Placeholder canvas
কলকাতা সোমবার, ০৭ এপ্রিল ২০২৫ |
K:T:V Clock
Fourth Pillar: একটা আত্মহত্যা, বেকারত্ব আর ছাঁটাইয়ের গল্প  
কলকাতা টিভি ওয়েব ডেস্ক Published By:  কৃশানু ঘোষ
  • প্রকাশের সময় : শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০২৩, ১০:৩০:০০ পিএম
  • / ১৬২ বার খবরটি পড়া হয়েছে
  • কৃশানু ঘোষ

২৭ বছরের এক যুবতী লাশকাটা ঘরে, শরীরের বিভিন্ন অংশে তখনও টাটকা রক্ত, সেই শরীর যা সুন্দর করে সাজিয়ে সে আমার আপনার সামনে হাজির হত, ওয়েলকাম অ্যাবোর্ড স্যর, ওয়েলকাম ম্যাম। তারপর হঠাৎ এয়ার পকেটে প্লেন লাফালে, আপনি ভয় পেলে সে আপনার পাশে এসে বলত, একটু জল খাবেন? হ্যাঁ, মেয়েটি ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট ছিল, আপনি হয়তো খেয়াল করেছেন, হয়তো বা খেয়ালই করেননি। সেই মেয়েটি এখন লাশকাটা ঘরে। কেন? সে তার চাকরি হারিয়েছিল, যে উঁচু মাইনের চাকরিতে সে নিজেকে অভ্যস্ত করে তুলেছিল, সেই চাকরি হঠাৎ একদিন একটা কাগজে এক লাইন দুঃখপ্রকাশ করে কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। হয়তো এই চাকরির দৌলতেই একটা চারচাকা গাড়ি, অ্যাপেল ফোন, টু বিএইচকে ফ্ল্যাট, সবই ইনস্টলমেন্টে। সব এসেছে হু হ করে, এবার সব চলে যাবে, তার সঙ্গে আত্মসন্মান, অতএব সেই হাওয়ায় ওড়া ফাগুন মেয়ে, আরেক ফাগুনের আগেই মাটিতে লাফ দিল, এখন সে লাশকাটা ঘরে। ২০২৩-এই ছবি, যা পড়ে আছে ওই মুর্দোফরাস টেবিলে, তা ট্রেলার মাত্র, পুরো ছবি নাকি আসেনি, আসছে। 

২০২৩-এর প্রথম ১৬ দিন, হ্যাঁ, মাত্র প্রথম ১৬ দিনে চাকরি গেছে ২৪ হাজার মানুষের। হ্যাঁ, আমাদের দেশে, যেদিন বছর শেষ হচ্ছিল, সেদিনের পার্টিতে বসেও যারা গোয়া ট্যুর-এর প্ল্যান করছিল, তাদের বেশ কিছু মানুষ আজ জবলেস, হ্যাঁ, ইদানীং বেকারত্বের নতুন নাম, অ্যায়াম জবলেস। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, মন্দা আসছে, এসেছে, হিসেব বলছে দেশে বেকারত্বের পরিসংখ্যান রেকর্ড ছুঁয়েছে। প্রথম ১৬ দিনেই ২৪ হাজার চাকরি চলে গেছে। এটা তো ট্রেলার, এরপর মাঠে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে, তাদের ঘরে চাকরি গেলে আরও অনেক লাশ চিরফাড় করতে হবে, লাশকাটা ঘরে ভিড় হবে। আবার সেই একই আর্থিক বছরে রেকর্ড সম্পদ বৃদ্ধি গৌতম আদানির, সম্পদ বৃদ্ধি আম্বানির, কর্পোরেট হাউসের আয় বাড়ছে, সম্পদ বাড়ছে, দেশে বিলিওনেয়ার বাড়ছে। এক সমীক্ষা বলছে এই বছরেই বিভিন্ন সংস্থার উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের মাইনে বাড়বে ১৩–১৪ শতাংশ। গুলিয়ে যাচ্ছে সব, তাই না? একধারে ছাঁটাই, একধারে বেতন বৃদ্ধি, একধারে রেকর্ড বেকারত্ব, একধারে দেশে বিলিওনেয়ারের সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে। একই সঙ্গে অর্থনীতির এই চরিত্র কেন দেখছি আমরা? এর আগে দেখেছি অর্থনীতিতে মন্দা মানে পুঁজির সংকট, বেকারত্ব, সম্পদ কমছে শিল্পপতিদের, মাইনে ছাঁটাই হচ্ছে উচ্চপদস্থদের, এসব আমরা দেখেছি, যা ছিল ক্লাসিক্যাল ক্যাপিটালিজম, বিশুদ্ধ পুঁজিবাদ। এবার পুঁজির সংকট তো আসারই কথা, এসেছে, পুঁজিবাদ তাকে সামলাল কী করে? তারা আইডিয়া, চিন্তা ধার নিল সমাজতন্ত্র থেকে, সামাজিক সুরক্ষার কথা ভাবল, চালু করল, লাভের এক অংশ ভাগ বাঁটোয়ারা করল, যা পেল বেশ কিছু উচ্চপদস্থ কর্মচারীরা। মাইনের সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা, বাসস্থান, শিক্ষার সুযোগ পেল সাধারণ কর্মচারীরাও, পুঁজি বাড়ল, কিন্তু সেই তীব্র শোষণের ধার কমিয়ে সে নিজেকে আরও মজবুত করে তুলল। এমনকী শ্রমিকদের ইউনিয়ন তৈরি করার অধিকারও তারা দিল। এ একটা পর্বকাল জুড়ে চলেছে। 

