝাপটে গেল ইস্ট বেঙ্গলকে। কিন্তু দাঁত নখ ছিল না গ্রেগ স্টূয়ার্ট না থাকায়। তাই মুম্বইয়ের আক্রমণ সামলে ধীরে ধীরে ম্যাচে ফেরে ইস্ট বেঙ্গল। দুই উইঙ্গার ভি পি সুহের এবং নাওরম মহেশ সিং দুদিক থেকে ভাল ভাল বল বাড়াচ্ছিলেন। কিন্তু ক্লেটন সিলভা এবং জেক জার্ভিস সেগুলোকে কাজে লাগাতে পারেননি। মুম্বই গোলকিপার লালছেংপা বহু গোল বাঁচিয়েছেন। বিশেষ করে দ্বিতীয়ার্দ্ধে।
কিন্তু ৫২ মিনিটে দলের গোল খাওয়া আটকাতে পারেননি। মেহতাব সিং না থাকায় অধিনায়ক মোর্তাদা ফলের উপর চাপ বাড়ে। সামনের দিকে আহমেদ জোহু এবং নগুয়েরা থাকলেও তাদের ভূমিকা ছিল নির্বিষ। তাই গোলের সময় প্রথমে ক্লেটন থেকে সুহের এবং তাঁর স্কোয়ার পাস থেকে মহেশ বাঁ পায়ের ভলিতে যে গোলটা করলেন তা সামলাবার ক্ষমতা লালছেংপার ছিল না। এর পরেও গোল করার সুযোগ পেয়েছে ইস্ট বেঙ্গল। শুধু গোলকিপারকে সামনে পেয়েও পর পর দুবার গোল করার সুযোগ নষ্ট করেছেন সুহের। তবে মুম্বইয়ের অ্যাটাকারদের ভাল সামলেছেন গোলকিপার কমলজিৎ, দুই সেন্টার ব্যাক লাল এবং কিরিয়াকু। আর আলাদা করে বলতে হবে লেফট ব্যাক জেরির কথা। ভারতীয়দের মধ্যে টপ স্কোরার, দশ গোল করা ছাংতেকে তিনি ভয়ঙ্কর হতে দেননি। মোক্ষম সময়ে ট্যাকল করে বল ছিনিয়ে নিয়েছেন। সব মিলিয়ে আই এস এল-এর সেরা ম্যাচ খেলল ইস্ট বেঙ্গল এবং মাঠ ছাড়ল ম্যাচ জিতে। এর আগে পাঁচটা ম্যাচে ইস্ট বেঙ্গল কখনও জেতেনি। তবে রবিবার নয়, তাদের সেলিব্রশন হবে সামনের শনিবার যদি তারা এটিকে মোহনবাগাকে হারাতে পারে, যাদের বিরুদ্ধে কখনও তারা জেতেনি।