কলকাতা: দ্বিতীয় দিনে চা-বিরতি সবে শেষ হয়েছে। আকাশের মুখ ভার। আম্পায়ার ঘোষণা করলেন ম্যাচ এখনই শুরু হবে না। খারাপ আলোর জন্য ম্যাচ বন্ধ প্রায় ২০ মিনিট। তবে ইডেনের ভিআইপি বক্স থেকে প্রেস বক্স সব জায়গাতে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে একজনকে নিয়েই আলোচনা। তিনি হলেন ভারতের নির্বাচক প্রধান চেতন শর্মা। একটু ভুল বললাম। তিনি ততক্ষণে ‘প্রাক্তন’ হয়ে গিয়েছেন। বর্ডার-গাভাসকর সিরিজ চলার মাঝেই চেতন শর্মা ভারতের নির্বাচক প্রধানের পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দিয়েছেন। ভারত-অস্ট্রেলিয়া সিরিজ চলাকালীন নির্বাচক প্রধানের এভাবে ইস্তফা ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে কবে হয়েছিল মনে পড়ছে না। বাংলার দু’জন প্রাক্তন রঞ্জি জয়ী ক্রিকেটার কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করলেন চেতন আজ আসেনি ইডেনে? চেতন কোথায়? রঞ্জি ফাইনালের প্রথমদিন ইডেনে এসেছিলেন তিনি। তবে সংবাদমাধ্যম থেকে শতহস্ত দূরে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন। খোঁজ নিয়ে জানলাম সকাল ১০টা ২০-র ফ্লাইটে দিল্লির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। আজ ভীষণ চেনা সাংবাদিকের ফোনও যে তিনি তুলবেন না সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু চেষ্টা করতে তো ক্ষতি নেই। অবশেষে অবশ্য হতাশই হতে হল। তবে ক্রীড়া সাংবাদিকদের জীবনে হতাশা আসতেই পারে। সেইজন্য ‘প্ল্যান বি’-ও ভেবে রাখতে হবে। দিল্লিতে শর্মাজীর ঘনিষ্ঠমহলে ফোন করে যে গুঞ্জন শুনলাম তা রীতিমত শিহরণ জাগাবে। স্টিং অপারেশন ফাঁস হওয়ার পর বোর্ডের এক শীর্ষকর্তা নাকি ফোন করেন চেতন শর্মাকে। সেই বোর্ড কর্তা তাঁকে বলেন, ‘ভারতীয় দলের তিনজন সিনিয়র ক্রিকেটার চান না যে তিনি নির্বাচক প্রধানের পদে থাকুন। তাই সম্মান থাকতে ইস্তফা দেওয়াই শ্রেয়।’ মোদ্দা কথা, অনেক হয়েছে, এবারে তুমি আসতে পারো। আর ফলস্বরূপ শুক্রবার সকালে কলকাতায় বসে ইস্তফা পত্র লেখেন এবং জমা দেওয়ার পর রাজধানীর উদ্দেশে রওনা হন। নির্বাচক শিবসুন্দর দাস আজ রঞ্জি ফাইনাল দেখতে ইডেনে এসেছিলেন। কিন্তু চেতন প্রসঙ্গে কোনওভাবেই একসময়ের এই ওপেনারের ডিফেন্স ভেদ করা গেল না। সব ঠিকঠাক চললে শিবসুন্দর দাস-ই চেতন শর্মার স্থলাভিষিক্ত হতে চলেছেন। বলা বাহুল্য, রঞ্জি ফাইনালের দ্বিতীয় দিন বাংলা-সৌরাষ্ট্র ম্যাচকে ছাপিয়ে জায়গা করে নিল চেতন শর্মার ইস্তফা।
অন্যদিকে, দ্বিতীয় দিনের শেষে ১৪৩ রানের লিড নিয়ে ইতিমধ্যেই রঞ্জি জয়ের গন্ধ পেতে শুরু করে দিয়েছে সৌরাষ্ট্র। যদিও বাংলার কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্লা ইডেন ছাড়ার আগে বলে গেলেন, ‘এখনও ম্যাচের তিনদিন বাকি। আমরা আশা ছাড়ছি না। আগামিকালের প্রথম সেশন ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে।’
সৌরাষ্ট্রের কোচ বেশ সতর্ক। বললেন, ‘আত্মতুষ্টির কোনও জায়গা নেই। অবশিষ্ট ৩ দিনে অনেক কিছুই হতে পারে।’
১৯৮৯-৯০ মরশুমের রঞ্জি জয়ী অধিনায়ক সম্বরণ বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘কাল বোঝা যাবে ম্যাচ কোনদিকে যাচ্ছে। তবে আমার মনে হয় প্রথম দিন দেড় ঘন্টার মধ্যেই ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে গিয়েছে।’
বাংলার অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি আজ অনেকটাই হতাশ। বললেন, ‘বোলাররা পরিকল্পনামাফিক বল করতে পারেনি। ভীষণ ‘অফ-কালার’ দেখিয়েছে। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে শাহবাজের হাত থেকে ক্যাচ মিসও ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়। তবে আমরা এখনও হাল ছাড়ছি না। যদি কাল ৩০ রানের মধ্যে বাকি পাঁচটি উইকেট তুলে নিতে পারি তাহলে ম্যাচের ভাগ্য অন্যদিকেও যেতে পারে। আর এটা অসম্ভব নয়।’
সৌরাষ্ট্রের ভাসাভাদা-চিরাগ জুটি ১১৩ রানের পার্টনারশিপ করে ক্রিজে রয়েছে। এই দু’জন যেভাবে ব্যাটিং করছেন তাতে বাংলা অধিনায়কের ভবিষ্যদ্বাণীর উপর বাজি রাখতে চাইবে না কেউই। আরও একটা কারণ ইডেনের উইকেটে প্রথমদিনে খেলার শুরুতে যে পরিমাণ আর্দ্রতা ছিল তা কিন্তু দ্বিতীয় দিনে ছিল না। তৃতীয় দিনেও যে সেটা হবে না তা কে বলতে পারে?
তবে আবারও বলছি, ইডেনের দ্বিতীয় দিনে বাংলা বনাম সৌরাষ্ট্রের রঞ্জি ফাইনাল যেন গৌণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম ‘হ্যাটট্রিক হিরো’-র নির্বাচক প্রধানের পদ থেকে ইস্তফা…