আরও পড়ুন: Fourth Pillar: কেবল ঘোষণার সরকার, ঘোষণাতেই শেষ?  

কিন্তু পুঁজির সংকট কি এই খানিক ঝোলাগুড় আর পিঠে দিয়েই সামলানো যাবে, পুঁজিবাদেরও তো বিকৃতি আছে, তার বিকৃত এক চেহারা আছে, ব্যক্তি পুঁজি, খোলা বাজার, কর্পোরেট পুঁজি, গ্লোবালাইজেশন এসব দিয়েও সামলানো যায় না, বিভিন্ন দেশে সে এক বিকৃত চেহারায় হাজির, ক্রোনি ক্যাপিটালিজম। রাজনৈতিক ক্ষমতা আর ফিনান্স পুঁজি মিলিয়ে এক কদর্য চেহারা। এমন নয় যে হঠাৎ তৈরি হল, কিন্তু ২০১৪ র পর থেকে এই শঠ পুঁজি, ক্রোনি ক্যাপিটালিজমের গ্রোথ দেখলে চমকে উঠতে হবে। পুঁজির সঙ্গে রাষ্ট্রক্ষমতার যোগাযোগ নতুন কিছু নয়, ইন ফ্যাক্ট পুঁজিই তো রাষ্ট্রকে চালায়, কিন্তু এই ক্রোনি ক্যাপিটালিজমের চেহারাটা অনেক আলাদা। আমি একটু ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করছি। এমনিতে পুঁজি আর রাষ্ট্রক্ষমতার সম্পর্কটা কেমন? রাষ্ট্রক্ষমতা পুঁজিকে বেড়ে ওঠার সুযোগ দেবে, তাকে সুরক্ষা দেবে, নিরাপত্তা দেবে আর রাষ্ট্রক্ষমতা সেই সব সুযোগ মন মতো হলে, সেই পাহারাদারকে ক্ষমতায় রাখবে, থাক ভাই তোরা করে খা। কিন্তু যদি পুঁজির মনে হয় পাহারাদার ভালো নয়, সে যা করছে তাতে আখেরে পুঁজির ক্ষতি হবে, তাহলে সে সেই পাহারাদারের কাঁধ থেকে হাত সরিয়ে নেবে, অন্য কেউ ক্ষমতায় বসবে। মানুষ ভাববে তাদের সম্মিলিত শক্তির মুখে শাসকদল হেরে গেল, কিন্তু তাদের সম্মিলিত শক্তির পেছনে আলতো করে দাঁড়িয়েছে পুঁজি, পুঁজিপতিরা, তা জনগণ টের পায় না। কাজেই বড়বড় কথা বলে, গরিবি হঠাও, বলে দেশের প্রাচীনপন্থী নেতাদের সরিয়ে ইন্দিরাকে আনার পেছনে সমর্থন ছিল এই পুঁজির, আবার সেদিনও ইন্দিরার একনায়কের চেহারা পুঁজির পছন্দ হয়নি, তারা তাঁর বিরুদ্ধে গিয়েছে বলেই ইন্দিরা হেরেছেন। এমন নয় যে মানুষের কোনও ভূমিকাই নেই, নিশ্চয়ই আছে কিন্তু সেই ভূমিকাকে কার্যকরী করে তুলে ভাগের মা-কে নিজেদের দিকে আনার দায় রাষ্ট্রের চালিকাশক্তি এই পুঁজির থাকে। এটা দেশে দেশে দেখেছি আমরা, পুঁজি রাষ্ট্রের পাহারাদারকে নির্বাচিত হতে সাহায্য করে, এর ফলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পুঁজি তার সংকটকে সরিয়ে ক্রমশ ফুলে ফেঁপে ওঠে কিন্তু মানুষের রোটি কপড়া মকানের ন্যূনতম চাহিদা পূরণ হয় না। কিন্তু দেশে একটা সংবিধান থাকে, দেখনদারি মিডিয়া থাকে, বিরোধী দল থাকে, কারণ বিরোধী দলের পেছনেও পুঁজির খেলা থাকে, বিরোধিতা থাকে, আদালত কোর্টকাছারি থাকে, রাষ্ট্রের প্রতিটা অংশ শেষমেশ পুঁজির সাহায্যে বেড়ে ওঠে আর পুঁজির নির্দেশ কমবেশি পালন করে। এটাই ক্ল্যাসিকাল পুঁজিবাদ, আদত পুঁজিবাদ। তারাই যখন আবার আগের থেকে বেশি চুঁইয়ে পড়া সুযোগ সুবিধে অর্থনৈতিক সাহায্য দেয় মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত, গরিবব মানুষদের, কখনও ১০০ দিনের কাজ, কখনও চিকিৎসার সুযোগ সুবিধে, কখনও ডাইরেক্ট বেনিফিট, কখনও সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার স্কিম, তখন তা পুঁজির বিশুদ্ধতা থেকে সরে আসা এক ব্যবস্থা যা আদতে পুঁজিবাদকেই টিঁকে থাকতে সাহায্য করে। 

