কলকাতা: ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রেম দিবসে গরুকে জড়াইয়া ধরিবার নিদান দিয়াছে জাতীয় পশু কল্যাণ বোর্ড। প্রেম দিবসে যখন দিকে দিকে মানবজাতি তার প্রেমাস্পদকে আলিঙ্গন করিবে, তখন দিকে দিকে গোপ্রেমী মানুষকে গরুকে জড়াইয়া ধরিতে দেখা যাইবে। আহা, এই দৃশ্য কল্পনা করিতেও কী ভালোই না লাগিতেছে। ওইদিন দেশের যাবতীয় গরুর খাটালে ভিড় জমিবে গোভক্তদের। তাহাদের আলিঙ্গনে খুশি হইয়া গরুরাও চার পা তুলিয়া পাল্টা আলিঙ্গন করিবে। সব মিলিয়া তাহাতে কী প্রেমরসই না সিঞ্চিত হইবে। ভাবিয়া যারপরনাই পুলকিত হইতেছি।
এমনিতেই দেশে এক শ্রেণির মানুষ গোপ্রেমে অন্ধ। দেশের মানুষ না খাইতে পারুক, তাহাতে ওই গোপ্রেমীদের কিছু যায় আসে না। কিন্তু তাহারা গরুকে খাওয়াইতে ব্যস্ত থাকেন। আপিসে যাওয়ার পথে রোজই এক ক্ষুদ্র মাঠে বাঁধা কিছু গরুকে খাদ্য ভক্ষণ করাইতে দেখি এক ব্যক্তিকে। তাহার পর গরুগুলিকে তিনি নমস্কারও করেন। তাহার হাতে বিস্কুট, কলার ঠোঙা দেখিয়া পথের কিছু অভুক্ত শিশু ছুটিয়া আসে। কিন্তু ওই গোপ্রেমিককে ওই শিশুদের দিকে তাকাইতেও দেখি না। তাহার গরুপ্রেম দেখিয়া আমি মুগ্ধ হইয়া আপিসের পথে হাঁটা দিই।
আরও পড়ুন:India’s Quakes Prone Area: আপনি কি জানেন দেশের ৬০ শতাংশ এলাকার ‘ধরণী দ্বিধা’ হওয়ার ঝুঁকির মুখে?
জাতীয় পশু কল্যাণ বোর্ডের ওই বিজ্ঞপ্তি দেখিয়া আপিসের পথে নিত্য দৃশ্যমান ওই গোপ্রেমীর মতো হাজার হাজার প্রেমিকপ্রবর দারুণ উল্লসিত হইয়াছেন। বিশ্বস্ত সূত্রে জানিতে পারিলাম, পাড়ায় পাড়ায় গরুকে আলিঙ্গন করিবার মহোৎসব পালনের জন্য কমিটি গঠনের তোড়জোড় হইতেছে। বিজেপি, সঙ্ঘ পরিবারের লোকজন এখন দারুন ব্যস্ত। অনেক রাজ্যে এই প্রেম দিবসে এক শ্রেণির মানুষ প্রেমিক প্রেমিকার পিটানোর জন্য মুখাইয়া থাকে। তাহাদের মতে, প্রেম দিবস নাকি ভারতীয় ঐতিহ্যের বিরোধী। তাই রাস্তাঘাটে, পার্কে যুবক যুবতী, মহিলা পুরুষকে একত্রে দেখিলেই ওই বীরপুঙ্গবদের বীররস জাগিয়া ওঠে। এইবার পশু কল্যাণ বোর্ডের বিজ্ঞপ্তি জারি হইবার পর তাহাদের দায়িত্ব আরও বাড়িয়া গিয়াছে। রাস্তায় যুবক যুবতীকে একান্তে দেখিলেই তাহাদের পিটাইতে হইবে। আবার গরুকেও আলিঙ্গন করিতে হইবে।
এমনিতেই এই রাজ্যে দিলীপ ঘোষের মতো কিছু বিজেপি নেতা গরুর দুধে সোনা খুঁজিয়া পাইয়াছেন। কেহ কেহ আবার করোনা কালে গোমূত্র খাইলে তাহা সারিয়া যাইবে বলিয়া প্রচার করিয়াছেন। কোথাও কোথাও তো গোমূত্র পান করিবার জন্য মণ্ডপ খাটাইয়া উৎসব হইয়াছিল। যোগীরাজ তো তাঁহার রাজ্যে গরুদের পেনশন দিবারও প্রতিশ্রুতি দিয়াছিলেন গত ভোটের আগে।
তবে সব কিছুকে ছাপাইয়া গিয়াছে পশু কল্যাণ বোর্ডের ওই বিজ্ঞপ্তি। তাহাতে গরুকে ভারতীয় সংস্কৃতির মেরুদণ্ড বলা হইয়াছে। পশ্চিমি ভাবধারায় প্রভাবিত হওয়ার ফলে ভারতে নাকি বৈদিক সংস্কৃতি লুপ্ত হইতে বসিয়াছে। এমন কথাও বলা হইয়াছে।
আসলে কিছু একটা লইয়া মাতিয়া থাকিতে হইবে। আদানি গোষ্ঠীকে।লইয়া যখন বিজেপি নানা প্রশ্নের মুখে, তখনই গরুকে আলিঙ্গন করিবার উদগ্র বাসনা পাইয়া বসিল কেন্দ্রের শাসকদলের। দেশে বেকারি বাড়িতেছে, দ্রব্যমূল্য লাগামছাড়া। চারিদিকে শুধুই হাহুতাশ। তাহা হইতে দৃষ্টি ঘুরাইতেই এই গোপ্রেম কি না, কে জানে।
তবে আবারও বলিতেছি, ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রেম দিবস, থুড়ি গো আলিঙ্গন দিবসে কী হইতে চলিয়াছে, তাহা ভাবিয়া আমার রাতের ঘুম ছুটিয়াছে। শুধু একটাই পরামর্শ, দেখিবেন, গরুকে আলিঙ্গন করিবার সময় সে যেন শিঙ বাগাইয়া গুঁতাইতে না আসে। সে গুঁতাইয়া দিলে আবার হাত পা ভাঙিয়া ঘরে বসিয়া থাকিতে হইবে। তখন আবার না কেহ নিদান দেয়, এক কাপ গোমূত্র পান করিলেই আপনার ব্যথা বেদনা সব দূর হইয়া যাইবে। যাই হউক, শুভ গো আলিঙ্গন দিবসের অনেক শুভেচ্ছা রহিল।