কিন্তু ক্রোনি ক্যাপিটালিজম? এখানে কর্পোরেট পুঁজির, ফিনান্স ক্যাপিটালের এক বাড়তে থাকা অংশ ক্ষমতার এক নির্দিষ্ট পার্টনারকে বলে আমি তোমাকেই টিঁকিয়ে রাখব, কাম হোয়াট মে, ইউ উইল বি ইন পাওয়ার, তোমাকে টিঁকিয়ে রাখার জন্য আমি মিডিয়া কিনে নেব, বিরোধীদের কিনে নেব, টাকা দিয়ে যা যা লাগে সব কিনে হাজির করব আর তোমার প্রচারের সব দায় আমার, টাকা যত লাগে দেব, বদলে আমাকে লুঠমার করতে দিতে হবে, কোনও নিয়ম নয়, কোনও নীতি নয়, কোনও আইন কানুন নয় আমাকে লুঠমার করতে দিতে হবে। দেশের মধ্যে যা খুশি হয়ে যাক। তুমি বিভাজনের বীজ যেভাবে খুশি ছড়িয়ে যাও, দেশের সংবিধান, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে যা যা ছেলেখেলা করার করে যাও, শর্ত একটাই, আমাকে, এই দুই পাঁচ সাত কি ন’জনকে যা ইচ্ছে করার অধিকার দাও। অর্থাৎ এখানে ছেলেভোলানো গণতন্ত্রও থাকবে না, সংবিধান মানার দায় থাকবে না, নীতি রীতির কোনও বালাই থাকবে না, তুমি ক্ষমতায় থাকবে, আমরা লুঠমার করব। আর এইভাবেই গণতন্ত্রের প্রাথমিক শর্তগুলোকেও অস্বীকার করে এক ব্যবস্থা গড়ে ওঠে, যাকে বলে ক্রোনি ক্যাপিটালিজম। বীজ ছিলই কিন্তু যথেষ্ট জল, আলো সার পেয়ে সেই শঠ ধূর্ত প্রবঞ্চক পুঁজি আজ তার চেহারা আমাদের সামনে এনে হাজির করেছে, ২০১৪-র পর থেকে সেই চেহারা প্রতিদিন পরিষ্কার হচ্ছে। নিউ ইয়ার্স-এর মোচ্ছবের পরেই প্রধানমন্ত্রী গঙ্গা বিলাসের জন্য আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন, ৫২ দিনের ট্যুর, ৫০ হাজার টাকা করে প্রতিদিন, মানে ২৬ লক্ষ টাকা দিয়ে গঙ্গার ওপরে ভাসুন। তিনি তারপরের দিন হাওড়া শিলিগুড়ি বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের সূচনা করলেন, ভাড়া কত? কম দামেরটা ১৫৬৫ টাকা, বেশি দামেরটা ২৮২৫ টাকা, এসব কাদের জন্য? আর ঠিক সেই সময় অ্যামাজন থেকে টুইটার, শেয়ার চ্যাট থেকে গুগল ঘোষণা করছে ছাঁটাই হবে, এই বছরেই অন্তত ১৪ লক্ষ ছাঁটাই, ওদিকে www.ceo.org জানাচ্ছে এই বছরেই সিইওদের ১৩-১৪ শতাংশ মাইনে বাড়ার সম্ভাবনা। শঠ ধূর্ত প্রবঞ্চক পুঁজি খেলছে, চোখের সামনে তারা আমাদের ভবিষ্যৎকে অনায়াসে পাঠিয়ে দিচ্ছে লাশ কাটা ঘরে, আমরা কতদিন বসে বসে দেখব?   

পুরনো খবরের আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০ ১১ ১২
১৩ ১৪ ১৫ ১৬ ১৭ ১৮ ১৯
২০ ২১ ২২ ২৩ ২৪ ২৫ ২৬
২৭ ২৮ ২৯ ৩০  
আর্কাইভ

এই মুহূর্তে

সিউড়িতে অস্ত্র হাতে রামনবমীর শোভাযাত্রা
রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
ক্ষমতায় আসার আড়াই মাসেই মধ্যেই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে রাস্তায় জনতা
রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
রামনবমীর দিন অশান্ত দিনহাটা! ফের তৃণমূল-বিজেপি তরজা
রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
রামনবমী উপলক্ষে শুভেচ্ছাবার্তা মমতার
রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
রামনবমীতে পাম্বান সেতু উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
রবিবাসরীয় সকালে কলকাতায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা
রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
রামনবমী উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা বার্তা প্রধানমন্ত্রীর
রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
কর্তৃপক্ষের নির্দেশিকা উপেক্ষা করে রামনবমী উপলক্ষে সাজো সাজো রব যাদবপুরে
রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
রামনবমী উপলক্ষে কড়া নজরদারি পুলিশের, আইন ভাঙলেই কড়া পদক্ষেপ!
রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
রামনবমীকে ঘিরে উৎসাহ তুঙ্গে, অযোধ্যায় ভক্তদের ভিড়
রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
ওয়াটার পার্কে দুর্ঘটনা! রোলার কোস্টার থেকে পড়ে মৃত্যু তরুণীর
রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
পিচভেজা বৃষ্টিতে ভিজতে চলেছে রাজ্য, কোন কোন জেলায় বৃষ্টির পূর্বাভাস দিল হাওয়া অফিস?
রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
ডোমজুড়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড!
রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
রামনবমীতেও খোলা নবান্ন, থাকবেন পুলিশের শীর্ষ কর্তারা
রবিবার, ৬ এপ্রিল, ২০২৫
2020 Delhi Riots : বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রের বিরুদ্ধে ফের তদন্তের নির্দেশ
মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল, ২০২৫
© R.P. Techvision India Pvt Ltd, All rights reserved.
Developed By KolkataTV Team